পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । কেবলমাত্ৰ উপভোগের পদার্থ নয়, তঁহাদের একটা মহাত্ম্য ও মৰ্য্যাদা আছে, তঁহাদের শিক্ষার প্রভাবে গৃহ উজ্জ্বল হয়, সমাজ পবিত্ৰ হয় ; এ আদর্শ দীনবন্ধুর পূৰ্ব্বে কঙ্গসাহিত্যে কেহ স্থাপন করিয়াছেন কি ? তাহার হাস্যরস ও নাটকের চরিত্রবৈচিত্র্যের মধ্যে কুত্ৰাপি এমন কিছু নাই, যাহা অসাধু, অকল্যাণকার, কিংৰ নারীজাতির মাহান্ত্র্যের বিরোধী। এ সকল কথা বিশেষ করিয়া পরে বলিবার সুবিধা পাইব । (৩) সুরধুনী কাব্য ।-বঙ্কিমবাবু লিখিয়াছেন যে, সুরধুনী কাব্য যাহাতে প্রচারিত না হয়। “আমি এমত অনুরোধ করিয়াছিলাম,-আমার বিবেচনায় ইহা দীনবন্ধুর লেখনীর যোগ্য হয় নাই ।” যে বিষয়ের বর্ণনায় ঐ কাব্য লিখিত, তাহাতে উহা খুব উচ্চাদরের খণ্ডকাব্য হইতেই পারে না। দীনবন্ধু নিজে যে ঐ কাব্যখানি কাব্যকৌশলের একটা বিশেষ সৃষ্টি বলিয়া প্ৰকাশ করিয়াছিলেন, তাহা মনে হয় না। তবে কেন যে তিনি বঙ্কিমবাবুর মত বন্ধুর অনুরোধ রক্ষা করেন নাই, কাব্যখানি পড়িলেই তাহার কারণ বুঝিতে পারি। সে কথা পরে বলিতেছি। কাব্যখানি যখন প্ৰথম প্ৰকাশিত হয়, তখন রোবরেণ্ড লালবিহারী দে উহার নিন্দা করিয়া সমালোচনা করিায়াছিলেন । সে সমালোচনায় কবির ছন্দ ও ভাষার দোষের কথা উল্লিখিত হইয়াছিল, কিন্তু তাহার দৃষ্টান্ত উদ্ধত হয় নাই। এ নিন্দার কোনও মূল্য নাই ; কারণ, দীনবন্ধুর ভাষা সর্বত্রই সুমার্জিত, এবং ছন্দ-অতি নিৰ্দোষ। শ্ৰীযুত রমেশচন্দ্ৰ দত্ত যথাৰ্থই বলিয়াছেন যে, কোথাও ছন্দঃ-পতন হওয়া দুরে থাকুক, বরং সুরধুনীর মত উহার ধারা বহিয়া গিয়াছে। খৃষ্টীয়ান রেবরেণ্ড হয় তা “সুরধুনী” নামের কাব্য দেখিয়াই বিরক্ত হইয়াছিলেন। উহাদের মধ্যে সি দুরে মেঘের ভয় অত্যন্ত অধিক। এই গ্রন্থে অনেক কৃতী ব্যক্তির প্ৰশংসায় তাহার ঈর্ষ্যাও হইয়াছিল, ইহাও অনুমান করা যায়। গঙ্গাকে ভগীরথ আনিয়াছিলেন। কুলপাবনের জন্য ; কিন্তু দীনবন্ধু সেই বঙ্গসৌভাগ্যবিধায়িনী তটিনীর কুলে কুলে বহু শতাব্দীর নিজীবতার পর নবজীবন-সঞ্চার দেখিয়া, সেই নবজীবন মাহন্ত্ৰ্যের বর্ণনা করিবার জন্য গঙ্গাস্রোতকে আহবান করিয়াছিলেন। দীনবন্ধু স্বদেশবৎসল ছিলেন ; স্বদেশের উন্নতির জন্য তিনি সৰ্ব্বদা উৎসুক ছিলেন । তাই তিনি যখন দেখিতেছিলেন যে, নুতন সভ্যতার দীপ্তিতে দেশ ঝলসিয়া না গিয়া, আবার মাথা তুলিতেছে, তখন গঙ্গাবাহিনী ধরিয়া নব দেশের নূতন বর্ণনা লিখি