পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মস্তিকম রচনাবলী কেবল গতির রোধ মাত্র। যাহা গতিবিশিষ্ট; কারণবশতঃ তাহার গতির রোধ হইলে, তাহার অবস্থাকে আমরা স্থিরতা বা স্থিতি বলি। যে শিলাখণড বা আটালিকাকে অচল বিবেচনা করিতেছি, বাস্তবিক তাহা মাধ্যাকুর্ষণের বলে গতিবিশিষ্ট; নিম্নস্থ ভূমি তাহার গতি রোধ করিতেছে বলিয়া, তাহাকে স্থির বলিতেছি। এ স্থিরতাও কালপনিক ; পথিবীতলস্থ অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে তুলনা করিয়া বলিতেছি যে, এই পৰবত বা এই অট্টালিকা আচল, গতিশন্য-বস্তৃতঃ উহার কেহই আচল বা গতিশন্য নহে, পথিবীর উপরে থাকিয়া উহা পথিবীর সঙ্গে আবৰ্ত্তন করিতেছে। সক্ষম বিবেচনা করিতে গেলে জগতে কিছ গতিশন্য নহে। কিন্তু সে কথা ছাড়িয়া দেওয়া যাক। যাহা পথিবীর গতিতে গতিবিশিষ্ট, তাহাকে চঞ্চল বলিবার প্রয়োজন করে না। তথাপিও পথিবীতে এমত কোন বস্তু নাই, যে মহত্ত জন্য স্থির। চারি পাশ্বে চাহিয়া দেখ, বায় বহিতেছে, বক্ষপত্ৰসকল নাচিতেছে, জল চলিতেছে, জীবসকল নিজ নিজ প্রয়োজন সম্পাদনাৰ্থ বিচরণ করিতেছে। পরন্তু ইহার মধ্যেও কোন কোন বস্তু গতিশন্য দেখা যাইতেছে। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণে বা অন্য প্রকারে রদ্ধ বাহ্যিক গতি ভিন্ন, ঐ সকল বস্তুর অন্য গতি আছে। সেই সকল গতি আভ্যন্তরিক। বস্তৃমাত্রেরই কিয়ৎপরিমাণে তাপ আছে। যাহাকে শীতল বলি, তাহা বস্তুতঃ তাপশান্য নহে। তাপের অলপতাকেই শীতলতা বলি, তাপের অভাব কিছতেই নাই। যে তুষারখন্ডের সম্পর্শে অঙ্গচ্ছেদের ক্লেশানভব করিতে হয়, তাহাতেও তাপের অভাব নাই—অলপতা মাত্র। যাহাকে তাপ বলি, তাহা পরমাণগণের আন্দোলন মাত্র। কোন বস্তুর পরমাণ সকল পরস্পরের দ্বারা আকৃষ্ট এবং সন্তাড়িত হইলে, তাহা তরঙ্গবৎ আন্দোলিত হইতে থাকে। সেই ক্ৰিয়াই তাপ। যেখানে সকল বস্তুই তাপযক্তি, সেখানে সকল বস্তুর পরমাণই অহরহ পরস্পর কর্তৃক আকৃস্ট, সন্তাড়িত এবং সঞ্চালিত। অতএব পথিবীস্থ সকল বস্তুই আভ্যন্তরিক গতিবিশিস্ট। আলোক সম্পবন্ধেও সেই কথা। ইথর নামক বিশ্বব্যাপী আকাশীয় তরল পদার্থের পরমাণসমন্টির তরঙ্গবৎ আন্দোলনই আলোক। সেই গতিবিশিষ্ট পরমাণসকলের সঙ্গে নয়নেন্দ্ৰিয়ের সংস্পশোঁ আলোক অনভূত হয়। সেই প্রকার তাপীয় তরঙ্গ সহিত ত্বগিনিন্দ্রয়ের সংস্পশে তা অনভূত করি। এই সকল আন্দোলন-ক্রিয়া মনতুষ্যের দন্টির অগোচর—উহা তাপরাপে এবং আলোকরূপেই আমরা ইন্দ্ৰিয় কর্তৃক গ্রহণ করিতে পারি-অন্য রােপ নহে। তবে এই আন্দোলনক্রিয়ার অস্তিত্ব স্বীকার করিবার কারণ কি ? ইউরোপীয় বিজ্ঞানবিদেরা তাহা সস্বীকার করিবার বিশেষ কারণ নিন্দেশ করিয়াছেন, কিন্তু তাহা এস্থলে বর্ণনীয় নহে। পথিবীতলে আলোক সন্মবািত্ৰ দেখিতে পাই। অতি অন্ধকার অমাবস্যার রাত্রে পথিবীতল একেবারে আলোকশন্য নহে। অতএব সব্বত্রই সব্বদা আলোকীয় আন্দোলনের গতি বত্তমান। বিজ্ঞানবিদেরা প্ৰতিপন্ন করিয়াছেন যে, আলোক, তাপ এবং মাধ্যাকর্ষণ, তিনটিই পরমােণর গতি মাত্র। অতএব পথিবীর সকল বস্তুই আভ্যন্তরিক গতিবিশিস্ট। যৌগিক আকর্ষণের বলে। সেই সকল গতি সত্ত্বেও কোন বস্তুর পরমাণ সকল বিস্রস্ত বা পথগভূত হয় না। পথিবীতলে এইরপ। তারপর, পথিবীর বাহিরে কি ? পথিবী স্বয়ং অত্যন্ত প্রখর বেগবিশিষ্টা এবং অনন্তকাল আকাশমাগে ধাবমানা। অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ প্রভৃতি যাহা সৌর জগতের অন্তগত, তাহাও পথিবীর মত অবস্থাপন্ন সন্দেহ নাই। সেই সকল গ্রহ উপগ্রহে যে সকল পদাৰ্থ আছে, তাহাও পার্থিব পদার্থের ন্যায় সৰ্ব্বদা বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরিক গতিবিশিষ্ট। জ্যোতিবিদগণের দৌরবীক্ষণিক অন্যাসন্ধানে সে কথার অনেক প্রমাণ সংগহীত হইয়াছে। সােয্য নামে যে বহৎ বস্তু এই সৌর জগতের কেন্দ্রীভুত, তাহা যেরূপ চাণ্ডল্যপণে, তাহা মনষ্যের অন্যভবশক্তির অতীত। যে সৰ্য্যেমন্ডলের তাপ, আলোক, আকর্ষণ এবং বৈদ্যুতাদিকী শক্তি পথিবীস্থ গতিমাত্রেরই কারণ, সেই সােয্যমণ্ডলোপরে বা তদভ্যন্তরে যে নানাবিধ ভয়ঙ্কর এবং অদ্ভুত গতি নিয়ত বত্তিবে, তাহা বলা বাহুল্য। সেই চাঞ্চল্যের একটি উদাহরণ “আশ্চৰ্য্য সৌরোৎপাত” নামক প্রস্তাবে বাণিত হইয়াছিল। কিন্তু সৰ্যোপরে এবং সােযাগকেভ যে নিয়ত গতির আধিপত্য, কেবল ইহাই নহে; সােয্য স্বয়ং গতিবিশিষ্ট। বিজ্ঞানবিদেরা স্থির করিয়াছেন যে, সায্য স্বয়ং এই তাবৎ সৌর জগৎ সঙ্গে লইয়া প্রতি সেকেন্ডে ৪৭০ মাইল অৰ্থাৎ ঘণ্টায় ১৭,১oo মাইল আকাশ-পথে ধাবিত হইতেছে। S8R