পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী অসম্পণে থাকিবে কেন? একটি কথা বিশেষ বিবেচনা করা আবশ্যক। যেরূপ লিখিত বিচারপ্রণালী প্রচলিত, তাহাতে একটি ফৌজদারী মোকদ্দমা করিতে অনেক বিলম্ব হয়। বিচারকেরা যে কয়েকটির বিচার করিতে পারেন, সেই কয়টির বিচার করিয়া অবশিলেটর দিন ফিরাইয়া দেন। এইরপ অনেক মোকদ্দমার দিন, পািনঃ পািনঃ ফিরিয়া যায়। অথী প্রত্যথী অনেকবার কন্ট পাইয়া, রফা করিয়া চলিয়া যায়। না হয়, সাক্ষী পলায়; নয়, ধনী পক্ষ সময় পাইলে অর্থ ব্যয় করিয়া সাক্ষিগণকে বশীভুত করে। এইরূপে বিচারকের অনবকাশে অনেক মোকদ্দমার বিচার একেবারে হয় না। ইহার দাইটি মাত্র উপায় সম্ভবে; প্রথম, বিচারকের সংখ্যা বদ্ধি; দ্বিতীয় বিচারকের অবকাশ বদ্ধি। প্রথম উপায়, অর্থব্যয়সাপেক্ষ; বিচারকসংখ্যা বদ্ধি করিতে গেলে, আবার নাতন টেক্স বসাইতে হয়। টেক্সের নামে লোকের যেরপ ভয়, টেক্স বসিলে লোকের যেরপ কষ্ট, টেক্সের জন্য গবৰ্ণমেণ্টের উপর প্রজার যেরপে অসন্তোষ তাহাতে আর টেক্স বসান সম্ভব নহে। সতরাং বিচারকের সংখ্যা বাড়াইবার কোন উপায় নাই। অতএব বিচারকের অবসর বদ্ধি ভিন্ন এ অবিচার নিবারণের উপায়ান্তর নাই। বিচারকের অবসর বদ্ধির একমাত্র উপায় আছে। যাহাতে মোকদ্দমায় অলপ সময় লাগে, তাহা করিলেই অবসর বদ্ধি হইতে পারে। এই জন্য সরাসরি বিচারের সন্টি। ইহার অন্য কোন উপায় নাই--কেবল কতকগলি মোকদ্দমায় লেখাপড়ার অলপতা করা একমাত্র উপায়। যদি বল, আপিল উঠিয়া গেল কেন ? উত্তর, প্রমাণ লিপিবদ্ধ না থাকিলে কি করিয়া আপিল আদালত বিচার নিম্পত্তি করবেন। জরির বিষয়েও একটি বিশেষ কথা আছে। যদি হাঁড়ি গড়া, ঘাঁটি গড়ায় নৈপণ্য শিক্ষার অধীন, তবে বিচারকায্যেই শিক্ষার প্রয়োজন নাই, এ কথা নিবোধ বা কুসংস্কারাবিন্স্ট লোকেই বালিবো। বিচারকায্য শিক্ষিত জজেব দ্বারা হওয়াই কত্তব্য-যে অনেক দিন ধরিষা কোন একটি কােজ অভ্যাস করিয়াছে, তাহাকেই শিক্ষিত বলিতেছি। যদি কাঁসারীকে ঘটি গড়িতে না দিয়া, তাঁতিকে কাপড় বনিতে না দিয়া, পাঁচজন মাটি কাটা মজরকে দিয়া ঘটি গড়ান, বা বস্ত্র বানান ভাল না হয়, তবে যে বিচারকায্য শিল্পকম্পমাপেক্ষা শতগণে কঠিন, তাহতেই কি কেবল শিক্ষিতাপেক্ষা অশিক্ষিতের কায্য ভাল ? অনেকে বলেন, এক জন বিচারকের উপর নিভাির করিলে ভুলের সম্ভাবনা, অতএব এক জন জজের অপেক্ষা পাঁচ জন জারির বিচার ভাল। ইহা বলিলে বলিতে হয় যে, একজন নিউটন অপেক্ষা পাঁচ জন পাঠশালার গর গণনায় ভাল, এক জন হক্সলী অপেক্ষা পাঁচটি নোটিব ডাক্তার শারীরতত্ত্বে ভাল, এক জন কালিদাস অপেক্ষা বাঙ্গালা সম্পবাদপত্রের পাঁচ জন পত্রিপ্রেরক কবিত্বে ভাল। আমাদিগের সংস্কার আছে যে, যাহা বিলাতী তাহাই ভাল, বিলাতে জরির প্রথা প্রচলিত আছে, সতরাং আমাদের দেশেও ঠিক সেই জরির বিচার চালাইতে হইবে! এরপ কুসংস্কারবিশিষ্ট লোকে জানেন না যে, ইংলন্ডে যখন বিচারকেরা পক্ষপাতী ছিলেন, ধনীর বশীভুত হইয়া দীনের অন্যায়। দন্ড করিতেন তখন দীনের রক্ষাৰ্থ দীনের দ্বারা দীনের বিচার, ধনীর দ্বারা ধনীর বিচার, সমানের দ্বারা সমানের বিচার, এই প্রথা সন্ট হইয়াছিল। এইক্ষণে ইংলন্ডে সে অবস্থা নাই, কিন্তু ইংলন্ডের ন্যায় দেশাচার প্রিয় দেশে দেশাচার শীঘ্ৰ লোপ পায় না বলিয়াই উহা অদ্যাপি চলিতেছে। এবং কতকগলি অন্যাকরণভক্ত দেশেও গহীত হইয়াছে। এক্ষণে ইংলন্ডীয় কৃতবিদ্য চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ জরির বিচারের প্রথার বিরোধী হইয়া দাঁড়াইতেছেন। ভারতবর্ষ, বিশেষ প্রকারে জবির বিচার প্রথার হইতে প্রায় খালাস পাইয়া আসিতেছে-হগলীতে নবীনের বিচার ইহার একটি জাতজবল্যমান প্রমাণ। এই ঘোর অবিচার নিবারণের জন্যই সর জজ কাবেল জরির আইনের কিঞ্চিৎ পরিবত্তন করাইয়াছেন। সে জন্য তাঁহার নিন্দা না করিয়া তাঁহাকে ধন্যবাদ করিতে হয়। তিনি ষে জারির প্রথায় একেবারে উচ্ছেদ করেন নাই, ইহাতেই আমরা দঃখিত। কাৰ্য্যবিধি আইন সম্পবন্ধে আর একটি কথা আমাদিগের বলিতে বাকি আছে। ব্রিটিশভারতবষীয় রাজ্যে সৰবাপেক্ষা তিমিরময় কলঙ্ক-দেশী বিদেশীতে বিচারাগারে বৈষম্য। দেশীর জন্য এক আইন আদালত-সাহেবের জন্য ভিন্ন আইন আদালত। এই লক্ষজাকার কলঙ্ক মেকলে হইতে লরেন্স পৰ্য্যন্ত অনেকে অপনীত করিতে চেন্টা করিয়াছিলেন-কেহ শক্ত হয়েন নাই। সারা জজ কোনোেবল হইতে সেই কাৰ্য্য কিয়দংশে সিদ্ধ হইতেছে। এ বিষয়ে তিনি দেশীয় লোকের পরম বন্ধর কায্য করিয়াছিলেন। অন্য কেহ করিলে, এত দিন তাঁহার bf'NR