পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰঙ্কিম রচনাবলী “হে রাজন! আমাদের তিন জনের মধ্যে কাহার সহিত যাদ্ধ করিতে ইচ্ছা হয় বল ? কে যাদ্ধ করিতে সািজীভূত হইবে ?” জরাসন্ধা ভীমের সঙ্গে ষদ্ধ করিতে ইচ্ছা প্ৰকাশ করিলেন। অথচ ইহার দই ছাত্র পন্ধেবই লেখা আছে যে, কৃষ্ণ জরাসন্ধকে যাদবগণের অবধ্য স্মরণ করিয়া ব্ৰহ্মার আদেশানসারে স্বয়ং তাঁহার সংহারে প্রবত্ত হইলেন না। ব্ৰহ্মার এই আদেশ কি, তাহা মহাভারতের কোথাও নাই। পরবত্তী গ্রন্থে আছে। এখন পাঠকের বিশ্বাস হয় না কি যে, এইগলি আদিম মহাভারতে মলের উপর। পরবত্তী লেখকের কারিগরি? আর কৃষ্ণের বিষ্ণত্ব ভিতরে ভিতরে খাড়া রাখা ইহার উদ্দেশ্য ? আদিম স্তরের মলে কৃষ্ণবিষ্ণতে কোনরাপ সমন্বন্ধ সম্পন্ট করিয়া লিখিয়া দেওয়া হয় নাই, কেন না, কৃষ্ণচরিত্র মনষ্যেচরিত্র; দেবচরিত্র নহে। যখন ইহাতে কৃষ্ণোপাসক দ্বিতীয় স্তরের কবির হাত পড়িল, তখন এটা বড় ভুল বলিয়া বোধ হইয়াছিল সন্দেহ নাই। পরবত্তী কবিকল্পনাটা তাঁহার জানা ছিল, তিনি অভাব পােরণ করিয়া দিলেন। এইরহপ, যেখানে বন্ধন বিমাক্ত ক্ষত্রিয় রাজগণ কৃষ্ণকে ধৰ্ম্মম রক্ষার জন্য ধন্যবাদ করিতেছেন, সেখানেও, কোথাও কিছু নাই, খামকা তাঁহারা কৃষ্ণকে “বিষ্ণো” বলিয়া সবোধন করিতেছেন। এখন ইতিপবে কোথাও দেখা যায় না যে, তিনি বিষ্ণ, বা তদৰ্থক অন্য নামে সম্পেবাধিত হইয়াছেন। যদি এখন দেখিতাম যে, ইতিপবে কৃষ্ণ এরাপ নামে মধ্যে মধ্যে অভিহিত হইয়া আসিতেছেন, তাহা হইলে বঝিতাম যে, ইহাতে অসঙ্গত বা অনৈসগিক কিছই নাই, লোকের এমন বিশ্বাস আছে বলিয়াই ইহা হইল। যদি এমন দেখিতাম যে, এই সময়ে কৃষ্ণ কোন অলৌকিক কাজ করিয়াছেন, তাহা দেবতা ভিন্ন মনষ্যের সাধ্য নহে, তাহা হইলেও হঠাৎ এ “বিষ্ণো !” সম্বোধনের উপযোগিতা বঝিতে পারিতাম। কিন্তু কৃষ্ণ তেমন কিছই কাজ করেন নাই। তিনি জরাসন্ধকে বধ করেন নাই-সব্বলোকসমক্ষে ভীম তাঁহাকে বধ করিয়াছিলেন। সে কায্যের প্ৰবৰ্ত্তক কৃষ্ণ বটে, কিন্তু কারাবাসী রাজগণ তাহার কিছই জানেন না। অতএব কৃষ্ণে অকস্মাৎ রাজগণ কর্তৃক এই বিষ্ণত্ব আরোপ কখন ঐতিহাসিক বা মৌলিক হইতে পারে না। কিন্তু উহা ঐ গরীড় সমরণ ও ব্ৰহ্মার আদেশ সমরণের সঙ্গে অত্যন্ত সঙ্গত, জরাসন্ধবধের আর কোন অংশের সঙ্গে সঙ্গত নহে। তিনটি কথা এক হাতের কারিগরি—আর তিনটা কথাই মালাতিরিক্ত। বোধ হয়, ইহা পাঠকের হৃদয়ঙ্গম হইয়াছে। যাঁহারা বলিবেন, তাহা হয় নাই, তাঁহাদিগের এ কৃষ্ণচরিত্র সমালোচনার অন্যবিত্তীর্ণ হইবার আর কোন ফল দেখি না। কেন না, এ সকল বিষয়ে অন্য কোন প্রকার প্রমাণ সংগ্রহের সম্ভাবনা নাই। আর এই সমালোচনায় যাঁহাদের এমন বিশ্বাস হইয়াছে যে, জরাসন্ধবধ মধ্যে কৃষ্ণের এই বিষ্ণত্বসচনা পরবত্তী কবি-প্রণীত ও প্রক্ষিপ্ত, তাঁহাদের জিজ্ঞাসা করি, তবে কৃষ্ণের ছদ্মবেশ ও কপটাচার বিষয়ক যে কয়েকটি কথা এই জরাসন্ধবধ-পািব্বাধ্যায়ে আছে, তাহাও ঐরােপ প্রক্ষিপ্ত বলিয়া পরিত্যাগ করিব না কেন ? দই বিষয়ই ঠিক একই প্রমাণের উপর নিভাির করে। বস্তুতঃ এই দই বিষয় একত্র করিয়া দেখিলে বেশ বাবা যাইবে যে, জরাসন্ধবধ-পািকবাধ্যায়ে পরবত্তী কবির বিলক্ষণ কারিগরি আছে, এবং এই সকল অসঙ্গতি তাঁহারই ফল। দাই কবির যে হাত আছে, তাহার। আর এক প্রমাণ দিতেছি। জরাসন্ধের পকেবািবত্তান্ত কৃষ্ণ ষধিস্ঠিরের কাছে বিবত করিলেন, ইহা পাবে বলিয়াছি। সেই সঙ্গে, কৃষ্ণের সহিত জরাসন্ধের কংসবধজনিত যে বিরোধ, তাহারও পরিচয় দিলেন। তাহা হইতে কিছু উদ্ধতও করিয়াছি। তাহার পরেই মহাভারতকার কি বলিতেছেন, শােনন। “বৈশম্পায়ন কহিলেন, নরপতি বাহাদুর্থ ভাষাদ্বয় সমভিব্যাহারে তপোবনে বহদিবস তপোহন ঠান করিয়া সবগে গমন করিলেন। তাঁহারা জরাসন্ধ ও চন্ডকৌশিকোক্ত সমদায় বার লাভ করিয়া নিম্ভকৰ্ণাটকে রাজ্য শাসন করিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে ভগবান বাসদেব কংস নরপতিকে সংহার করেন। কংসনিপাত নিবন্ধন কৃষ্ণের সহিত জরাসন্ধের ঘোরতর শত্রতা জটিলমল ।” এ সকলই ত কৃষ্ণ বলিয়াছেন-আরও সবিস্তার বলিয়াছেন-আবার সে কথা কেন ? প্রয়োজন আছে। মল মহাভারত প্রণেতা অদ্ভুতরসে বড় রসিক নহেন-কৃষ্ণ অলৌকিক ঘটনা কিছই বলিবেন না। সে অভাব এখন পরিত হইতে চলিল। বৈশম্পায়ন বলিতেছেন “মহাবল পরাক্রান্ত জরাসন্ধ গিরিশ্রেণী মধ্যে থাকিয়া কৃষ্ণের বিধাথে এক বহৎ গদা GS