পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তখন কাঁদিতে লাগিলেন; মায়াভয়ে ভীতিযক্তি হইয়া বাপের কন্ঠ ধারণা করিলেন। এই সময়ে রাধা কৃষ্ণের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন।” রাধার অপৰিব লাবণ্য দেখিয়া নন্দ বিস্মিত হইলেন, তিনি রাধাকে বলিলেন, “আমি গগমখে জানিয়াছি, তুমি পদ্মারও অধিক হারির প্রিয়া; আর ইনি পরম নিগণ অচ্যুত মহাবিষ্ণ; তথাপি আমি মানব, বিষ্ণমায়ায় মোহিত আছি। হে ভদ্ৰে! তোমার প্রাণনাথকে গ্রহণ কর; যথায় সখী হও, যাও। পশ্চাৎ মনোরথ পণ করিয়া আমার পত্র আমাকে দিও।” এই বলিয়া নন্দ রাধাকে কৃষকসমাপণ করিলেন। রাধাও কৃষ্ণকে কোলে করিয়া লইয়া গেলেন। দরে গেলে রাধা রাসমশন্ডল স্মরণ করিলেন, তখন মনোহর বিহারভূমি সন্ট হইল। কৃষ্ণ সেইখানে নীত হইলে কিশোরম্যাত্তি ধারণ করিলেন। তিনি রাধাকে বলিলেন, “যদি গোলোকের কথা স্মরণ হয়, তবে যাহা স্বীকার করিয়াছি, তাহা পণ করিব।” তাঁহার এরপে প্রেমালাপে নিযক্ত ছিলেন, এমন সময়ে ব্ৰহ্মা সেইখানে উপস্থিত হইলেন। তিনি রাধাকে অনেক স্তবস্তৃতি করিলেন। পরিশেষে নিজে কন্যাকত্তা হইয়া, যথাবিহিত বেদবিধি অনসারে রাধিকাকে কৃষ্ণে সম্প্রদান করিলেন। তাঁহাদিগকে বিবাহবন্ধনে বদ্ধ করিয়া তিনি অন্তহিত হইলেন। রায়াণের সঙ্গে রাধিকার যথাশাস্ত্র বিবাহ হইয়াছিল কি না, যদি হইয়া থাকে, তবে পাবে কি পরে হইয়াছিল, তাহা ব্ৰহ্মবৈবত্ত পরাণে পাইলাম না। রাধাকৃষ্ণের বিবাহের পর বিহারবণান। বলা বাহাল্য যে, ব্ৰহ্মবৈবত্তের রাসলীলাও ঐরােপ। যাহা হউক, পাঠক দেখিবেন যে, ব্ৰহ্মবৈবত্তাকার সম্পণে নতন বৈষ্ণবধৰ্ম্ম সন্ট করিয়াছেন। সে বৈষ্ণবধর্মের নামগন্ধমাত্র বিষ্ণ, বা ভাগবত বা অন্য পরাণে নাই। রাধাই এই নািতন বৈষ্ণবধন্মের কেন্দুস্বরূপ। জয়দেব কবি, গীতগোবিন্দ কাব্যে এই নাতন বৈষ্ণবধৰ্ম্মমাবলম্বন করিয়াই, গোবিন্দগীতি রচনা করিয়াছেন। তাঁহার দন্টান্তান সরণে বিদ্যাপতি চন্ডীদাস প্রভৃতি বাঙ্গালার বৈষ্ণবগণ কৃষ্ণসঙ্গীত রচনা করিয়াছেন। এই ধৰ্ম্মম অবলম্পবন করিয়াই শ্ৰীচৈতন্যদেব কান্তরসাশিত অভিনব ভক্তিবাদ প্রচার করিয়াছেন। বলিতে গেলে, সকল কবি, সকল ঋষি, সকল পরাণ, সকল শাস্ত্রের অপেক্ষা ব্ৰহ্মবৈবৰ্ত্তকারই বাঙ্গালীর জীবনের উপর অধিকতর আধিপত্য বিস্তার সুড়ছেন। এখন দেখা যাউক, এই মতন ধর্মের তাৎপৰ্য্য কি এবং কােথা হইতে ইহা উৎপন্ন t ভারতবষে যে সকল দশনশাস্ত্র উৎপন্ন হইয়াছিল, তাহার মধ্যে ছয়টি দর্শনের প্রাধান্য সচরাচর স্বীকৃত হয়। কিন্তু ছয়টির মধ্যে দাইটিরই প্রাধান্য বেশী-বেদান্তের ও সাঙেখ্যার। সচরাচর ব্যাসপ্রণীত ব্ৰহ্মাসত্রে বেদান্তদর্শনের সন্টি বলিয়া অনেকের বিশ্বাস। বস্তুতঃ বেদান্তদর্শনের আদি ব্ৰহ্মসন্ত্রে নহে, উপনিষদে। উপনিষদকেও বেদান্ত বলে। উপনিষদষক্ত ব্ৰহ্মতত্ত্ব, সংক্ষেপতঃ ঈশ্বর ভিন্ন কিছ নাই। এই জগৎ ও জীবগণ ঈশ্বরেরই অংশ। তিনি এক ছিলেন, সিসাক্ষাপ্রযক্ত বহা হইয়াছেন। তিনি পরমাত্মা। জীবাত্মা সেই পরমাত্মার অংশ, ঈশ্বরের মায়া হইতেই জীবাত্মা প্রাপ্ত; এবং সেই মায়া হইতে মক্ত হইলেই আবার ঈশ্বরে বিলীন হইবে। ইহা অদ্বৈতবাদে পরিপািণ। প্রাথমিক বৈষ্ণবধর্মের ভিত্তি এই বৈদান্তিক ঈশ্বরবাদের উপর নিৰ্ম্মিমত। বিষ্ণ, এবং বিষ্ণর অবতার কৃষ্ণ, বৈদান্তিক ঈশ্বর। বিষ্ণপরিাণে এবং ভাগবতে এবং তােদশ অন্যান্য গ্রন্থে যে সকল বিষ্ণস্তোত্র বা কৃষ্ণস্তোত্র আছে, তাহা সম্পণেরপে বা অসম্পণেরপে অদ্বৈতবাদাত্মক। কিন্তু এ বিষয়ের প্রধান উদাহরণ শান্তিপকেবর ভীস্মকৃত কৃষ্ণস্তোত্র। কিন্তু অদ্বৈতবাদ এবং দ্বৈতবাদও অনেক রকম হইতে পারে। আধনিক সময়ে শঙ্করাচাৰ্য্য, রামানজাচায্য মধবাচাৰ্য এবং বল্লভাচাৰ্য্য, এই চারি জনে অদ্বৈতবাদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা করিয়া অদ্বৈতবাদ, বিশিস্টাদ্বৈতবাদ, দ্বৈতাদ্বৈতবাদ এবং বিশদ্ধাদ্বৈতবাদ-এই চারি প্রকার মত প্রচার করিয়াছেন। কিন্তু প্রাচীনকালে এত ছিল না। প্রাচীনকালে ঈশ্বর, এবং ঈশ্বরস্থিত জগতের সম্বন্ধ বিষয়ে দই রকম ব্যাখ্যা দেখা যায়। প্রথম এই যে, ঈশ্বর ভিন্ন আর কিছই নাই। ঈশ্বরই জগৎ, তন্তিয়ন জাগতিক কোন পদাৰ্থ নাই। আর এক মত এই যে, জগৎ ঈশ্বব বা ঈশ্বর জগৎ নহেন, কিন্তু ঈশ্বরে জগৎ আছে-“সত্রে মণিগণা ইব।” ঈশ্বরও জাগতিক সৰবপদার্থে আছেন, কিন্তু ঈশ্বর তদাতিরিক্ত। প্রাচীন বৈষ্ণবধর্ম এই দ্বিতীয় মতেরই উপর নিভাির করে। দ্বিতীয় প্রধান দর্শনশাস্ত্র সাঙখ্য। কপিলের সাeখ্য ঈশ্বরই স্বীকার করে না। কিন্তু edits