পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कभडकास्ट সত্ৰীজাতি ও গোজাতির মনের কথা কি প্রকারে বলিব ? কিন্তু আমি ভাবিলাম, আমিই তাহার উভয় শঙ্গের একমাত্র লক্ষ্য। তখন আমি কটিদেশ দঢ়তর বদ্ধ করিয়া, সদপে বদ্ধপরিকর হইয়া, উদ্ধবশ্বাসে পলায়নমান! পশ্চাতে সেই ভীষণা ঘটে।াধী রাক্ষসী! আমিও যত দৌড়াই, সেও তত দৌড়ায়। কাজেই, দৌড়ের চোটে ওচট খাইয়া, গড়াইতে গড়াইতে গড়াইতে, চন্দ্রসায্য গ্ৰহনক্ষত্রের ন্যায় গড়াইতে গড়াইতে গড়াইতে-বিবরলোক প্রাপ্তি! “আল, থাল কেশপাশ, মাখে না বহিছে শ্বাস”-হায়! তখন কি আমার হৃদয়-আকাশমধ্যে Public spirit রােপ পণচন্দ্রের উদয় হইয়াছিল ? না হইয়াছিল। এমত নহে। তখন আমি সিদ্ধান্ত করিয়াছিলাম যে, বসন্ধরা যদি গোশন্যা হয়েন, আর নারিকেল, তাল, খডজর প্রভৃতি ব্যক্ষ হইতে দন্ধনিঃসরণ হয়, তবে এই দন্ধপোষ্য বাঙ্গালিজাতির বিশেষ উপকার হয়। তাহারা শােঙ্গভীতিশান্য হইয়া দন্ধ পান করিতে থাকে। সে দিন সেই বিবরপ্রাপ্তি হেতু আমার পরহিতকামনা এত দ্যর প্রবল হইয়াছিল যে, আমি ' প্রসন্নকে সময়ান্তরে বলিয়াছিলাম, “অয়ি দধিদন্ধক্ষীরনবনীত-পরিবেষ্টিতা গোপকন্যে! তুমি গোর গলি বিক্রয় করিয়া স্বয়ং লাউ ভুসি খাইতে থােক, তুমি স্বয়ং ঘটােধী হইয়া ব্যহােতর দন্ধপোষ্য প্রতিপালন করিতে পরিবে,-কাহাকেও গতাইও না।” প্রত্যুত্তরে প্রসন্ন হঠাৎ সমাজজনী হন্তে গ্রহণ করায়, সে দিন আমাকে পরহিতৱত পরিত্যাগ করিতে হইয়াছিল। অতএব পরহিতেচ্ছা, দেশবাৎসল্য “সাধারণ আত্মা" অর্থাৎ Public spirit, বিশেষতঃ কাৰ্য্যদক্ষতা, এ সকল খানায় পড়িলে হয় কি না ? যদি না হয়, তবে ঢেকির এ কায্যদক্ষতা, এ মহাবল কোথা হইতে আসিল ? আমি এই কটতকের মীমাংসার জন্য সন্দিহানচিত্তে ভাবিতেছিলাম, এমত সময়ে মধ্য রকণ্ঠে কে বলিল, “চক্ৰবত্তীর্ণ মহাশয়! হাঁ করিয়া কি ভাবিতেছ? ঢেকি কখনও দেখা নাই ?” চাহিয়া দেখিলাম, তরঙ্গিণী মাতঙ্গিনী দই ভগিনী। ঢেকিতে পাড় দিতেছে। সে দিকে এতক্ষণ চাহিয়া দেখি নাই। হাতী দেখিতে গিয়া অন্ধ কেবল শািন্ড দেখিয়াছিল, আমিও ঢেকি দেখিতে গিয়া কেবল ঢেকির শািড় দেখিতেছিলাম। পিছনে যে দাই জনের দইখানি রাঙ্গা পা হুকুর সুপড়িতেছে, তাহা দেখিয়াও দেখি নাই! দেখিবামাহ যেন কে আমার চােখের মলি খালিয়া আমার দিব্য জ্ঞানের উদয় হইল-কাৰ্য্যকারণসম্প্ৰবন্ধপরম্পরা আমার চক্ষে প্রখর সমযকিরণে প্রভাসিত হইল। ঐ ত ঢেকির বল!-ঐ ত ঢেকির মাহীত্ব্যের মািল কারণ!-ঐ রমণীপাদপদ্ম! ধপাধপ পাদপদ্ম পিঠে পড়িতেছে, আর ঢেকি ধান ভানিয়া চাল করিতেছে। উঠিয়া পড়িয়াঢক ঢক কচ কচ! কত পরোপকারই করিতেছে! হায় ঢেকি! ও পায়ের কি এত গণ! পিঠে পাইয়া তুমি এই সাত কোটি বাঙ্গালিকে অন্ন দিতেছ—তার উপর আবার দেবতার ভোগ দিতেছা! এস, মেয়েমানষের শ্ৰীচরণ! তুমি ভাল করিয়া ঢেকির পিঠে পড়, আমি কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ হইয়া তোমায়-হায়! কি করিব ?-কাঁসার মাল পরাই! আর ভাই, ঢেকির দল! তোমাদের বিদ্যা বদ্ধি বঝিয়াছি। যখনই পিঠে রমণীপাদপদ্ম ওরফে মেয়ে লাথি পড়ে, তখনই তোমরা ধান ভান-নিহিলে কেবল কাঠ-দারাময়-গাত্তে শািড় লকাইয়া, লেজ উচু করিয়া, ঢেকিশালে পড়িয়া থাক। বিদ্যার মধ্যে খানায় পড়া, আনন্দের মধ্যে “ধান্য”; পরিস্কারের মধ্যে সেই রাঙ্গা পা। আবার শনিতে পাই, তোমাদের একটি বিশেষ গণ আছে নাকি ?—ঘরে থাকিয়া নাকি মধ্যে মধ্যে কুমীর হও ? আর ভাই ঢেকি, আর একটা কথা জিজ্ঞাসা করি—মধ্যে মধ্যে সবগে যাওয়া হয়। শনিয়াছি, সত্য সত্যই কি সেখানে গিয়াও ধান ভানিতে হয় ? দেবতারা সকলে অমত খায়, পারিজাত লোফে, অপসরা লইয়া ক্রীড়া করে, মেঘে। চড়ে, বিদ্যুৎ ধরে, রতি রতিপতির সঙ্গে লকোচুরি খেলে-তুমি নাকি ততক্ষণ কেবল ঘেচর ঘেচর করিয়া ধান ভান ? ধন্য সাধ্য ভাই তোমার! ঢেকি কোন উত্তর দিল না, কেবলই ধান ভানে। রাগ করিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলামএকেবারে কমলাশ্রমে। কমলাশ্রমটা কি ? ননীবাব সম্প্রতি ধান ভানিতে গিয়াছেন। নিপ্রত্যাশী। নাপিতানী একখানি ভাঙ্গা চালা ঘর রাখিয়া উত্তরাধিকারি-বিরহিতা হইয়া সবগারোহণ করিয়াছে —ঘরখানির এমনি অবস্থা যে, আর কেহ তাহার কামনা করিল না-সতরাং আমি তাহাতে কমলা শ্রম করিয়াছি।--কেবল কমলাকান্তের আশ্রম নহে-সাক্ষাৎ কমলার আশ্রম। আমি সেইখানে চারপাইর উপর পড়িয়া আফিঙ্গ চড়াইলাম। তখন চক্ষ বজিয়া আসিল। জ্ঞাননেত্ৰ উদয় হইল। b)