পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী r-r উদাহরণের দ্বারা পাঠককে বঝাই। তাছাড়া একটা ঐতিহাসিক তত্ত্বও ইহা দ্বারা স্পষ্টীকৃত হয় যে বিষ্ণ, বেদে সায্যের মাত্তি বিশেষ মাত্র, পরাণেতিহাসের উচ্চস্তরে যিনি সব্বব্যাপক ঈশ্বর, তিনি কি প্রকারে পরবত্তীর্ণ হতভাগ্য লেখকদিগের হস্তে দাড়ি, গোঁপ, কাঁচা চুল, পাকা চুল প্রভৃতি ঐশ্বৰ্য্য প্রাপ্ত হইলেন, এই সকল প্রক্ষিপ্ত উপাখ্যানের দ্বারা তাহা বঝা যায়। এই সকল প্রক্ষিপ্ত উপাখ্যানে হিন্দধম্মের অবনতির ইতিহাস পড়িতে পাই। তাই এই স্থানে ইহার উল্লেখ করিলাম। কোন কৃষ্ণদ্বেষী শৈব দ্বারা এই উপাখ্যান রচিত হইয়া মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে, এমন বিবেচনাও করা যাইতে পারে। কেন না, এখানে মহাদেবই সৰ্ব্ববনিয়ন্তা এবং কৃষ্ণ নারায়ণের একটি কেশ মাত্র। মহাভারতের আলোচনায় কৃষ্ণবাদী এবং শৈবদিগের মধ্যে এইরহপ অনেক বিবাদের চিহ্ন দেখিতে পাই। এবং যে সকল অংশে সে চিহ্ন পাই, তাহার অধিকাংশই প্রক্ষিপ্ত বলিয়া বোধ করিবার কারণ পাই। যদি এ কথা যথাৰ্থ হয়, তবে ইহাই উপলব্ধি করিতে হইবে যে, এই বিবাদ আদিম মহাভারতের প্রচারের অনেক পরে উপস্থিত হইয়াছিল। অর্থাৎ যখন শিবোপাসনা ও কৃষ্ণোপাসনা উভয়ই প্রবল হয়, তখন বিবাদও ঘোরতর হইয়াছিল। মহাভারত প্রচারের সময়ে বা তাহার। পরবত্তী প্রথম কালে এতদভয়ের মধ্যে কোন উপাসনাই প্রবল ছিল না। সে সময়টা বেদের দেবতার প্রবলতার সময়। যত উভয়েই প্রবল হইল, তত বিবাদ বাধিল-তত মহাভারতের কলেবর বদ্ধি পাইতে লাগিল। উভয় পক্ষেই অভিপ্রায়, মহাভারতের দোহাই দিয়া আপনার দেবতাকে বড় করেন। এই জন্য শৈবেরা শিবমাহাত্ম্যসাচক রচনা সকল মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত করিতে লাগিল। * তদত্তরে বৈষ্ণবেরা বিষ্ণ, বা কৃষ্ণমাহাত্ম্যসাচক সেইরূপ রচনা সকল গজিয়া দিতে লাগিলেন। অনশাসন-পকেব। এই কথার কতকগলি উত্তম উদাহরণ পাওয়া যায়। ইচ্ছা করিলে, পাঠক পড়িয়া দেখিবেন। প্রায় সকলগলিতেই একটা একটি গদ্দভের গাত্ৰসৌরভ আছে। তৃতীয় পরিচ্ছেদ-সভদ্ৰাহরণ দ্ৰৌপদীস্বয়ংবরের পর, সভদ্রাহরণে কৃষ্ণের সাক্ষাৎ পাই। সভদ্রার বিবাহে কৃষ্ণ যাহা করিয়াছিলেন, উনবিংশ শতাব্দীর নীতিজ্ঞেরা তাহা বড় পছন্দ করিবেন না। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর নীতিশাস্ত্রের উপর, একটা জগদীশ্বরের নীতিশাস্ত্র আছে-তােহা সকল শতাব্দীতে, সকল দেশে খাটিয়া থাকে। কৃষ্ণ যাহা করিয়াছিলেন, তাহা আমরা সেই চিরস্থায়ী অভ্রান্ত জাগতিক নীতির দ্বারাই পরীক্ষা করিব। এ দেশে অনেকেই এককবরি গজের মাপে লাখেরাজ বা জোত জমা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন; জমীদারেরা এখনকার ছোট সরকারি গজে মাপিয়া তাহাদিগের অনেক ভূমি কাড়িয়া লইয়াছে। তেমনি উনবিংশ শতাব্দীর যে ছোট মাপকাটি হইয়াছে, তাহার জবালায় আমরা ঐতিহাসিক পৈতৃক সম্পত্তি সকলই হারাইতেছি, ইহা অনেক বার বলিয়াছি। আমরা এক্ষণে সেই একববরি গজ চালাইব । কৃষ্ণভক্তেরা বলিতে পারেন, এরপ একটা বিচারে প্রবত্ত হইবার আগে, স্থির করা যে, এই সভদ্ৰাহরণবাত্তান্ত মল মহাভারতের অন্তৰ্গত, কি প্রক্ষিপ্ত। যদি ইহা প্রক্ষিপ্ত এবং আধনিক বলিয়া বোধ করিবার কোন কারণ থাকে, তবে সেই কথা বলিলেই সব গোল মিটিল-এত বাগাড়ম্বরের প্রয়োজন নাই। অতএব আমরা বলিতে বাধ্য যে, সভদ্ৰাহরণ যে মল মহাভারতের অংশ, ইহা ষে প্রথম স্তরের অন্তগত, তদ্বিষয়ে আমাদের কোন সংশয় নাই। ইহার প্রসঙ্গ অনানুক্ৰমণিকাধ্যায়ে এবং পািব্ব সংগ্ৰহাধ্যায়ে আছে। ইহার রচনা অতি উচ্চশ্রেণীর কবির রচনা। দ্বিতীয় স্তরের রচনাও সচরাচর অতি সন্দর। তবে প্রথম স্তর ও দ্বিতীয় স্তরে রচনাগত একটা প্ৰভেদ এই যে, প্রথম স্তরের রচনা সরল ও স্বাভাবিক, দ্বিতীয় স্তরের রচনায় অলঙ্কার ও অত্যুক্তির বড় বাহল্য। সভদ্ৰাহরণের রচনাও সরল ও স্বাভাবিক, অলঙ্কার ও অত্যুক্তির তেমন বাহাল্য নাই। সতরাং ইহা প্রথমস্তর-গীত-দ্বিতীয় স্তরের নহে। আর আসল কথা এই যে, সভদ্ৰাহরণ মহাভারত হইতে তুলিয়া লইলে, মহাভারত অসম্পণ হয়। সভদ্রা হইতে অভিমন্য, অভিমন্য হইতে পরিক্ষিৎ, পরিক্ষিৎ হইতে জনমেজয়। ভদ্রাজিনের বংশই বহন শতাব্দী ধরিয়া ভারতে

  • সেইগলি অবলম্বন করিয়া মাির প্রভৃতি পাশ্চাত্ত্য পন্ডিতগণ কৃষককে শৈব বলিয়া প্ৰতিপন্ন

8ay