পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী মচিরাম আইসে নাই।-কেহ কেহ বলিল, তাহকে খাজিয়া আনিব ? অধিকারী মহাশয় গালি দিয়া বলিলেন, “জটিতে হয়, আপনি জাটবে, এখন আমি খাজে বেড়াতে পারি নে।” দয়ালচিত্ত বেহালাওয়ালা বলিল, “ছেলেমানষে—যদি নাই জটিতে পারে—আমি খাজে আনিব।” অধিকারী ধমকাইলেন-মনে মনে ইচ্ছা, মচিরামের হােত হইতে উদ্ধার পান, এবং সেই সঙ্গে তাহার পাওনা টাকাগলি ফাঁকি দেন। বেহালাওয়ালা ভাবিল-মচিরাম কোনরপে জটিবে। उग्राद्ध दिष्छा दर्शाळगाळ ना । যাত্রার দল চলিয়া গেল-মচিরাম জটিল না। রাত্ৰিজাগরণ-দেবালয়বরডে সে অকাতরে নিদ্রা যাইতেছিল। উঠিয়া দল চলিয়া গিয়াছে শনিয়া, কাঁদিতে আরম্ভ করিল। এমন বদ্ধি নাই যে, অধিকারী কোন পথে গিয়াছে, সন্ধান করিয়া সেই পথে যায়। কেবল কাঁদিতে লাগিল। পজারি বামন অনগ্ৰহ করিয়া বেলা তিন প্রহরে দাইটি ঠাকুরের প্রসাদ খাইতে দিল। খাইয়া, মচিরাম কান্নার দ্বিতীয় অধ্যায় আরম্ভ করিল। যত রাত্রি নিকট হইতে লাগিল, তত ভাবিতে লাগিল-আমি কেন পলাইলাম! আমি কেন দাঁড়াইয়া মারা খাইলাম না! গ্রন্থকার ভনে, এবার যখন বাঁক উঠিতে দেখিবে, পিঠি পাতিয়া দিও। তোমার গোষ্ঠীর বাপচৌদ্দীপরিষ বাড়া সেনরাজার আমল হইতে কেবল পিঠ পাতিয়া দিয়াই আসিতেছে। তুমি পলাইবে কোথায় ? এ সসভ্য জগতের অধিকারীরা মচিরাম দেখিলে বাঁকপোটাই করিয়া থাকে --মচিরামেরা পিঠ পাতিয়াই দেয়। কেহ পলায় না-রাখাল ছাড়া কি গোর থাকিতে পারে হে বাপ ? ঘাস জলের প্রয়োজন হইলেই, তোমাদের যখন রাখাল ভিন্ন উপায় নাই, তখন পাঁচনবাড়িকে প্ৰাতঃপ্ৰণাম করিয়া গোেজন্ম সাৰ্থক করা। চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ ঈশানবাব, একজন সৎকুলোদ্ভূত কায়স্থ। অতি ক্ষদ্র লোক-কেন না, বেতন এক শত টাকা মাত্র-কোন জেলার ফৌজদারী আপিসের হেড কেরাণী। বাঙ্গালাদেশে মনষ্যেত্ব বেতনের ওজনে “ত হয়-কে কত বড় বাঁদর, তার লেজ মাপিয়া ঠিক করিতে হয়। এমন অধঃপতন আর কখন কোন দেশের হয় নাই। বন্দী চরণ-শঙ্খলের দৈঘ্য দেখাইয়া বড়াই করে। ঈশানবাব ক্ষমাদ্র ব্যক্তি-ল্যাজ খাটো, বানরত্বে খাটো—কিন্তু মনষ্যত্বে নহে। যে গ্রামে হারাণ অধিকারী সেই অপব্ব মানভঞ্জন যাত্রা করিয়াছিলেন, ঈশানবাবরে সেই গ্রামে বাস। যাত্ৰাটা যে সময়ে হইয়াছিল, সে সময়ে তিনি ছটি লইয়া বাড়ীতে ছিলেন। যাত্রার ব্যাপার তিনি কিছ জানিতেন কি না বলিতে পারি না। যাত্রার পরদিন সন্ধ্যাকালে তিনি পথে বেড়াইতেছিলেন, দেখিলেন, একটি ছেলে—শকেশরীর, দীর্ঘকেশ—অনভিবে যাত্রার দলের ছেলে-পথে দাঁড়াইয়া কাঁদিতেছে! ঈশানবাব ছেলেটির হাত ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাঁদছিস কেন বাবা ?” ছেলে কথা কয় না। ঈশানবাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে ?” ছেলে বলিল, “আমি মচিরাম।” ঈশা। তুমি কাদের ছেলে ? মচি। বামনদের। ঈশা। কোন বামনদের ? মচি। আমি গড়েদের ছেলে। ঈশা। তোমার বাড়ী কোথায় ? মচি। আমাদের বাড়ী মোনাপাড়া। ঈশা। সে কোথা ? তা ত মচিরামের বিদ্যার মধ্যে নহে। যাই হোক, ঈশানবাব, অলপ সময়ে মচিরামের দীঘটনা বঝিয়া লইলেন। “তোমাকে বাড়ী পাঠাইয়া দিব” এই বলিয়া মচিরামকে আপনার বাড়ী লইয়া গেলেন। মচিরাম হাত বাড়াইয়া সবগ পাইল। ঈশানবাব, তাহার আহারাদি ও অবস্থিতির উত্তম ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। কিন্তু মোনাপাড়ার ত কোন ঠিকানা হইল না। সতরাং মচিরাম ঈশানবাবরে গহে বাস SSR,