পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১০৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী প্রথমে করণাময়ীর অতি সামান্য জবর হয়; জবরটা অকস্মাৎ বদ্ধি পায়। লোকে বংশীবদনের নানামত নিন্দা করিতে লাগিল; কেহ কেহ এমনও কহিল যে, সে ধনসম্পত্তি আত্মসাৎ করুণাশায় করণাময়ীকে বিষপান করাইয়াছিল। যাহাই হউক, করণাময়ী প্রাণত্যাগ করিলেন। বংশীবদন প্ৰণয়িনী বিয়োগের মনোদঃখেই হউক, অথবা “যঃ পলায়তি স জীবতি” বলিয়াই হউক, তৎক্ষণাৎ চাকরি স্থান পরিত্যাগ করিয়া বাটী আসিলেন। করণাময়ীর বিপল অথরিাশি যে তাহার সঙ্গে আসিল, তাহা বলা বাহল্য। অপৰ্যাপ্ত ধনের অধিপতি হইয়াও বংশীবদন, পাছে অসম্ভব ব্যয় ভূষণ করিলে বিপদগ্ৰস্ত হইতে হয় এই আশঙ্কায় অতি সাবধানে কালব্যাপন করিতে লাগিলেন। তিনি পরলোক গমন করিলে তাঁহার পত্রেরা তােদশ সাবধানতা আবশ্যক বিবেচনা করিলেন না; এবং দীঘকাল গতে নিশিচন্ত হইযা ভূসম্পত্তি ক্রয় করিলেন, অট্টালিকা ও ক্রীড়া-হম্মম্যাদি নিৰ্ম্মাণ করিলেন, এবং পৈতৃক ধনরাশির উপর উপযক্ত ঐশ্বৰ্য্য বিস্তার করিয়া কালক্ষেপ করিতে লাগিলেন। জ্যোিঠ রামকান্ত অতি বিষয়কাৰ্য্যদক্ষ ছিলেন। তাঁহার দক্ষতার ফলে তাঁহার অংশ দ্বিগণাধিক সম্পর্বদ্ধিত হইল।--রামকান্ত এই সম্পর্বদ্ধিত সম্পত্তি নিজ দক্ষতর পত্ৰ মথরমোহনের হস্তে সমাপণ করিয়া পরলোক গমন করেন। রামকান্তের দািঢ় সংস্কার ছিল যে, ইংরাজি স্কুল ইত্যাদি যে সকল স্থান বিদ্যাভ্যাস জন্য অধনা সংস্থাপন হইতেছিল, তৎসমদায়ই কেবল খ্রীস্টান ধৰ্ম্মম প্রচারের জন্য জাল বিস্তার মাত্র:- সতরাং মথরমোহনের কখন ইংরাজি বিদ্যালয় দশন করা হয় নাই। বাল্যাবধি বিষয়কাৰ্য্য সম্পাদনে পিতৃসহযোগী হইয়া তদ্বিষয়ে তাঁহার বিশেষ পারদর্শিতা জন্মিয়াছিল; প্রজাপীড়ন, তঞ্চকতা ও অর্থ সংগ্ৰহ প্রভৃতি বিদ্যাতে বিশেষ নিপণতা অভিজাত হইয়াছিল। বংশীবদনের দ্বিতীয় পত্র রামকানাই অন্যপন্থাবলম্বী হইল। তিনি সর্বভাবতঃ সাতিশয় ব্যয়শীল ছিলেন ; এজন্য অলপকালেই অতুল্য ঐশ্বৰ্য্য বিশঙ্খল হইয়া উঠিল। মধ্যম বাবর যেমন বাটী, মধ্যম বাবার। যেমন বাগান, মধ্যম বাবার যেমন আসবাব, এমন কোন বাবােরই নয়। কিন্তু মধ্যম বাবার জমিদারীও সব্বাপেক্ষা লাভশন্যে; এবং মধ্যম বাবার ধনাগারও তদ্রপ অপদাৰ্থ। শেষে কতিপয় শঠ চাটকাব তাঁহাকে কোন বাণিজ্যাদি ব্যাপারে সংলিপ্ত করিল। কলিকাতায় থাকিয়া ব্যবসায় ঈদশ অপরিসীম অর্থলাভের সঙ্কলাপ করিতে লাগিল যে, সরলচিত্ত ভূস্বামীপত্র দরোশাগ্ৰস্ত হইয়া কলিকাতায় গেলেন ; এবং বাণিজ্যোপলক্ষে ধত্তি চাট্যকারদিগের করে পতিত হইয়া হৃতসৰ্ব্বস্ব হইলেন। পরিশেষে ঋণ পরিশোধাৰ্থ তাবৎ ভূসম্পত্তি বিক্রীত হইয়া গেল। রামকানাই বাণিজ্য উপলক্ষে কলিকাতায় আসায় এক উপকার হইয়াছিল,-রাজধানীবাসীদিগের পদ্ধতি অনসারে নিজ পত্র মাধবকে দেশীয় ও বিদেশীয় বিদ্যায় শিক্ষিত করিয়াছিলেন। আরও মনষ্যেজন্মের সাধ মিটাইয়া উপযক্ত পাত্রীর সহিত মাধবের পরিণয় ঘটাইয়াছিলেন।-- কলিকাতার নিকটবত্তী কোনও গ্রামে এক দরিদ্র কায়স্থ বাস করিত। জগদীশ্বর যেমন কাহাকে সব্বাংশে সখী করেন না, তেমনই কাহাকেও সব্বাংশে দঃখী করেন না। কায়স্থের দস্তর দঃখসাগরতলে অমল্য দাই রত্ন জন্মিয়াছিল,-"তাঁহার দাই কন্যা,তুল্য অনিন্দিত সব্বাঙ্গসন্দরী অথবা অকলষিতচরিত্রা আর কোন কামিনী তৎপ্রদেশে ছিল না। কিন্তু রাপেই বা কি করে, চরিত্রেই বা কি করে,-ললাটলিপদোষে হউক বা যে কারণেই হউক, সচরাচর দেখা যায় বঙ্গদেশসম্প্ৰভূত কত রমণীরত্ব শংকরদন্তে দলিত হয়,---কায়ন্থের জ্যেষ্ঠা কন্যা মাতঙ্গিনীর আদন্টের তদ্ৰপ হইল-নীচ,স্বভাব রাজমোহন তাঁহার স্বামী হইল। রাজমোহন কমােঠ, কোনও উপায়ে সংসার প্রতিপালন করিয়া থাকে; তাহার বাটীও নিকটে। এজন্য কন্যাকত্তার ও কন্যাকত্রীর পাত্র বড় মনোনীত হইল,-রাজসিংহাসনের যোগ্য কন্যা মাতঙ্গিনী দলেটর দাসী হইলেন। কনিষ্ঠা হেমাঙ্গিনীর প্রতি বিধাতা প্ৰসন্ন্য-মাধবের সহিত তাঁহার পরিণয় হইল। মাধবের অধ্যয়ন সমাপ্ত হইবার কিছ পাৰোব রামকানাই লোকান্তবে গমন করিলেন। মাধব পিতৃপরলোকের পর প্রায় দারিদ্র্যগ্রন্ত হইতেন, কিন্তু অদম্পট প্রসন্ন। বংশীবদন ঘোষের কনিষ্ঠ পত্র রামগোপাল, জ্যোন্ঠের ন্যায় ধনসম্পত্তিশালী না হইলেও দ্বিতীয়ের ন্যায় হতভাগ্য ছিলেন না। রামগোপাল, রাস্ত্ৰনাথঃ পরই পীড়াগ্রস্ত হইয়া প্ৰাণত্যাগ করিলেন। তাঁহার সন্তানসম্ভীতি ছিল না। তিনি এই মৰ্ম্মেম উইল করিলেন যে, মাধব তাঁহার তাবৎ সম্পত্তির অধিকারী SOOR