পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vo পরিশিষ্ট বঙ্কিম বাবু কোথায় পাইলেন ? তিনি দীনবন্ধুর গ্ৰন্থ যথেষ্ট পড়িয়াছিলেন, কিন্তু সমালোচনা লিখিবার সময়ে হয় তা স্মৃতির উপরই নির্ভর করিয়াছিলেন । হিন্দুর গৃহের কুমারী কন্যার সহিত স্বাভাবিক ভাবে যাহাদের সঙ্গে দেখা শুনা হয়, তাহদের সঙ্গেই হইয়াছে। এরূপ অবস্থায় বয়ঃপ্রাপ্ত শিক্ষিত কুমারী, পরিবারের কোন বন্ধু যুবকের প্রতি যদি আকৃষ্টা হয়, তবে তাহাতেও কিছু অস্বাভাবিকতা নাই। বিবাহের উদ্যোগে যে কোর্টসিপল হয় নাই, তাহা স্পষ্ট করিয়াই বুঝান আছে ; ললিতমোহন ও লীলাবতী বিবাহের পূর্ব পৰ্যন্ত জানিতেন না যে, তঁহাদেয় এক জনের অনুরোগের কথা অপারে জানিতেন। আর যে দোষ থাকে থাকুক, বৰ্ণনার অস্বাভাবিকতা দীনবন্ধুর রচনায় কুত্ৰাপি नांई । দীনবন্ধুর সময়ের অনুষ্ঠিত প্রথার প্রতি যে কবির অনুরাগ ছিল, তাহা বুঝিতে পারি। সেই জন্যই শিক্ষিতা বয়ঃপ্ৰাপ্ত কুমারী তাহার গ্রন্থের নায়িকা, এবং সেই জন্যই সুশিক্ষিতা ধৰ্ম্মপ্ৰাণ শারদাসুন্দরী তঁহার নাটকে আদর্শ মহিলা । মহিমময়ী শারদাসুন্দরী তঁহার কুশিক্ষিত ও শিথিলচরিত্র স্বামীর চরণে প্ৰেমভক্তি ঢালিয়া তাহাকে সুপথগামী করিয়াছিলেন । এ আদর্শ ইংরাজি ছাচে ঢালা নয়। শারদাসুন্দরী স্বামীর “মুক্তিমণ্ডপের” সংবাদ জানিতেন ; ভ্ৰমরের মত ক্ষীরী দাসীর মুখে শোনেন নাই ; কুসংসর্গের কথা সুস্পষ্টই জানিতেন ; রোহিণীর মিথ্যা ছলে জানিয়া লইতে হয় নাই। তবুও তিনি অনুরাগিণী হইয়া স্বামীকে টানিয়া ধরিয়া ভাল করিয়া তুলিয়াছিলেন। ইংরেজি ছাচ, ইংরেজি প্রেম, ইংরেজি কোর্টসিপ , বরং নব-বঙ্গ-সাহিত্যের কর্ণধারের রচনায় বেশি লক্ষ্য করিতে পারি। যখন অতুলপ্রতিভাশালী বঙ্কিমচন্দ্ৰ দুৰ্গেশ-নন্দিনী প্ৰকাশ করিয়া বঙ্গে নুতনবিধ সরস কথাগ্রন্থের রচনা আরম্ভ করিলেন, তখন প্রেমের পুর্বরাগ ফুটাইবার জন্য রাজপুতের পরিবার অবলম্বন করিয়াছিলেন। জোর করিয়া অতি সন্ত্রান্ত মুসলমান নবাবের ঘরের মেয়েকে বন্দীর পরিচর্য্যায় নিযুক্ত করিয়া, খাটী ইউরোপীয় ধরণের প্রেমের প্ৰগলভ্যতায় ওসমানকে দশ কথা শুনাইয়া দিয়াছিলেন। বঙ্কিমবাবু যদি নূতনের প্রতি অৰজ্ঞা দেখাইয়া দূরে না থাকিতেন, তবে আমাদের সামাজিক অবস্থা হইতেই অনেক উপাদান পাইতেন ; ইতিহাসের পৃষ্ঠায় রাজপুতের অন্দরমহলের সংবাদ লাইতে হইত না । এ কালের গৃহিণীরা কীৰ্ত্তার রাত্রিকালের ভাতে, পাখার বাতাসে মাছি