পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী বিশেষ আমোদ প্রাপ্ত হইয়া থাকি বটে, কিন্তু কতকগালিন ভাল মানষেকে যে মনঃপীড়া দিয়া থাকি, এবং তাঁহাদিগের বিরাগভাজন হই, ইহা আমাদিগের বড় দঃখ। অতএব বঙ্গীয় পাস্তক সমালোচনা আমাদিগের বড় অপ্রীতিকর কায্য হইয়া উঠিয়াছে। কেবল কৰ্ত্তব্যানরোধেই আমরা তাহাতে প্রবত্ত। কৰ্ত্তব্যানরোধেই আমরা অনিচ্ছক হইয়া অপ্ৰশংসনীয় গ্রন্থের অপ্রশংসা করিয়া থাকি। আমাদের নিতান্ত কামনা যে, প্রশংসনীয় গ্রন্থ আমাদিগের হাতে পড়ে আমরা প্রশংসা করিয়া লেখক সমাজকে জানাই যে, আমরা বিশ্বনিন্দক নাহি। আমাদের দভাগ্যক্রমে এবং বাঙ্গালা ভাষার দভাগ্যক্ৰমে সেরােপ গ্ৰন্থ অতি বিরল। অদ্য দাইখানি প্রশংসনীয় গ্রন্থ আমাদিগের হস্তগত হইয়াছে। তাই আজি আমাদিগের এত আহাদ । তাহার মধ্যে রাজনারায়ণ বাবর গ্রন্থখানি প্রথমেই সমালোচনীয়। হিন্দী ধৰ্ম্মম যে সকল ধৰ্ম্মেমরি শ্রেদ্ঠ, এই কথা প্ৰতিপন্ন করা এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। গত ভাদ্র মাসে জাতীয় সভায় রাজনারায়ণ বাবা উপস্থিত মতে একটি বক্তৃতা করেন। তৎপরে তােহা সন্সারণ করায়া লিপিবদ্ধ করিমগছেন। তাহাতেই এ প্রস্তাবের উৎপত্তি । বঙ্গদর্শনের প্রথম প্রচারকালে কাৰ্য্যাধ্যক্ষ সাধারণ সমক্ষে প্রতিশ্রত হইয়াছিলেন যে, এই পত্রে ধৰ্ম্মম সম্প্রদায়ের মতামতের সমালোচনা হইবে না। আমরা সেই প্ৰতিজ্ঞায় বদ্ধ। সেই প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘন না করিলে আমরা এ প্রবন্ধের উপযক্ত সমালোচনা করিতে পারি না, কেন না তাহা করিতে গেলে হিন্দী ধর্মের দোষ গণ বিচার করিতে হয। অতএব আমরা ইহার প্রকৃত সমালোচনায় প্রবত্ত হইতে পারিলাম না, ইহা আমাদের দঃখ রহিল। কিন্তু সে তত্ত্বের আলোচনায় প্রবত্ত না হইয়াও যদি একজন হিন্দ বংশজাত লেখক বলেন যে, আমাদের দেশের ধৰ্ম্মম সব্বশ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্ম, ইহা একজন সপন্ডিত লোকের নিকট শনিয়া সখি হইল, তবে বোধ করি, অন্য ধৰ্ম্মমাবলম্পবী লোকেও তাঁহাকে মাতজনা করিবেন। আমরা বলিতেছি, এ কথা শনিয়া আমাদের সখি হইল, কিন্তু এ কথা আমরা যথাৰ্থ বলিয়া স্বীকার করিতেছি না, বা অযথাৰ্থ বলিয়া অগ্রাহ্য করিতেছি না। হিন্দী ধৰ্ম্ম অন্য ধৰ্ম্মমর্বাপেক্ষা শ্রেণীঠ কি না, তদ্বিষয়ে কোন অভিমত ব্যক্ত না করিয়া নিম্নলিখিত কয়েকটি কথা, বোধ হয়, बव्ना यादेऊ *ाcद्ध। লেখক যাহাকে স্বয়ং হিন্দী ধৰ্ম্মম বলেন, তাহারই শ্রেদ্ঠত্ব সংস্থাপনই যে তাঁহার উদ্দেশ্য, ইহা অবশ্য অনমেয়। তিনি বলেন যে, ব্রহ্মোপাসনাই হিন্দী ধৰ্ম্ম। অতএব বহ্মোপাসনা যে শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্মম , কেবল তাহাই সমৰ্থন করা তাঁহার উদ্দেশ্য। এ দেশের সাধারণ ধৰ্ম্মেমরি শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদন করা তাঁহার উদ্দেশ্য নহে। হিন্দী ধৰ্ম্মম সব্বাপেক্ষা শ্রোিঠ-কিন্তু আমাদের দেশের চলিত ধৰ্ম্মম শ্রেণীঠ, এমত কথা তিনি বলেন না। যে ধৰ্ম্মমকে তিনি শ্রেণীঠ বলেন, তৎসম্পবন্ধে লোকের বড় মতভেদ নাই। পরব্রহ্মের উপাসনা-সকল ধৰ্ম্মেমরি অন্তগত-সকলেরই সারভাগ । রাজনারায়ণ বাব নিজ প্রশংসিত ধৰ্ম্মেমরি মািলস্বরপ বেদাদি হিন্দ শাস্ত্রের উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি যে ধৰ্ম্মেমরি উল্লেখ তাহার মল হিন্দ শাস্ত্ৰে আছে, ইহা যথার্থ। কিন্তু উহা হিন্দী ধন্মের একাংশ মাত্ৰ-অতি অলপাংশ। কোন পদার্থের অংশ মাত্রকে সেই পদাৰ্থ কলপনা করায় সত্যের বিঘা হয়। অংশ মাত্র গ্রহণ করিয়া সকল পদার্থেরই প্রশংসা করা যায়। রাজনারায়ণ বাব যেমন হিন্দী ধৰ্ম্মের অংশবিশেষ গ্রহণ করিষা ঐ ধৰ্ম্মের প্রশংসা করিয়াছেন, তেমনি ঐ ধৰ্ম্মেমর অপরাংশ গ্রহণ করিয়া তাঁহার সকল কথাই খন্ডন করা যাইতে পারে। যেমন অঙ্গরীয় মধ্যস্থ হীরককে অঙ্গরীয় বলা যায় না, তেমনি কেবল ব্রহ্মোপাসনাকে হিন্দী ধৰ্ম্মম বলা যায় না। যেমন কলিকাতাকে ভারতবর্ষ বলা যায় না, তেমনি কেবল ব্রহ্মোপাসনাকে হিন্দী ধৰ্ম্ম বলা যায় না। উপধৰ্ম্মম হইতে বিচ্ছিন্ন পরিশদ্ধ ব্রহ্মোপাসনা কোন কালে একা ভারতবর্ষে বা ভারতবষের কোন প্রদেশে বা আধনিক ব্রাহ্ম ভিন্ন কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ছিল কি না, সন্দেহ। যদি এ কথা যথাৰ্থ হয়, তবে ব্রাহ্ম ধমেরই শ্রেষ্ঠতা সংস্থাপন লেখকের উদ্দেশ্য বলিতে হইবে। বোধ হয়, রাজনারায়ণ বাব এ কথা অস্বীকার করিবেন না। ইহাতে আমরা লেখকের অপ্রশংসা করিতেছি না। সর্বমত সংস্থাপনে সকলেরই অধিকার আছে। বিশেষ ব্ৰাহ্ম পরিবত্তে হিন্দ কথাটি ব্যবহারে বিশেষ উপকার আছে। হিন্দী ধৰ্ম্মেমরি সাহিত ব্ৰাহ্ম ধমের একতা সম্বীকার করায় আমাদের বিবেচনায় উভয় সম্প্রদায়ের মঙ্গল। আমি যদি অন্যের সহিত পথক হইয়া একা কোন সদনষ্ঠানে রত হই, তবে আমার একারই উপকার; a S.