পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মচিরাম গড়ের জীবনচরিত করিতে লাগিল। সেখানে আহার পরিচ্ছেদের ব্যবস্থা উত্তম, এবং কাণমলার অত্যন্তাভাব, দেখিয়া মচিরাম বাড়ীর জন্য বিশেষ ব্যস্ত হইল না। এদিকে ঈশানবাবরে ছটি ফরাইল-সপরিবারে কৰ্ম্মস্থানে যাইবেন। অগত্যা মচিরামও সঙ্গে চলিল। কৰ্ম্মস্থানে গিয়াও ঈশান মোনাপাড়ার অন্যসন্ধান করিলেন, কিন্তু কোন সন্ধান পাইলেন না। অগত্যা মচিরাম তাঁহার গলায় পড়িল। মচিরামও, যেখানে আহারের ব্যবস্থা উত্তম, সেখানে গলায় পড়িতে নারাজ নহে—তবে ঈশানবাবরে একটা ব্যবস্থা মচিরামের বড় ভাল লাগিল না। ঈশানবাব বলিলেন, “বাপ, যদি গলায় পড়িলে, তবে একটা লেখা পড়া শিখিতে হইবে।” ঈশানবাব, তাহাকে পাঠশালায় পাঠাইয়া দিলেন। এখানে মচিরামের মা অনেক দিন হইতে ছেলের কোন সম্পবাদ না পাইয়া, পাড়ায় পাড়ায় বিস্তর কাঁদাকাটি করিয়া বেড়াইয়া, শেষ আহার-নিদ্রা ত্যাগ করিল। আহার-নিদ্ৰা ত্যাগ করিয়া রািগ্ন হইল। রািগ্ন হইয়া মরিয়া গেল। পণ8ম পরিচ্ছেদ এদিকে, যশোদানন্দন শ্ৰীশ্ৰীমচিরাম শৰ্মা-ঈশানমন্দিরে সবিরাজমান-সম্পণেরপে মাতৃবিস্মত। যদি কখন মাকে মনে পড়িত, তবে সে আহারের সময়-ঈশানমাবার ঘরের প্রফুল্লমল্লিকাসক্লিাভ সিদ্ধান্ন, দানাদার গব্য ঘাত, সগন্ধি ঝোলে নিমগ্ন রোহিতমৎস্য, পথিবীর ন্যায় নিটোল গোলাকার সদ্যভডিজত লাচির রাশি-এই সকল পাতে পাইলে মচিরাম মনে করিতেন, “মা বেটী! কি ছাই-ই আমাকে খাওয়াইত!” সে সময়ে মাকে মনে পড়িত-অন্য সময়ে নহে। মচিরামের পাঠশালার লেখা পড়া সমাপ্ত হইল-আর্থাৎ গর, মহাশয় বলিল, সমাপ্ত হইয়াছে। মচিরামের কোন গণ ছিল না, এমত বলি না; তাহা হইলে এ ইতিহাস লিখিতে আমি প্রবত্ত হইতাম না। মচিরামের কন্ঠস্বর ভাল ছিল বলিয়াছি-গণে নম্বর এক। গণ নম্বর দই, তাহার হস্তাক্ষর অতি সন্দর হইল। আর কিছ হইল না। ঈশানবাব মচিরামকে ইংরেজি স্কুলে পাঠাইলেন। মচিরাম, ধেড়ে ছেলে, স্কুলে ঢকিয়া বড় বিপদগ্ৰস্ত হইল। মাস্টারেরা তামাসা করে, ছোট ছোট ছেলেরা খিলখিল করিয়া হাসে। মচিরাম রাগ করে, কিন্তু পড়ে না। সতরাং মাস্টারেরা হারাণ অধিকারীর পথে গেলেন। আবার কাণমলায় কাণমালায় মচিরামের কােণ রাঙ্গা হইয়া উঠিল। প্রথমে কাণমালা, তার পর বেত্ৰাঘাত, মন্ট্যাঘাত, চপেটাঘাত, কীলাঘাত, এবং ঘাসাঘাত। ঈশানবাবরে ঘরের তপ্ত লাচির জোরে মচিরাম নিবিবাদে সব হজম করিল। এইরূপে মচিরাম, তপ্ত লাচি ও বেত খাইয়া, স্কুলে পাঁচসাত বৎসর কাটাইল। কিছ: হইল না। ঈশানবাব, তাহাকে স্কুল হইতে ছাড়াইয়া লইলেন। ঈশানবাবর দয়ার শেষ নাইমাজিস্ট্রেট সাহেবের কাছে তাঁহার বিশেষ প্রতিপত্তি-মচিরামের হাতের লেখাও ভালঈশানবাব মচিরামের একটি দশ টাকার মহরিাগিরি করিয়া দিলেন। বলিয়া দিলেন, “ঘাসঘাস লাইও না বাপ, তা হলে তাড়াইয়া দিব।” মচিরাম শৰ্ম্মমা প্রথম দিনেই একটা হকুমের চোরাও নকল দিয়া আট গণডো পয়সা হাত করিলেন, এবং সন্ধ্যার অলপকাল পরেই তাহা প্রতিবাসিনী বিশেষের পাদপদ্মে উৎসগা করিলেন। এদিকে ঈশানবাবও প্রাচীন হইয়া আসিয়াছিলেন। তিনি ইহার পরেই পেন্সন লইয়া । স্বকৰ্ম্মম হইতে অবসতি হইলেন এবং মচিরামকে পথক বাসা করিয়া দিয়া সপরিবারে সবদেশে প্রস্থান করিলেন। মচিরাম ঈশানবাবকে একটা ভয় কারিত-এক্ষণে তাহার পোয়া বারো পড়িয়া গেল । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ পোয়া বারো-মচিরাম জেলা লাঠিতে লাগিল। প্রথমে লোকের কাছে চাহিয়া চিন্তিয়া দাই চারি। আনা লাইত। তার পর দাঁও শিথিল। ফেল, সেখের ধানগালি জমীদার জোর করিয়া কাটিয়া লইতে উদ্যত, সাহেব দয়া করিয়া পলিশকে হকুম দিলেন, ফেলার সম্পত্তি রক্ষা করিবে। NSNA