পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী পরিশেষে কৃষ্ণ পনেকবার বক্তৃতা করিলেন। দুপদ প্রাচীন এবং সম্পবন্ধে গরােজন, এই জন্য কৃষ্ণ পল্টতঃ তাঁহার কথায় বিরোধ করিলেন না। কিন্তু এমন অভিপ্রায় ব্যক্তি করিলেন যে, যাদ্ধ উপস্থিত হইলে তিনি স্বয়ং সে যন্ধে নিলিপ্ত থাকিতে ইচ্ছা করেন। তিনি বলিলেন, “কুর ও পান্ডবদিগের সহিত আমাদিগের তুল্য সম্পবিন্ধ, তাঁহারা কখন ময্যাদা লঙ্ঘনপৰিবাক আমাদিগের সহিত অশিষ্ট ব্যবহার করেন নাই। আমরা বিবাহে নিমন্ত্রিত হইয়া এস্থানে আগমন করিয়াছি, এবং আপনিও সেই নিমিত্ত আসিয়াছেন। এক্ষণে বিবাহ সম্পন্ন হইয়াছে, আমরা পরমহাদে নিজ নিজ গহে প্ৰতিগমন করিব।” গারজনকে ইহার পর আর কি ভৎসনা করা যাইতে পারে? কৃষ্ণ আরও বললেন যে, “যদি দায্যোধন সন্ধি না করে, তাহা হইলে অগ্ৰে অন্যান্য ব্যক্তিদিগের নিকট দতে প্রেরণ করিয়া পশ্চাৎ আমাদিগকে আহবান করিবেন,” অর্থাৎ “এ যাঁদ্ধে আসিতে আমাদিগের বড় ইচ্ছা নাই।” এই কথা বলিয়া কৃষ্ণ দ্বারকা চলিয়া গেলেন। আমরা দেখিলাম যে, কৃষ্ণ যদুদ্ধে নিতান্ত বিপক্ষ, এমন কি, তজজন্য অদ্ধািরাজ্য পরিত্যাগেও পাণডবদিগকে পরামর্শ দিয়াছিলেন। আরও দেখিলাম যে, তিনি কৌরব পাগডবদিগের মধ্যে পক্ষপাতশন্য, উভয়ের সহিত তাঁহার তুল্য সম্প্ৰবন্ধ স্বীকার করেন। পরে যাহা ঘটিল, তাহাতে এই দাই কথারই আরও বলবৎ প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে। এদিকে উভয় পক্ষের যন্ধের উদ্যোগ হইতে লাগিল, সেনা সংগহীত হইতে লাগিল এবং রাজগণের নিকট দতে গমন করিতে লাগিল। কৃষ্ণকে যাদ্ধে বরণ করিবার জন্য অজ্ঞজনে স্বয়ং দ্বারকায় গেলেন। দায্যোধনও তাই করিলেন। দই জনে এক দিনে এক সময়ে কৃষ্ণের নিকট উপস্থিত হইলেন। তাহার পর যাহা ঘটিল, মহাভারত হইতে তাহা উদ্ধত করিতেছি :- “বাসদেব তৎকালে শয়ান ও নিদ্রাভিভুত ছিলেন। প্রথমে রাজা দায্যোধন তাঁহার শয়নগহে। প্রবেশ করিয়া তাঁহার মস্তকসমীপন্যস্ত প্রশস্ত আসনে উপবেশন করিলেন। ইন্দ্ৰনন্দন পশ্চাৎ প্রবেশপৰোবক বিনীত ও কৃতাঞ্জলি হইয়া যাদবপতির পদতলসমীপে সমাসীন হইলেন। অনন্তর বকিনিন্দন জাগরিত হইয়া অগ্ৰে ধনঞ্জয় পরে দায্যোধনকে নয়নগোচর করিবামাত্র সবাগত প্রশন সহকারে সৎকারপক্বক আগমন হেতু জিজ্ঞাসা করিলেন। দযোধন সহাস্য বদনে কহিলেন, “হে যাদব! এই উপস্থিত যমুদ্ধে আপনাকে সাহায্য দান করিতে হইবে। যদিও আপনার সহিত আমাদের উভয়েরই সমান সম্প্ৰবন্ধ ও তুল্য সৌহৃদ্য; তথাপি আমি অগ্ৰে আগমন করিয়াছি। সাধকগণ প্রথমাগত ব্যক্তির পক্ষই অবলম্বন করিয়া থাকেন; আপনি সাধাগণের শ্রেষ্ঠ ও মাননীয়; অতএব অদ্য সেই সদাচার প্রতিপালন করুন।” কৃষ্ণ কহিলেন, “হে কুর বীর! আপনি যে অগ্রে আগমন করিয়াছেন, এ বিষয়ে আমার কিছ: মাত্র সংশয় নাই; কিন্তু আমি কুন্তীকুমারকে অগ্রে নয়নগোচর করিয়াছি, এই নিমিত্ত আমি আপনাদের উভয়কেই সাহায্য করিব। কিন্তু ইহা প্ৰসিদ্ধ আছে, অগ্ৰে বালকেরই বরণ করবে, অতএব অগ্ৰে কুন্তীকুমারের বরণ করাই উচিত।” এই বলিয়া ভগবান যদানন্দন। ধনঞ্জয়কে কহিলেন-‘হে কৌন্তেয় অগ্ৰে তোমারই বরণ গ্রহণ করিব। আমার সমযোদ্ধা নারায়ণ নামে এক অৰবিন্দ গোপ, এক পক্ষের সৈনিক পদ গ্রহণ করােক। আর অন্য পক্ষে আমি সমরপরাখমাখ ও নিরস্ত্র হইয়া অবস্থান করি, ইহার মধ্যে যে পক্ষ তোমার হৃদ্যতর, তাহাই অবলম্ববন করি।” ধনঞ্জয় অরাতিমন্দন জনান্দন সমরপরাজিমখ হইবেন, শ্রবণ করিয়াও তাঁহারে বরণ করিলেন। তখন রাজা দাৰ্য্যোধন অববািদ নারায়ণী সেনা প্রাপ্ত হইয়া কৃষ্ণকে সমরে পরাজমখি বিবেচনা করতঃ প্রীতির পরাকান্ঠা প্রাপ্ত হইলেন।” উদ্যোগপৰোবর এই অংশ সমালোচনা করিয়া আমরা এই কয়টি কথা বঝিতে পারি। প্রথম-যদিও কৃষ্ণের অভিপ্রায় যে, কাহারও আপনার ধৰ্ম্মাথ সংযক্ত অধিকার পরিত্যাগ করা কত্তব্য নহে, তথাপি বলের অপেক্ষা ক্ষমা তাঁহার বিবেচনায় এত দীর উৎকৃষ্ট যে, বলপ্রয়োগ করার অপেক্ষা অন্ধেক অধিকার পরিত্যাগ করাও ভাল। সব্বত্র সমাদশী । সাধারণ বিশ্বাস এই যে, তিনি পান্ডবদিগের পক্ষ, এবং কৌরবদিগের বিপক্ষ। উপরে দেখা গেল যে, তিনি উভয়ের মধ্যে সম্পণেরপে পক্ষপাতশন্য। তৃতীয়-তিনি সম্বয়ং অদ্বিতীয় বীর হইয়াও যন্ধের প্রতি বিশেষ প্রকারে বিরাগব্যক্তি । প্রথমে ষােহাতে বন্ধ না হয়, এইরূপ পরামর্শ দিলেন, তারপর যখন যন্ধে নিতান্তই উপস্থিত হইল, এবং অগত্যা তাঁহাকে এক পক্ষে বরণ হইতে হইল, তখন তিনি অস্ত্রত্যাগে প্ৰতিজ্ঞাবদ্ধ "rk99,