পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী মসরি শাকোণাক বলেন, “সর উইলিয়ম হশেলের আকাশসন্ধান এবং রাশিচক্রের চিত্রাদি দেখিয়া, বেসেলের কৃত কটিবন্ধ সকলের তালিকার ভূমিকাতে যেরপে গড়পড়তা করা আছে, তৎসম্পবন্ধে উইসের কৃত নিয়মাবলম্বন করিয়া আমি ইহা গণনা করিয়াছি যে, সমদায় আকাশে সাত কোটি সত্তর লক্ষ নক্ষত্র আছে।” এই সকল সংখ্যা শনিলে হতবদ্ধি হইতে হয়। যেখানে আকাশে তিন হাজার নক্ষত্ৰ দেখিয়া আমরা অসংখ্য নক্ষত্র বিবেচনা করি, সেখানে সাত কোটি সপ্ততি লক্ষের কথা দরে থাকুক, দই কোটিই কি ভয়ানক ব্যাপার। কিন্তু ইহাতে আকাশের নক্ষত্রসংখ্যার শেষ হইল না। দরবীক্ষণের সাহায্যে গগনাভ্যন্তরে কতকগলি ক্ষদ্র ধামাকার পদাৰ্থ দাম্পট হয়। উহাদিগকে নীহারিকা নাম প্রদত্ত হইয়াছে। যে সকল দরবীক্ষণ অত্যন্ত শক্তিশালী, তাহার সাহায্যে এক্ষণে দেখা গিয়াছে যে, বহসংখ্যক নীহারিকা কেবল নক্ষত্ৰপঞ্জ। অনেক জ্যোতিবিদ বলেন, যে সকল নক্ষত্র আমরা শািন্ধ চক্ষে বা দরবীক্ষণ দ্বারা গগনে বিকীর্ণ দেখিতে পাই, তৎসমদায় একটি মাত্র নাক্ষত্রিক জগৎ । অসংখ্য নক্ষত্রময় ছায়াপথ এই নাক্ষত্রিক বিশ্বের অন্তর্গত। এমন অন্যান্য নাক্ষত্রিক জগৎ আছে। এই সকল দর-দটি তারাপঞ্জাময়ী নীহারিকা স্বতন্ত্র স্বতন্ত্ৰ নাক্ষত্রিক জগৎ। সমদ্রতীরে যেমন বালি, বনে যেমন পাতা, একটি নীহারিকাতে নক্ষত্রেরাশি তেমনি অসংখ্য এবং ঘনবিন্যস্ত। এই সকল নীহারিকান্তগত নক্ষত্রসংখ্যা ধরিলে সাত কোটি সত্তর লক্ষ কোথায় ভাসিয়া যায়। কোটি কোটি নক্ষত্র আকাশমন্ডলে বিচরণ করিতেছে বলিলে অত্যুক্তি হয় না। এই আশ্চৰ্য্য ব্যাপার ভাবিতে ভাবিতে মনষ্যবিদ্ধি চিন্তায় অশক্ত হইয়া উঠে। চিত্ত বিস্ময়বিহবল হইয়া যায়। সব্বত্ৰগামিনী মনষ্যেবদ্ধিরও গগনসীমা দেখিয়া চিত্ত নিরস্ত হয়। এই কোটি কোটি নক্ষত্র সকলই সােয্য। আমরা যে এক সৰ্যকে সৰ্য্যে বলি, সে কত বড় প্রকাশড বস্তু, তাহা সৌরবিপ্লব সম্প্ৰবন্ধীয় প্রস্তাবে বর্ণিত হইয়াছে। ইহা পথিবী অপেক্ষা ব্ৰয়োদশ লক্ষ গণ বহৎ । নাক্ষত্রিক জগৎমধ্যস্থ অনেকগলি নক্ষত্র যে, এ সময্যাপেক্ষাও বহৎ, তাহা এক প্রকার স্থির হইয়াছে। এমন কি, সিরিয়াস (Sirius) নামে নক্ষত্র এই সায্যের ২৬৬৮ গণে বহৎ, ইহা স্থির হইয়াছে। কোন কোন নক্ষত্র যে, এ সময্যাপেক্ষা আকারে কিছ ক্ষদ্রতর, তাহাও গণনা দ্বারা স্থির হইয়াছে। এইরপে ছোট বড় মহাভয়ঙ্কর আকারবিশিষ্ট, মহাভয়ঙ্কর তেজোময় কোটি কোটি সােয্য অনন্ত আকাশে বিচরণ করিতেছে। যেমন আমাদিগের সৌরজগতের মধ্যবত্তীর্ণ সােয্যকে ঘেরিয়া গ্ৰহ উপগ্রহাদি বিচরণ করিতেছে, তেমনি ঐ সকল সােয্যপাশ্বে গ্রহ উপগ্রহাদি ভ্ৰমিতেছে, সন্দেহ নাই। তবে জগতে জগতে কত কোটি কোটি সােয্য, কত কোটি কোটি পথিবী, তাহা কে ভাবিয়া উঠিতে পারে? এ আশ্চৰ্য্য কথা কে বদ্ধিতে ধারণা করিতে পারে? যেমন পথিবীর মধ্যে এক কণা বালকা, জগৎমধ্যে এই সসাগরা পথিবী তদপেক্ষাও সামান্য, রেণমাত্র-বালিকার বালকাও নহে। তদপরি মনষ্য কি সামান্য জীব! এ কথা ভাবিয়া কে আর আপন মনষ্যেত্ব লইয়া গব্ব করিবে ? शब्जा ধলার মত সামান্য পদাৰ্থ আর সংসারে নাই। কিন্তু আচাৰ্য্য টিন্ডল ধলা সম্পবন্ধে একটি দীঘ প্রস্তাব লিখিয়াছেন। আচায্যের ঐ প্রবন্ধটি দীঘ এবং দরহ, তাহা সংক্ষেপে এবং সহজে বাঝান অতি কঠিন কম্পম। আমরা কেবল টিন্ডল সাহেবকৃত সিদ্ধান্তগলিই এ প্রবন্ধে সন্নিবুদ্ধ করব, যিনি তাঁহার প্রমাণ জিজ্ঞান হইবেন, তাহকে আচার্যের প্রবন্ধ পাঠ করতে ১। ধলা, এই পথিবীতলে এক প্রকার সম্পূর্বব্যাপী। আমরা যাহা পরিস্কার করিয়া রাখি না কেন, তাহা মহত্ত জন্য ধলা ছাড়া নহে। যত “বাবগিরি” করি না কেন, কিছতেই ধলা হইতে নিস্কৃতি নাই। যে বায় অত্যন্ত পরিস্কার বিবেচনা করি, তাহাও ধলোয় পািণ। সচরাচর ছায়ামধ্যে কোন রন্থ্র-নিপতিত রৌদ্ৰে দেখিতে পাই, যে বায় পরিস্কার দেখাইতেছিল, তাহাতেও ধলা চিকচিক করিতেছে। সচরাচর বায়, যে এরপে ধলাপািণ, তাহা জানিবার জন্য আচাৰ্য)। টিন্ডলের উপদেশের আবশ্যকতা নাই, সকলেই তাহা জানে। কিন্তু বায় ছাঁকা যায়। ●●8