পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমন্তগৰক্ষগীতা অন্তবন্ত ইমে দেহা নিত্যস্যোক্তাঃ শারীরিণঃ। অনাশিনোেহ প্রমেয়স্য তস্মাদ যাদ্ধাস্ব ভারত। ১৮ ৷৷ নিত্য, অবিনাশী এবং অপ্রমেয় আত্মার এই দেহ নশ্বর বলিয়া কথিত হইষাছে। অতএব হে ভারত ! যাদ্ধ করা। ১৮ । নিত্য, অর্থাৎ সব্বদা একরাপে স্থিত (শ্ৰীধর)। గా অর্থাৎ অপরিচ্ছিন্ন। প্রত্যক্ষাদি প্রমাণের দ্বারা অপরিচ্ছেদ্য। প্রত্যক্ষাদির VSVSTVS I শ্ৰীধর এই শ্লোকের এইরােপ ব্যাখ্যা করেন—“নিত্য অর্থাৎ সর্ববাদী একরােপ অতএব অবিনাশী, ও অপ্রমেয় অর্থাৎ অপরিচ্ছিন্ন যে আত্মা, তাঁহার এই দেহ সখদঃখাদিধম্মক, ইহা তত্ত্বদশীদিগের দ্বারা উক্ত ; যখন আত্মার বিনাশ নাই, সখদঃখাদি সম্প্ৰবন্ধ নাই, তখন মোহজনি ৩ শোক পরিত্যাগ করিয়া যাদ্ধ কর, অর্থাৎ স্বধৰ্ম্ম ত্যাগ করিও না।” এই শ্লোকের ব্যাখ্যার পর শঙ্করাচায্য যাহা বলিয়াছেন, তাহার প্রতি বিশেষ মনোযোগ আবশ্যক। তিনি বলেন—“ইহাতে যাদ্ধের কত্তব্যতা বিধান করা হইতেছে না। যাঁদ্ধে প্রবত্ত হইয়াও ইনি শোকমোহপ্রতিবদ্ধ হইয়া তষষ্ণীম্ভাবে আছেন, ভগবান তাঁহার কৰ্ত্তব্যপ্রতিবন্ধের অপনয়ন করিতেছেন মাত্র। অতএব ‘যাদ্ধ করা ইহা অন্যবাদ মাত্র, বিধি নয়।” অনেকের বিশ্বাস যে, এই গীতাগ্রন্থের স্থলে উদ্দেশ্য-যন্দ্ধের ন্যায় নশংস ব্যাপারে মনষ্যের প্রবত্তি দেওয়া। তাঁহারা যে গীতা বঝিবার চেস্টা করেন নাই, তাহা বলা বাহল্য। গীতা বাজারের উপন্যাস-গ্রন্থ নহে যে, একবার পড়িবা মাত্র উহার সমস্ত তাৎপৰ্য্য বাবা যাইবে। বিশেষরাপে উহার আলোচনা না করিলে বঝা যায় না। গীতার এতদংশের উদ্দেশ্য- - স্বধৰ্ম্মপালনে অপরিহার্য্যতা প্ৰতিপন্ন করা। সবধৰ্ম্মম বলিলে শিক্ষিত সম্প্রদায় বঝিতে কািট পাইতে পারেন, ইহার ইংরাজি প্রতিশব্দ IDutv শানিলে বোধ হয়, সে কম্পট থাকিবে না। গীতার এতদংশের উদ্দেশ্য —সেই Duty ধৰ্ম্মের অবশ্যসম্পাদ্যতা প্ৰতিপন্ন করা। সকল মনষ্যের সাবধৰ্ম্ম একপ্রকার নহে-কাহারও স্বধৰ্ম্মম দন্ড-প্রণয়ন ; কাহারও স্বধৰ্ম্মম ক্ষমা। সিপাহীর সর্বধৰ্ম্মম শত্ৰকে আঘাত করা, ডাক্তারের স্বধৰ্ম্ম সেই আঘাতের চিকিৎসা। মনষ্যের যত প্রকার কৰ্ম্ম আছে, তত প্রকার স্বধৰ্ম্মম আছে। কিন্তু সকল প্রকার স্বধৰ্ম্মমধ্যে যাদ্ধই সব্বাপেক্ষা নশংস ব্যাপার। যাদ্ধ পরিহার করিতে পারিলে যাদ্ধ কাহারও কৰ্ত্তব্য নহে। কিন্তু এমন অবস্থা ঘটে যে, এই নশংস কাৰ্য্য অপরিহায্য ও অবশ্যসম্পাদ্য হইয়া উঠে। তৈমরিলঙ্গ বা নাদের দেশ দগ্ধ ও লন্ঠিত করিতে আসিতেছে, এমন অবস্থায় যে যাদ্ধ করিতে জানে, যাদ্ধ তাহারই অপরিহার্য ও অবশ্য সম্পপাদ্য সর্বধৰ্ম্মম । অতএব গীতাকার সর্বধৰ্ম্মম পালন সম্পবন্ধে ইংরাজি দশনশাস্ত্ৰে যাহাকে Crucial instance বলে, তাহাই অবলম্বন করিয়া সম্বাবধন্মের অবশ্যসম্পপাদ্যতা এবং তদপেলক্ষে সমস্ত ধমেরও নিগঢ়ি রহস্য ব্যাখ্যাত করিতেছেন। উদাহরণস্বরপ যে স্বধৰ্ম্মম সব্বাপেক্ষা নশংস ও ভয়াবহ ও যাহাতে সাধজন মাত্ৰই সৰ্ববতঃ অপ্রবত্ত, তাহাঁই গ্রহণ করা হইয়াছে। কেবল তাহাই নহে—যদ্ধের মধ্যে যে যাদ্ধ সব্বাপেক্ষা নশংস ও ভয়াবহ, যাহাতে সর্বভাবতঃ নশংস ব্যক্তিও সহজে প্রবত্ত হইতে চাহে না, তাহাঁই উদাহরণস্বরপ গ্ৰহণ করিয়াছেন। Crucial instance বটে। গীতার উদ্দেশ্য ইহাই প্রতিপাদন করা যে, স্বধৰ্ম্মম এরপ নিশংস, ভয়াবহ এবং সাধ জনপ্রবত্তির আপাত-বিরোধী হইলেও তাহ অবশ্য পালনীয়। কিন্তু শ্লোকটার ভাবাথ বোধ করি, এখনও পরিস্কার হয় নাই। “আত্মা অবিনাশী ।-কেহ তাহার বিনাশ করিতে পারে না-অতএব যাদ্ধ করা,’’ এই কথার অর্থ কি ? আত্মা অবিনাশী বলিয়া কাহাকে হত্যা করায় কি দোষ নাই ? ভগবদ্বাক্যের সে তাৎপৰ্য্য নহে। ইহার তাৎপৰ্য্য উপরিধত শঙ্করভাষ্যে যাহা কথিত হইয়াছে, তাই। অজ্ঞজন যাদ্ধে প্রবত্ত, তবে মোহে অভিভূত হইয়া, মানষি মারিতে হইবে, এই দঃখে তাঁহা হইতে প্রতিনিবত্ত হইতেছেন। ভগবান বাঝাইতেছেন যে, দঃখ করিবার কারণ কিছই নাই।-কেন না, কেহই মরিবে না। শরীর নন্ট হইবে বটে, কিন্তু শরীর ত অনিত্য, অজ্ঞজন যাদ্ধ না করিলেও এক দিন অবশ্য নন্ট হইবে। কিন্তু শরীর নন্ট হইলে মানষে মরে না-যাহার শরীর, সে অমর-কেহই তাহাকে মারিতে পারে না। অতএব যাদ্ধের প্রতি অতীজনে যে আপত্তি উপস্থিত করিতেছেন, সেটা ভ্ৰমজনিত মাত্র। অতএব তিনি যাদ্ধ করিতে পারেন। CSC