পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবিতার যে ঘনিষ্ঠ সম্প্ৰবন্ধ, তাহাও গােরর অনকারী। যে রচির জন্য দীনবন্ধকে অনেকে দষিয়া থাকেন, সে রচিও গােরর। কিন্তু কবিত্ব সম্প্রবন্ধে গরের অপেক্ষা শিষ্যকে উচ্চ আসন দিতে হইবে। ইহা গােররও আগৌরবের কথা নহে। দীনবন্ধর হাস্যরসে অধিকার যে ঈশ্বর গপ্তের অনকারী বলিয়াছি, সে কথার তাৎপৰ্য্য এই যে, দীনবন্ধ, ঈশ্বর গপ্তের সঙ্গে এক জাতীয় ব্যঙ্গ-প্রণেতা ছিলেন। আগেকার দেশীয় ব্যঙ্গ-প্ৰণালী এক জাতীয় ছিল—এখন আর এক জাতীয় ব্যঙ্গে আমাদিগের ভালবাসা জন্মিতেছে। আগেকার লোক কিছর মোটা কাজ ভালবাসিত; এখন সািরর উপর লোকের অন্যরাগ। আগেকার রসিক, লাঠিয়ালের ন্যায় মোটা লাঠি লইয়া সঞ্জোরে শত্রর মাথায় মারিতেন, মাথার খালি ফাটিয়া যাইত। এখনকার রসিকেরা ৬াক্তাপের মত, সর লানসেটখানি বাহির করিয়া কখন কুচ করিয়া ব্যাথার স্থানে বসাইয়া দেন, কিছু জানিতে পারা যায় না, কিন্তু হৃদয়ের শোণিত ক্ষতমখে বাহির হইয়া যায়। এখন ইংরেজ-শাসিত সমাজে ডাক্তারের শ্ৰীবদ্ধি-লীঠযালেন বড় দ। রবস্থা । সাহিত্য সমাজে লাঠিয়াল আর নাই, এমন নহে, —দভাগ্যক্রমে সংখ্যাশ কিছর বাড়িয়াছে, কিন্তু তাহদের লাঠি ঘাণে ধরা, বাহতে বল নাই, তাহারা লাঠির ভয়ে কাতর, শিক্ষা নাই, কোথায মারিতে কোথায় মারে। লোক হাসাব্য বটে, কিন্তু হাস্যের পাত্র তাহারা স্বয়ং। ঈশ্বর গপ্ত বা দীনবন্ধ এ জাতীয় লাঠিসাল ছিলেন না । তাঁহাদের হাতে পাকা লাশের মোটা লাঠি, বাহতেও অমিত বল, শিক্ষা ও বিচিত্র। দীনবন্ধীর লাঠির আঘাতে অনেক জলধর ও রাজীব মখোপাধ্যায় জলধর বা রাজীব-জীবন পরিত্যাগ কবিষয়ছে। কবির প্রধান গণ, সন্টি-কৌশল। ঈশ্বর গপ্তের এ ক্ষমতা ছিল না। দীনবন্ধর এ শাঁও অতি প্রচুর পরিমাণে ছিল। তাঁহার প্রণীত জলধর, জগদম্বা, মল্লিকা, নিমচাঁদ দত্ত প্রভৃতি এই সকল কথার উক্তজবল উদাহরণ। তবে, যাহা সাক্ষা, কোমল, মধর, অকৃত্রিম, কারণ, প্রশান্তসে সকলে দীনবন্ধ তেমন অধিকার ছিল না। তাঁহার লীলাবতী, মালতী, কামিনী, সৈীরগঞ্জী, সরলা প্রভৃতি রসজ্ঞের নিকট তােদশ আদরণীয়া নহে। তাঁহার বিনায়ক, রমণীমোহন, অরবিন্দ, ললিতমোহন মন মািন্ধ করিতে পারে না। কিন্তু যাহা স্থল, অসঙ্গত, অসংলগ্ন, বিপৰ্য্যস্ত, তাহ। তাহার ইঙ্গিত মাত্রেরও অধীন। ওঝার ডাকে ভূতের দলের মত স্মরণমাত্র সারি দিয়া আসিযা দাঁড়ায় । কি উপাদান লইযা দীনবন্ধ এই সকল চিত্র রচনা করিয়াছিলেন, তাহার আলোচনা করিলে বিস্মিত হইতে হয়। বিসমযের বিষয়, বাঙ্গালা সমাজ সম্পবন্ধে দীনবন্ধর বহদ্দশিতা। সকল শ্রেণীর বাঙ্গালীর দৈনিক জীবনের সকল খবর রাখে, এমন বাঙ্গালী লেখক আর নাই। এ বিষয়ে বাঙ্গালী লেখকদিগের এখন সাধারণতঃ বড় শোচনীয় অবস্থা। তাঁহাদিগের অনেকেরই লিখবার যোগ্য শিক্ষা আছে, লিখিবার শক্তি আছে, কেবল যাহা জানিলে তাঁহাদের লেখা সাথািক হাষ। তাহা জানা নাই। তাঁহারা অনেকেই দেশবৎসল, দেশের মঙ্গলাৰ্থ লেখেন, কিন্তু দেশের অবস্থা কিছই জানেন না। কলিকাতার ভিতর সবশ্রেণীর লোকে কি করে, ইতাই অনেকের সম্পদেশ সম্প্ৰবন্ধীয় জ্ঞানের সীমা। কেহ বা অতিরিক্ত দই চারিখানি পল্লীগ্রাম, বা দই একটা ক্ষাদ্ৰ নগর দেখিয়াছেন, কিন্তু সে বঝি কেবল পথ ঘাট, বাগান বাগিচা, হাট বাজার। লোকের সঙ্গে মিলেন নাই। দেশ সম্বন্ধীয় তাঁহাদের যে জ্ঞান তাহা সচরাচর সংবাদপত্র হইতে প্রাপ্ত । সমবাদপত্র লেখকেরা আবার সচরাচর (সকলে নহেন) ঐ শ্রেণীর লেখক। --ইংরেজেরা ত বটেই। কাজেই তাঁহাদের কাছেও দেশ সমন্বন্ধীয় যে জ্ঞান পাওয়া যাম, তাতো দাশ নকদি^গব ভাষায্য রক্তজতে সপতজ্ঞানবং ভ্ৰম জ্ঞান বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া যাইতে পারে। এমন বলিতেছি না যে, কোন বাঙ্গালী লেখক গ্রাম্য প্রদেশ ভ্ৰমণ করেন নাই। অনেকে করিয়াছেন, কিন্ত লোকের সঙ্গে মিশিয়াছেন কি ? না মিশিলে, যাহা জানিয়াছেন তাহার মাল্য কি ? বাঙ্গালী লেখকদিগের মধ্যে দীনবন্ধই এ বিষয়ে সব্বোচ্চ স্থান পাইতে পারেন। দীনবন্ধ কে রাজকাৰ্য্যােনরোধে, মণিপাের হইতে গঞ্জাম পৰ্যন্ত, দাডিজ লিঙ্গ হইতে সমদ্র পসািন্ত, পািনঃ পানঃ ভ্ৰমণ করিতে হইয়াছিল। কেবল পথ ভ্ৰমণ বা নগর দশন নহে, ডাকঘর দেখিবার জন্য গ্রামে গ্রামে যাইতে হইত। লোকের সঙ্গে মিশিবার তাঁহার অসাধারণ শক্তি ছিল। তিনি আহমাদপৰিবাক সকল শ্রেণীর লোকের সঙ্গে মিশিতেন। ক্ষেত্রমণির মত গ্রাম্য প্রদেশের ইতর লোকের b/○た。