পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী করিতে পরামর্শ দেন, তাঁহাদের আমরা জিজ্ঞাসা করি যে, হিন্দধমের পরিবত্তে আর কোন নািতন ধৰ্ম্মম সমাজে প্রচলিত হওয়া উচিত, না। সমাজকে একেবারে ধৰ্ম্মহীন রাখা উচিত ? যে সমাজ ধৰ্ম্মশান্য, তাহার উন্নতি দরে থাকুক, বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।* আর তাঁহারা যদি বলেন যে, হিন্দধমের পরিবত্তে ধৰ্ম্মমােন্তরকে সমাজ আশ্রয় করােক, তাহা হইলে আমরা জিজ্ঞাসা করি যে, কোন ধৰ্ম্মকে আশ্রয় করিতে হইবে ? পথিবীতে আর যে কয়টি শ্রেণীঠ ধৰ্ম্মম আছে, বৌদ্ধধৰ্ম্ম, ইসলামধৰ্ম্মম এবং খািন্টধৰ্ম্মম , এই তিন ধৰ্ম্মমই ভারতবর্ষে হিন্দধামকে স্থানচু্যত করিয়া তাহার আসন গ্রহণ করিবার জন্য যথাসাধ্য চেন্টা করিয়াছে; কেহই হিন্দধৰ্ম্মকে স্থানচ্যুত করিতে পারে নাই। ইসলাম কতকগলা বন্যজাতি এবং হিন্দনামধারী কতকগলা অনাৰ্য্য জাতিকে অধিকৃত করিয়াছে বটে, কিন্তু ভারতীয় প্রকৃত আৰ্যসমাজের কোন অংশ বিচলিত করিতে পারে নাই। ভারতীয় আৰ্য হিন্দ ছিল, হিন্দই আছে। বৌদ্ধধৰ্ম্ম হিন্দধৰ্ম্মকে ভারতবর্ষ ছাড়িষ্যা দিয়া দেশান্তরে পলায়ন করিয়াছে। খািন্টধৰ্ম্ম রাজাব ধৰ্ম্মম হইয়াও কদাচিৎ একখানি চন্ডালের বা পোদের গ্রাম অধিকার, অথবা দই এক জন কুক্কট-মাংস-লোলািপ ভদ্রসন্তানকে দখল ভিন্ন আর কিছই করিতে পারে নাই। যখন বৌদ্ধধৰ্ম্ম, ইসলামধৰ্ম্মম ও খণ্টধৰ্ম্ম, হিন্দধমের স্থান অধিকার করিতে পারে নাই, তখন আর কোন ধৰ্ম্মমকে তাহার স্থানে এখন স্থাপিত করিব ? ব্ৰাহ্মধর্মের আমরা পথক উল্লেখ করিলাম না, কেন না। ব্রাহ্মধৰ্ম্ম হিন্দধমের শাখা মাত্র । ইহার এমন কোন লক্ষণ দেখা যায় নাই, যাহাতে মনে করা যাইতে পারে যে, ইহা ভবিষ্যতে সামাজিক ধৰ্ম্মেম পরিণত হইবে। যখন ধৰ্ম্মশান্য সমাজের বিনাশ নিশ্চিত, যদি হিন্দধমের স্থান অধিকার করিবার শক্তি আর কোন ধমেরই নাই, তখন হিন্দধৰ্ম্মম রক্ষা ভিন্ন হিন্দসমাজের আর কি গতি আছে ? তবে হিন্দধাম লইয়া একটা গন্ডগোলে পড়িতে হইতেছে। আমরা দেখিয়াছি যে, শাস্ত্রোক্ত যে ধৰ্ম্ম, তাহার সব্বাঙ্গ রক্ষা করিয়া কখন সমাজ চলিতে পারে না -এখনও চলিতেছে না-এবং বোধ হয়, কখন চলে নাই। তা ছাড়া একটা প্রচলিত হিন্দধৰ্ম্মম আছে; তৎকর্তৃক শাস্ত্রের কতক বিধি রক্ষিত এবং কতক পরিত্যক্ত এবং অনেক অশাস্ত্রীয় আচার-ব্যবহার-বিধি তাহাতে গহীত হইয়াছে। হিন্দধমের কি সপক্ষ কি বিপক্ষ সকলেই স্বীকার করেন যে, এই বিমিশ্র এবং কলষিত হিন্দধমের দ্বারা হিন্দসমাজের উন্নতি হইতেছে না। তাই আমরা বলিতেছিলাম যে যেটকু হিন্দধমের প্রকৃত মৰ্ম্ম, যেটকু সারভাগ, যেটকু প্রকৃত ধৰ্ম্ম সেইটকু অন্যাসন্ধান করিয়া আমাদের স্থির করা উচিত। তাহাই জাতীয ধৰ্ম্মম বলিয়া অবলম্বন করা উচিত। যাহা প্রকৃত হিন্দধৰ্ম্ম নহে, যাহা কেবল অপবিত্র কলষিত দেশাচার বা লোকাচার, ছদ্মবেশে ধৰ্ম্ম বলিয়া হিন্দধমের ভিতর প্রবেশ করিয়াছে, যাহা কেবল অলীক উপন্যাস, যাহা কেবল কাব্য, অথবা প্রত্নতত্ত্ব, যাহা কেবল ভণন্ড এবং সাবাথ পরদিগের সাবাথ সাধনাথ সম্পট হইয়াছে, এবং অজ্ঞ ও নিবোধগণ কত্ত্বক হিন্দধৰ্ম্ম বলিয়া গহীত হইয়াছে, যাহা কেবল বিজ্ঞান, অথবা ভ্ৰান্ত এবং মিথ্যা বিজ্ঞান, যাহা কেবল ইতিহাস, অথবা কেবল কলিপিত ইতিহাস, কেবল ধৰ্ম্মম গ্রন্থ মধ্যে বিন্যস্ত বা প্রক্ষিপ্ত হওয়া ধৰ্ম্মম বলিয়া গণিত হইয়াছে, সে সকল এখন পরিত্যাগ করিতে হইবে। যাহাতে মনষ্যের যথার্থ উন্নতি, শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সৰ্ব্বববিধ উন্নতি হয়, তাহাই ধৰ্ম্ম। এইরপ উন্নতিকর তত্ত্ব লইয়া সকল ধৰ্ম্মেমরই সারভাগ গঠিত, এই রােপ উন্নতিকর তত্ত্বসকল, সকল ধৰ্ম্মমর্বাপেক্ষা হিন্দধমেই প্রবল। হিন্দধমেই তাহার প্রকৃত সম্পপণতা আছে। হিন্দধৰ্ম্মে যেরােপ আছে, এরােপ আর কোন ধৰ্ম্মেমই নাই। সেইটকু সারভােগ। সেইটকুই হিন্দধৰ্ম্ম। সেটকু ছাড়া আর যাহা থাকে—শাস্ত্রে থাকুক, অশাস্ত্রে থাকুক বা লোকাচারে থাকুক —তাহা অধৰ্ম্মম। যাহা ধৰ্ম্মম। তাহা সত্য, যাহা অসত্য, তাহা অধৰ্ম্মম। যদি অসত্য মনতে থাকে, মহাভারতে থাকে বা বেদে থাকে, তব অসত্য, অধৰ্ম্মম বলিয়া পরিহায্য। এ কথায় দাইটি-গোল ঘটে। প্রথম, বেদাদিতে অসত্য বা অধৰ্ম্ম আছে, বা থাকিতে পারে,

  • অনেকে বলেন যে, ধৰ্ম্ম (RCligion) পবিত্যাগ করিয়া কেবল নীতিমাত্র অবলম্বন করিষা সমাজ চলিতে পারে ও উন্নত হইতে পারে। এ কথার প্রতিবাদের এ স্থান নহে। সংক্ষেপে বলা যাইতে পারে যে, এমন কোন সমাজ দেখা যায় নাই যে, ধৰ্ম্মম ছাড়িয়া, কেবল নীতিমাত্র অবলম্বন করিয়া উন্নত হইয়াছে। দ্বিতীয়, এই নীতিবাদীরা যাহাকে নীতি বলেন, তাহা বাস্তবিক ধৰ্ম্ম বা ধৰ্ম্মম মািলক।

a Gy