পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vela ২। স্তরপরম্পরা সাময়িক সর্বন্ধবিশিষ্ট। যে স্তরটি নিম্পেন, সেটি আগে, যেটি তাহার উপরে, সেটি তাহার পরে হইয়াছে। ৩। যে স্তরে যে জীবের ফসিল অস্থি পাওয়া যায়, সেই স্তর যখন শক ভূমি বা জলতল ছিল, তখন সেই জীব বৰ্ত্তমান ছিল। যদি কোন স্তরে কোন জীববিশেষের ফসিল একবারে পাওয়া না যায়, তবে সেই স্তর সজনীকালে সেই জীব ছিল না। ৪ । যদি কোন স্তরে কী নামক জীবের ফসিল পাওয়া যায়, খ নামক জীবের ফসিল পাওয়া যায় না; তাহার উপরিস্থ কোন স্তরে যদি ঐ খ নামক জীবের ফসিল পাওয়া যায়, তবে সিদ্ধ হইতেছে, খ নামক জন্তু কি নামক জন্তুর পরে সন্ট। সব্বনিম্নস্থ স্তরত্বশান্য প্রস্তরে কোন ফসিল ছিল না। অতএব সিদ্ধ হইতেছে যে, পথিবীর প্রথম ভূমিতে কোন জীব বিচরণ করে নাই। তখন পথিবী জীবাশন্যে ছিল। যখন প্রথম স্তরমধ্যে জীবদেহের ফসিল দেখা যায়, তখন মনষ্যের অবস্থানের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। মনষ্যে দরে থাকুক, বহৎ বা ক্ষদ্র চতুষ্পপদ জন্তুর ফসিল পাওয়া যায় না। মৎস্য বা সরীসাপের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। যে সকল ক্ষদ্র কীটা দিবৎ জীবের দেহাবশেষ পাওয়া যায়, তন্মধ্যে শবকেই সব্বোৎকৃস্ট। অতএব আদিম জীবলোকে শাস্তবকেরা প্ৰভু ছিল। তৎপরে মৎস্য দেখা দিল। ক্রমে উপরে উঠিতে সরীসােপ জাতীয়ের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। পািব্বকালীয় সরীসােপ অতি ভয়ঙ্কর, তােদশ বিচিত্র, বহৎ এবং ভয়ঙ্কর সরীসাপ এক্ষণে পথিবীতে নাই। সরীসাপের রাজ্যের পরে, স্তন্যপায়ী জীবের দেখা পাওয়া যায়। ক্রমে নানাবিধ হস্তী, ঋক্ষ, গন্ডার, সিংহ, হরিণ জাতীয় প্রভৃতি দেখা যায়, তথাপি মনষ্যে দেখা যায় না। মনষ্যের চিহ্ন কেবল সব্বোদ্ধব স্তরে, অর্থাৎ আধনিক মাত্তিকায়। তন্নিন্নস্থ অর্থাৎ দ্বিতীয় স্তরেও কদাচিৎ মনষ্যের চিহ্ন পাওয়া যায়। অতএব মনষ্যের সন্টি সব্বশেষে; মনষ্যে সব্বাপেক্ষা আধনিক জীব।* “আধনিক” শব্দে এ স্থলে কি বঝায়, তাহা বিবেচনা করিয়া দেখা উচিত। যে সকল স্তরের কথা বলিলাম, সেগলির সমবায়, পথিবীর ত্বকের সবরীপ। একটি স্তরের উৎপত্তি ও সমাপ্তিতে কত লক্ষ বৎসর, কত কোটি বৎসর লাগিয়াছে, তাহা কে বলিবে ? তাহা গণনা করিবার উপায় নাই। তবে কেবল ইহাই বলা যাইতে পারে যে, সে কাল অপরিমিত-বদ্ধির ধারণার অতীত। সব্বৌদ্ধ স্তরেই মনষ্যে-চিহ্ন, এই কথা বলিলে, এমত ব্যবস্নায় না যে, বহর সহস্ৰ বৎসর মনষ্যে পথিবীবাসী নহে। তবে পথিবীর বয়ঃক্রমের সঙ্গে তুলনা করিলে বোধ হয়, মনষ্যের উৎপত্তি এই মহত্তে হইয়াছে। এই জন্য মনীষাকে আধনিক জীব বলা যাইতেছে। মিসরদেশের রাজাবলীর যে সকল তালিকা প্রচলিত আছে, তাহাতে যদি বিশ্বাস করা যায়, তবে মিসরদেশে দশ সহস্ৰ বৎসরাবধি রাজশাসন প্রচলিত আছে। হোমর, খ্রীটের নয় শত বৎসর পর্ক্সেব পথিবীবিদিত মহাকাব্যদ্বয় রচনা করেন; ইহা সৰ্ব্বববাদিসক্ষমত। হোমরের গ্রন্থে মিসরের রাজধানী শতদ্বারবিশিষ্টা থিবস নগরীর মহিমা কীৰ্ত্তিত হইয়াছে। মনষ্যেজাতি সভ্যাবস্থায় একবার উন্নতির পথে পদাপািণ করিলে, উন্নতি শীঘ্র শীঘ্র লাভ করিয়া থাকে বটে। কিন্তু অসভ্যদিগের সম্ভবতঃসম্পন্ন যে উন্নতি, তাহা অচিন্তনীয় কাল বিলম্বে ঘটিয়া থাকে। ভারতীয় বন্য জাতিগণ চারি সহস্ৰ বৎসর সভ্য জাতির প্রতিবেশী হইয়াও বিশেষ কিছ উন্নতি লাভ করিতে পারে নাই। অতএব সহজে বঝিতে পারা যায় যে, মিসরদেশে সভ্যতা সম্ভবতঃ জন্মিয়া, যে কালে শতদ্বারবিশিষ্টা নগরী সংস্থাপনে সক্ষম হইয়াছিল, তাহার পরিমাণ বহাঁ সহস্ৰ বৎসর। মিসরাতত্ত্বজ্ঞেরা বলিয়া থাকেন যে, মেফিজ প্রভৃতি নগরী থিবস হইতে প্রাচীনা। এই সকল নগরীতে যে দেবালয়াদি অদ্যাপি বিত্তমান আছে, তাহাতে যাদ্ধজয়াদির উৎসবের প্রতিকৃতি আছে। সর জজ কণাওয়াল লাইস বলেন, ঐতিহাসিক সময়ে মিসরদেশীয়দিগকে কখন যাদ্ধাপরায়ণ দেখা যায় না। অথচ কোন কালে তাহারা যাদ্ধাপরায়ণ না থাকিলে, তন্নিশ্চিমত মন্দিরাদিতে যাদ্ধ জয়োৎসবের প্রতিকৃতি থাকিবার সম্ভাবনা ছিল না। অতএব বিবেচনা করিতে হইবে যে, ঐতিহাসিক কালের পকেবই মিসরদেশীয়েরা এত দীর উন্নতি লাভ করিয়াছিল যে, প্রকান্ড

  • এ কথায় এমত বৰঝায় না যে, মনয্যের পর কোন জীবের উৎপত্তি হয় নাই। বোধ হয় বিড়াল মনষ্যের কনিষ্ঠ।

১৪৭