পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ङ्काकाब्रद्ध এইখানে একটা কথার মীমাংসা করা ভাল। কৃষ্ণকৃত কংস-শিশপালাদির বধের উল্লেখ করিলাম, এবং জরাসন্ধকে বধ করিবার জন্যই কৃষ্ণ আসিয়াছেন বলিয়াছি; কিন্তু পাপীকে বধ করা কি আদশ মনষ্যের কােজ ? যিনি সব্বভুতে সমাদশী, তিনি পাপাত্মাকেও আত্মবৎ দেখিয়া, তাহারও হিতাকাঙক্ষী হইবেন না কেন ? সত্য বটে, পাপীকে জগতে রাখিলে জগতের মঙ্গল নাই, কিন্তু তাহার বন্ধসাধনই কি জগৎ উদ্ধারের একমাত্র উপায় ? পাপীকে পাপ হইতে বিরত করিয়া, ধৰ্ম্মে প্রবত্তি দিয়া, জগতের এবং পাপীর উভয়ের মঙ্গল এককালে সিদ্ধ করা তাহার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট উপায় নয় কি ? আদশ পরিষের তাহাই অবলম্ববন করাই কি উচিত ছিল না ? যিশ, শাক্যসিংহ ও চৈতন্য এইরূপে পাপীর উদ্ধারের চেন্টা করিয়াছিলেন। এ কথার উত্তর দাইটি। প্রথম উত্তর এই যে, কৃষ্ণচরিত্রে এ ধৰ্ম্মেমরও অভাব নাই। তবে ক্ষেত্ৰভেদে ফলভেদও ঘটিয়াছে। দায্যোধন ও কণা, যাহাতে নিহত না হইয়া ধৰ্ম্মপথ অবলম্বনপািব্বক জীবনে ও রাজ্যে বজায় থাকে, সে চেস্টা তিনি সাধ্যমতে করিয়াছিলেন, এবং সেই কাৰ্য্য সম্পবন্ধেই বলিয়াছিলেন, পরষকারের দ্বারা যাহা সাধ্য, তাহা আমি করিতে পারি; কিন্তু দৈব আমার আয়ত্ত নহে। কৃষ্ণ মানষিী শক্তির দ্বারা কাৰ্য্য করিতেন, তজজন্য যাহা সাবভাবতঃ অসাধ্য, তাহাতে যত্ন করিয়াও কখন কখন নিৰ্ম্মফল হইতেন। শিশপালেরও শত অপরাধ ক্ষমা করিয়াছিলেন। সেই ক্ষমার কথাটা অলৌকিক উপন্যাসে আব্বত হইয়া আছে। যথাস্থানে আমরা তাহার তাৎপৰ্য্য বঝিতে চেস্টা করিব। কংসবধের কথা পাবে বলিয়াছি। পাইলেটকে শ্ৰীস্টিয়ান করা, শ্ৰীস্টের পক্ষে যত দর সম্ভব ছিল, কংসকে ধৰ্ম্মপথে আনয়ন করা কৃষ্ণের পক্ষে তত দীর সম্ভব। জরাসন্ধ সম্পবন্ধেও তাই বলা যাইতে পারে। তথাপি জরাসন্ধ সম্পবন্ধে কৃষ্ণের সে বিষয়ের একটি কথোপকথন হইয়াছিল। জরাসন্ধ কৃষ্ণের নিকট ধক্ষেমাপদেশ গ্রহণ করা দরে থাকুক, সে কৃষ্ণকেই ধৰ্ম্মম বিষয়ক একটি লেকচার শনাইয়া দিল, যথা “দেখ, ধর্ম বা অর্থের উপঘাত দ্বারাই মনঃপীড়া জন্মে। কিন্তু যে ব্যক্তি ক্ষত্ৰিয়কুলে জন্মগ্রহণ করিয়া ধৰ্ম্মম জ্ঞা হইয়াও নিরপরাধে লোকের ধৰ্ম্মমাথোঁ উপঘাত করে, তাহার। ইহকালে অমঙ্গল ও পরকালে নরকে গমন হয়, সন্দেহ নাই।” ইত্যাদি। এ সব স্থলে ধক্ষেমাপদেশে কিছ হয় না। জরাসন্ধকে সৎপথে আনিবার জন্য উপায় ছিল কি না, তাহা আমাদের বদ্ধিতে আসে না। অতিমানষকনীত্তি একটা প্রচার করিলে, যা হয়, একটা কান্ড হইতে পারিত। তেমন অন্যান্য ধৰ্ম্মম প্রচারকদিগের মধ্যে অনেক দেখি, কিন্তু কৃষ্ণচরিত্র অতিমান ষী শক্তির বিরোধী। শ্ৰীকৃষ্ণ ভূত ছাড়াইয়া, রোগ ভাল করিয়া, বা কোন প্রকার বাজার কি ভেলকির দ্বারা ধৰ্ম্মপ্রচার বা আপনার দেবত্বস্থাপন করেন নাই। তবে ইহা বঝিতে পারি যে, জরাসন্ধের বধ কৃষ্ণের উদ্দেশ্য নহে; ধৰ্ম্মেমরি রক্ষা অর্থাৎ নিন্দোষী অথচ প্ৰপীড়িত রাজগণের উদ্ধারই তাঁহার উদ্দেশ্য। তিনি জরাসন্ধকে অনেক বাঝাইয়া পরে বলিলেন, “আমি বসদেবানন্দন কৃষ্ণ, আর এই দই বীরপরষ। পাশভূতনয়। আমরা তোমাকে যন্ধে আহবান করিতেছি, এক্ষণে হয় সমস্ত ভূপতিগণকে পরিত্যাগ কর, না হয় যাদ্ধ করিয়া যমালয়ে গমন কর।” অতএব জরাসন্ধ রাজগণকে ছাড়িয়া দিলে, কৃষ্ণ তাহাকে নিম্প্রকৃতি দিতেন। জরাসন্ধ তাহাতে সক্ষমত না হইয়া যাদ্ধ করিতে চাহিলেন, সতরাং যাদ্ধই হইল। জরাসন্ধ ষদ্ধ ভিন্ন অন্য কোনরাপ বিচারে যাথার্থ্য স্বীকার করিবার পাত্র ছিলেন না। দ্বিতীয় উত্তর এই যে, যিশ বা ব্যুদ্ধের জীবনীতে যতটা পতিতোদ্ধারের চেন্টা দেখি, কৃকের জীবনে ততটা দেখি না, ইহা স্বীকাৰ্য্য। যিশ বা শাক্যের ব্যবসায়ই ধৰ্ম্মপ্রচার। কৃষ্ণ ধৰ্ম্মপ্রচার করিয়াছেন বটে, কিন্তু ধৰ্ম্মপ্রচার তাঁহার ব্যবসায় নহে; সেটা আদর্শ পরিষের আদশজীবননিৰ্ব্ববাহের আনষঙ্গিক ফল মাত্র। কথাটা এই রকম করিয়া বলতে কেহই না মনে করেন। ষে, যিশ খীস্ট বা শাক্যসিংহের, বা ধর্মপ্রচার ব্যবসায়ের কিছমাত্র লাঘব করিতে ইচ্ছা করি। ষিশ এবং শাক্য উভয়কে আমি মনষ্যশ্ৰেষ্ঠ বলিয়া ভক্তি করি, এবং তাঁহাদের চরিত্র আলোচনা করিয়া তাহাতে জ্ঞানলাভ করিবার ভরসা করি। ধৰ্ম্মপ্রচারকের ব্যবসায় (ব্যবসায় অর্থে এখানে যে কম্পেমাির অনষ্ঠানে আমরা সব্বদা প্রবত্ত) আর সকল ব্যবসায় হইতে শ্রেষ্ঠ বলিয়া জানি। কিন্তু যিনি আদর্শ মনষ্যে, তাঁহার সে ব্যবসায় হইতে পারে না। কারণ, তিনি আদশ মনীষা, মানষের যত প্রকার অনন্ঠেয় কৰ্ম্ম আছে, সকলই তাঁহার অনন্ঠেয়। কোন কৰ্ম্মই তাঁহার “ব্যবসায় নহে", অর্থাৎ অন্য কম্পেমর অপেক্ষা প্রধানত্ব লাভ করিতে পারে না। ফিশ বা শাক্যসিংহ @@