পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১০৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসম্পর্ণে রচনা-রাজমোহনের অল্পী হইল। মাতঙ্গিনীর শয়নকক্ষে প্রদীপ ছিল না। গবাক্ষরন্ধুের আচ্ছাদনীয় পাশ্ব হইতে চন্দ্রলোক আসিয়া কক্ষতলে পড়িয়াছিল; তদ্ধেতু কক্ষের অংশবিশেষ ঈষৎ আলোকিত হইয়াছিল। তদ্ব্যতীত সৰস্বত্র অন্ধকার। প্রকৃত অপরাধে অপমানের যন্ত্রণা সততই এত তীক্ষা যে, যতক্ষণ না তৎসম্বন্ধীয় বিষময়ী সমিতি বিলেপিত হয়, ততক্ষণ মানবদেহে নিদ্রা অনভূত হইতে পারে না। গ্রীষ্মমাতিশয্যপ্রযক্ত ঃস্থল হইতে অঞ্চল পদতলে প্রক্ষিপ্ত করিয়া উপাধান-নাস্ত বাম ভূজোপরে শিরঃ সংস্থাপন করিয়া মাতঙ্গিনী আশ্রপািণ লোচনে গহতলশোভিনী চন্দ্ৰপাদরেখা প্রতি দলিট করিতেছিলেন। কেন ? সে অমত শীতল কিরণ দণ্টে কত যে পািব্ব সখি সমিতিপথগামী হইল, তাহা কে খণনা করিতে পারে ? কৈশোরে কত দিন প্রদোষকালে হেমাঙ্গিনীব সহিত গহ-প্রাঙ্গণে এক শয্যায় শায়িনী হইয়া শিশ-মনোরঞ্জিনী উপকথা কখন বা শ্রবণ করিতে কবিতে নীলাম্বরবিহারী এই নিশানাথ প্রতি চাহিয়া থাকিতেন তাহা মনে পড়িল। নীলাব্বর হইতে এই মদলে জ্যোতিঃ বষিত হইয়া কত যে হৃদয়-তৃপ্তি জন্মাইত এ বন্তোৎপন্ন কুসমযগলবৎ কণ্ঠালগ্না দই সহোদরা তখন কত যে আন্তরিক সখে উচ্চহাস্য হাসিতেন, তাহা সমরণপথে পড়িতে লাগিল। সেই এক দশা, আর এই এক দশা। সে উচ্চহাস্য আর কাহার কন্ঠে ? সেই সকল প্রিযজনই বা কোথায় ? আর কি তাঁহাদেব মািখ দেখিতে পাইবেন ? আব্ব কি তাঁহাদের সেই স্নেহপণ সম্বোধন কণকুহরে। সাধাবষণা করিবে ? মনঃপীড়াপ্রদান-পাট স্বামীর হস্তজনালিত কালাগ্নি অন্তদাহ ব্যতীত আর কিছ কি আদলেট আছে ? এই সকল দঃখ চিন্তার মধ্যে একটি গাঢ় বত্তান্ত জাগিতেছিল। সে চিন্তা অন্যতাপময়ী হইযাও পরম সংখ্যকরী। মাতঙ্গিনী এ চিন্তাকে হৃদয়-বহিস্কৃত করিতে যত্ন করিলেন। কিন্তু পারিলেন না। এই গাঢ় ব্যাপার কি, তাহ৷ কনক ব্যতীত আর কেহ জানিত না। দঃখ-সাগর মনোমধ্যে মন্থন করিয়া তৎসমাতিলাভে মাতঙ্গিনী কখন মনে করিতেন, বক্স পাইলাম; কখন বা ভাবিতেন, হলাহল উঠিল। রত্নই হউক, আর গরলই হউক, মাতঙ্গিনী ভাকিয দেখিলেন, তাঁহার কপালে কোন সখই ঘটিতে পারে না। চক্ষদ্বয় বাবিপ্লাবিত হইল। ক্ৰমে গ্রীষ্মমাতিশয্য দঃসহ হইয়া উঠিল; মাতঙ্গিনী গবাক্ষ-দ্রািন্ধু মাক্ত করিবার অভিপ্ৰায়ে শয্যা ত্যাগ করিয়া তদাভিমাখে। গমন করিলেন। মক্ত করেন, এমত সময়ে যেন কেহ শনৈঃ পদসঞ্চারে সেই দিকে অতি সাবধানে আসিতেছিল- এমত লঘা শবদ তাঁহার কণা প্রবিন্স্ট হইল। জানেলাটি যেমন সচরাচর এরােপ গহে ক্ষদ্র হয়। তদুপই ছিল,-দাই হস্ত মাত্র দৈর্ঘ্য, সাদ্ধেক হস্ত মাত্র বিস্তার। এ প্রদেশে চালাঘরে মাত্তিকার প্রাচীর থাকে না, দারমার বেন্টনীই সব্বত্র প্রথা। রাজমোহনের গহেও সেইরূপ ছিল; এবং জানালার ঝাঁপ ব্যতীত কাঠের আবরণী छिळ ना ! পাশ্বে যে ছিদ্ৰ দিয়া গহমধ্যে জ্যোৎস্না প্রবেশ করিয়াছিল, পদসঞ্চার শ্রবণে ভীতা হইয়া মাতঙ্গিনী সেই ছিদ্ৰ দিয়া বহিদিকে দন্টিপাত করিতে যত্ন করিলেন, কিন্তু নীলা-বরস্পশী বক্ষশ্রেণীর শিরোভাগ ব্যতীত আর কিছই দেখিতে পাইলেন না। মাতঙ্গিনী জানিতেন, যে দিক হইতে পদসঞ্চার শব্দ তাঁহার কণাগত হইল, সে দিক দিযা মনষ্য যাতায়াতের কোন পথ নাই; সতরাং আশঙ্কা জন্মান বিচিত্র কি ? মাতঙ্গিনী নিম্পন্দ শরীরে কণোত্তোলন করিয়া তথায় দশডায়মান রহিলেন । . ক্ৰমশঃ পদক্ষেপণ শব্দ আরও নিকটাগত হইল; পরীক্ষণেই দাই জন কণে কণে কথোপকথন করিতেছে শনিতে পাইলেন। দই-চারি কথায় মাতঙ্গিনী নিজ স্বামীর কণ্ঠস্বর চিনিতে পারিলেন; তাঁহার ত্রাস ও কৌত হল। দই-ই সম্পর্বদ্ধিত হইল। যথায় মাতঙ্গিনী গহমধ্যে দন্ডায়মানা ছিলেন, আর যথায় আগন্তুক ব্যক্তিরা বিরলে। কথোপকথন করিতেছিল, তন্মধ্যে দরমার বেনটনীমাত্র ব্যবধান ছিল। সতরাং মাতঙ্গিনী তৎকথোপকথনের অনেক শনিতে পাইলেন; আর যাহা শনিতে পাইলেন না, তাহার মৰ্ম্মমাের্থ অনভাবে বঝিতে পারিলেন। এক ব্যক্তি কহিতেছিল, “অত বড় বড় করিয়া কথা কহ কেন ? তোমার বাড়ীর লোকে যে শনিতে পাইবে।”

  • দ্বিতীয় ব্যক্তি উত্তর করিল, “এত রাত্রে কে জাগিয়া থাকিবে ?”

মাতঙ্গিনী কণ্ঠস্বরে বঝিলেন, এ কথা রাজমোহন কহিল। SOO.