পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ক্ষতি কি ? তুমি অনন্তকাল শান্যপথে ঘরিবে, আমি আর অলপ দিন ঘরিব মাত্র। পরে তোমার কপালে ছাইগলি দিয়া, যাঁর কাছে সকল জব্বালা জড়ায়, তাঁর কাছে গিয়া সকল জৰােলা জড়াইব! তবে, স্থির হইল এক প্রকার যে, বড় বয়সে পড়িয়াছি। এখন কৰ্ত্তব্য কি ? “পশ্চাশোদ্ধেৰ বনং ব্রজেৎ ?” এ কোন গন্ডমখের কথা। আবার বন কোথা ? এ বয়সে, এই অট্টালিকাময়ী লোকপণা আপণাসমাকুলা নগরীই বন। কেন না, হে বৰ্ষীয়ান পাঠক! তোমার আমার সঙ্গে আর ইহার মধ্যে কাহারও সহৃদয়তা নাই। বিপদকালে কেহ কেহ আসিয়া বলিতে পারে যে, “বড়া! তুমি অনেক দেখিয়াছ, এ বিপদে কি করিব বলিয়া দাও,-” কিন্তু, সম্পদাকালে কেহই বলিবে না, “বড়া! আজি আমার আনন্দের দিন, তুমি আসিয়া আমাদিগের উৎসব। বদ্ধি কর!” বরং আমোদ-আহমাদ কালে বলিবে, “দেখ ভাই, যেন বড়া বেটা জানিতে না পারে।” তবে আর অরণ্যের বাকি কি ? যেখানে আগে ভালবাসার প্রত্যাশা করিতে, এখন সেখানে তুমি কেবল ভয় বা ভক্তির পাত্র। পাপস্রোত বাড়াইতেছে, হয়ত, তোমারই দ্বেষক-তুমি কেবল কাঁদিয়া বলিতে পাের, “ইহাকে আমি কোলে পিঠে করিয়াছি।” তুমি যাহাকে কোলে বসাইয়া ক, খ, শিখাইয়াছিলে, সে হয়ত খন লব্ধপ্রতিস্ঠ পণ্ডিত, তোমার মােখাতা দেখিয়া মনে মনে উপহাস করে। যাহারই স্কুলের বেতন দিয়া তুমি মানষি করিয়াছিলে, সে হয়ত এখন তোমাকে টাকা ধারা দিয়া, তোমারই কাছে সােদ খায়। তুমি যাহাকে শিখাইতে, হয়ত সে তোমায় শিখাইতেছে। যে তোমার অগ্রাহ্য ছিল, তুমি আজি তার অগ্রাহ্য। আর অরণ্যের বাকি কি ? অন্তজগৎ ছাড়িয়া বহিজগতেও এইরপে দেখিবে। যেখানে তুমি সর্বহস্তে পক্ষেপাদ্যান নিম্পমাণ করিয়াছিলে-বাছিয়া বাছিয়া গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, বিশ্লোনিয়া, সাইপ্রেস, অরকেরিয়া আনিয়া পতিয়াছিলে, পাত্ৰহস্তে স্বয়ং জলসিঞ্চন করিয়াছিলে, সেখানে দেখিবে, ছোলা মটরের চাষ-হারাধন পোদ্য গামছা কাঁধে মোটা মোটা বলদ লইয়া, নিবিবাঘে লাঙ্গল দিতেছে--সে লাঙ্গলের ফােল তোমার হৃদয়মধ্যে প্রবেশ করিতেছে। যে অট্টালিকা তুমি যৌবনে, অনেক সাধ মনে মনে রাখিয়া, অনেক সাধ পরাইয়া যত্নে নিম্পমাণ করিয়াছিলে, যাহাতে পােলণ্ডক পাড়িয়া নয়নে নয়নে অধরে অধরে মিলাইয়া ইহ-জীবনের অনশ্বর প্রণয়ের প্রথম পবিত্র সম্ভাষণ করিয়াছিলে, হয়ত দেখিবে, সে গাহের ইস্টকসকল দাম ঘোষের আস্তাবলের সরকির জন্য চণ্য হইতেছে ; সে পালঙ্কের ভগ্নাংশ লইয়া কৈলাসীর মা পাচিক ভাতের হাঁড়িতে জবাল দিতেছে- আর অরণ্যের বাকি কি ? সকল জব্বালার উপর জবালা, আমি সেই যৌবনে যাহাকে সন্দর দেখিয়াছিলামএখন সে কুৎসিত। আমার প্ৰিয়বন্ধ" দাস মিত্র, যৌবনের রাপে সফীতকন্ঠ কপোতের ন্যায় সগবেব বেড়াইত-কত মাগী গঙ্গার ঘাটে, স্নানকালে তাহাকে দেখিয়া নমঃ শিবায় নমঃ বলিয়া ফলে দিত, “দাস, মিত্রায় নমঃ"। বলিয়া ফল দিয়াছে। এখন সেই দাস মিত্ৰ শম্বককণ্ঠ, পালিতকেশ, দন্তহীন, লোলচন্ম শীর্ণকায়। দাসর একটা ব্ৰাশিড আর তিনটা মরোগী জলপানের মধ্যে ছিল,-“এখন দাস নামাবলীর ভয়ে কাতর, পাতে মাছের ঝোল দিলে, পাত মাছিয়া ফেলে। আর অরণ্যের বাকি কি ? গদার মাকে দেখ। যখন আমার সেই পক্ষেপাদ্যানে, তরঙ্গিণী নামে যাবতী ফল চুরি করিতে তাহার অলীকদম লইয়া উদ্যান-বায় ক্রীড়া করিত, তাহার অঞ্চলে কাঁটা বিধিয়া দিয়া, গোলাপ গাছ রসকেলি করিত। আর আজি গদার মাকে দেখ। বকবিকি করিতে করিতে চাল ঝাড়িতেছে --মলিনবাসনা, বিকটদশনা, তীব্ররীসনা-দীঘঙ্গী, কৃষ্ণাঙ্গী, কৃশাঙ্গী, লোলচক্ষম, পালিতকেশ, শািকবাহ ককােশ-কণ্ঠ। এই সেই তরঙ্গিণী-আর অরণ্যের বাকি কি ? তবে স্থির, বনে যাওয়া হবে না। তবে কি করিব ? হিন্দীশাস্ত্রর বশবত্তীর্ণ হইয়া কালিদাসও সব্ব গণবান রঘগণের বাদ্ধক্যে মনিবত্তির ব্যবস্থা করিয়াছেন। আমি নিশ্চিত বলিতে পারিকালিদাস চল্লিশ পার হইয়া রাঘবংশ লিখেন নাই। তিনি যে রঘবংশ যৌবনে লিখিয়াছিলেন, St