পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুচিরাম গুড়ের জীবনচরি৷৩ প্ৰথম পরিচ্ছেদ মচিরাম গড় মহাশয় এই জগৎ পবিত্র করিবার জন্য, কোন শকে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, ইতিহাস তাহা লৈখে না। ইতিহাস এরপ অনেকপ্রকার বদমাইশি করিয়া থাকে। এ দেশে ইতিহাসের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না, নচেৎ উচিত ব্যবস্থা করা যাইত। যশোদা দেবীর গভে সাফলরাম গড়ের ঔরসে তাঁহার জন্ম। ইহা দঃখের বিষয় সন্দেহ নাই ; কেন-না, উচ্চবংশের কথা কিছই বলিতে পারা গেল না। তবে ইহা বলা যাইতে পারে যে, তিনি ব্রাহ্মণকুলোদ্ভব। গড় শনিয়া কেহ মনে না করেন যে, তিনি মিস্টবিশেষ হইতে ङन्तांशाच्छ्6ळन् । সাফলরাম গড় কৈবত্তের ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁহার নিবাস সাধভাষায় মোহনপল্লী, অপর ভাষায় মোনাপাড়া। মোহনপল্লী ওরফে মোনাপাড়ায় কেবল ঘর কতক কৈবৰ্ত্তের বাস। গড় মহাশয় মোনাপাড়ায় একমাত্র ব্রাহ্মণ-যেমন এক চন্দ্র রজনী আলোকময়ী করেন, যেমন এক সৰ্য্যেই দিনমণি, যেমন এক বাত্তাকুন্দগ্ধ গড় মহাশয়ের অন্নরাশির উপর শোভা করিতেন, তেমনি সাফলরাম এক ব্রাহ্মণ মোহনপল্লী উজজবল করিতেন। শ্ৰাদ্ধশান্তিতে কাঁচা পাকা কদলী, আতপ তন্ডুল এবং দক্ষিণা, ষাঠী মাকালের পজায়, অন্নপ্রাশনাদিতে নারিকেল নাড়, ছোলা, কলা আদি তাহার লাভ হইত। সতরাং যােজনক্রিয়ায় তাহার বিশেষ মনোযোগ ছিল। তাঁহারই ঐশ্বয্যের উক্তরািধকারী এবং তদজ্জত রপ্তাভােজনের হকদার হইয়া মচিরাম শভক্ষণে জন্মগ্রহণ রলেন । জন্মগ্রহণের পর মচিরাম দিনে দিনে বাড়িতে লাগিলেন। দেখিয়া যশোদা, সেটা বালকের অসাধারণ পৌরষের লক্ষণ বিবেচনা করিয়া, অতিশয় গৰ্ব্বান্বিতা হইলেন। যথাকালে মচিরামের অন্নপ্রাশন হইল। নামকরণ হইল মচিরাম। এত নগেন্দ্ৰ গজেন্দ্র চন্দ্ৰভূষণ বিধভূষণ থাকিতে তাঁহার মচিরাম নাম হইল কেন, তাহা আমি সবিশেষ জানি না, তবে দন্ট লোকে বলিত যে, যশোদা দেবীর যৌবনকালে কোন কালো-কালো কোঁকড়াচুল নধরশরীর মচিরাম দাস নামা ་་་་་་་་་་་་་ তাঁহার নয়নপথের পথিক হইয়াছিল, সেই অবধি মচিরাম নামটি যশোদার কাণে মন্ট লাগিতা। যাহাই হউক, যশোদা নাম রাখিলেন মচিরাম। নাম পাইয়া মচিরাম শমা দিনে দিনে বাড়িতে লাগিলেন। ক্ৰমে “মা”, “বাবা”, “দ”, “দে” ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করিতে শিখিলেন। তাহার অসাধারণ ধীশক্তির বলে মিছাকান্নায় এক বৎসর পার হইতে না হইতেই সপন্ডিত হইলেন। তিন বৎসর যাইতে না যাইতেই গােরভোজনে দোষ উপস্থিত হইল এবং পাঁচ বৎসর যাইতে না যাইতেই মহামতি মচিরাম মাকে পিতৃ উচ্চারণ করিতে এবং বােপকে শালা বলিতে পাঁচ বৎসরে সাফলরাম গড় মহাশয় কিছ গোলে পড়িলেন। যশোদা ঠাকুরাণীর সাধ, পাঁচ বৎসরে পত্রের হাতে খড়ি হয়। সব্বনাশ! সাফলরামের তিন পরিষের মধ্যে সে কাজ হয় নাই। মাগী বলে কি ? যে দিন কথা পড়িল, সে দিন সাফলরামের নিদ্রা হইল না। যমােনার জল উজান বহিতে পারে, তব, গহিণীর বাক্য নড়িতে পারে না। সতরাং সাফলরাম হাতে খড়ির উদ্যোগ দেখিতে লাগিলেন; কিন্তু দভাগ্যবশতঃ তিন ক্রোশের মধ্যে পাঠশালা বা গর, মহাশয় নাই। কে লেখাপড়া শিখাইবে ? সাফলরাম বিষন্নবদনে বিনীতভাবে যশোদা দেবীর শ্ৰীপাদপদ্মে এই সম্পবাদ-সানিবেদিত হইলেন। যশোদা বললেন, “ভাল, তুমি কেন আপনিই হাতে খড়ি দিয়া ক, খ শিখাও না।” সাফলরােম একটা মলান হইয়া বলিলেন, “হাঁ, তা আমি পারি, তবে কি জান, শিষ্যসেবক যজমানের জবালায়-আজি কি রান্না হইল ?” “অধঃপেতে মিন্সে-” এই বলিয়া পতিপত্রপ্রাণা যশোদা দেবী বিষন্নমনে সজলনয়নে পাতিলেব দিয়া পান্তা ভাত খাইতে বসিলেন। 'F'". SSO マミーb