পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞানগ্ন শস্য বায়কোষে বায় না গেলে প্ৰাণের ধবংস হয়, ইহাও স্বীকার করি। তেজঃ সম্পবন্ধে ইহা স্বীকার করিতে তোমাদের বৈশেষিকেরা যে জঠরাগ্নি কলপনা করিয়াছেন, তাহার অস্তিত্ব আমার লিবিগ অতি সকৌশলে প্রতিপন্ন করিয়াছেন। আর যদি সন্তাপকেই তেজঃ বল, তবে মানি যে, ইহা জীবদেহে অহরহঃ বিরাজ করে, ইহার লাঘব হইলে প্রাণের ধবংস হয়। সোডা পোতাস প্রভৃতি পথিবী বটে, তাহা অত্যলপ পরিমাণে শরীরমধ্যে আছে। আর আকাশ ছাড়া কিছই নাই; কেন না, আকাশ সম্প্ৰবন্ধ জ্ঞাপক মাত্র। অতএব শরীরে পঞ্চ ভূতের অস্তিত্ব এ প্রকারে স্বীকার করিলাম। কিন্তু আমার প্রধান আপত্তি তিনটি। প্রথম, শরীরের সারাংশ এ সকলে নিশ্চিমত নহে ; এ সকল ভিন্ন অন্য অনেক প্রকার উপকরণ আছে। দ্বিতীয়, ইহাদের ভূত বল কেন ? তৃতীয়, ইহার সঙ্গে প্ৰাণাপােনাদি বায় প্রভৃতি যে কতকগলি কথা বল, বোধ হয়, হিন্দ, রাজাদিগের আমলে আবকারির আইন প্রচলিত থাকিলে, সে কথাগালির প্রচার হইত না।" “দেখ, এই তোমার সম্মখে ইন্টক-নিশ্চিমত মনষ্যের বাসগহ। ইহা ইস্টক-নিৰ্ম্মিত, সতরাং ইহাতে পথিবী আছে। গহস্থ ইহাতে পানাদির জন্য কলসী কলসী জল সংগ্ৰহ করিয়া রাখিয়াছে। পাকাথ এবং আলোকের জন্য অগ্নি জবালিয়াছে, সতরাং তেজঃও বিত্তমান । আকাশ, গহমধ্যে সব্বত্রই বৰ্ত্তমান। সব্বত্র বায় যাতায়াত করিতেছে। সতরাং এ গহও পঞ্চভূত-নিমিত ? তুমি যেমন বল, মনষ্যের এ স্থানে প্ৰাণ বায়, ও স্থানে অপান বায় ইত্যাদি, আমিও তেমনি বলিতেছি, এই দ্বার-পথে যে বায় বহিতেছে, তাহা প্ৰাণ বায় ও বাতায়ন-পথে যাহা বহিতেছে, তাহা অপান বায় ইত্যাদি। তোমারও নিন্দেশ যেমন অমলক ও প্রমাণশান্য আমার নির্দেশও তেমনি প্রমাণশিন্যে। তুমি জীব-শরীর সম্পবন্ধে যাহা বলিবে, আমি এ অট্টালিকা সম্পবন্ধে তাহাই বলিব। তুমি যদি আমার কথা অপ্রমাণ করিতে যাও, তোমার সর্বপক্ষের ঝােণ্ড প্রমাণ হইয়া পড়বে। তবে কি তুমি আমার এই অট্টালিকাটি জীব বলিয়া স্বীকার প্রাচীন দর্শনশাস্ত্রে এবং আধনিক বিজ্ঞানে এই প্রকার বিবাদ। ভারতবর্ষবাসীরা মধ্যস্থ। মধ্যস্থেরা তিন শ্রেণীভুক্ত। এক শ্রেণীর মধ্যাস্থেরা বলেন যে, “প্রাচীন দশন, আমাদের দেশীয়। যাহা আমাদের দেশীয়, তাহাই ভাল, তাহাই মান্য এবং যথার্থ। আধনিক বিজ্ঞান বিদেশী, যাহারা খ্রীস্টান হইয়াছে, সন্ধ্যা আহিক করে না, উহারাই তাহাকে মানে। আমাদের দশন সিদ্ধ ঋষি-প্রণীত, তাঁহাদিগের মনষ্যাতীত জ্ঞান ছিল, দিব্য চক্ষে সকল দেখিতে পাইতেন; কেন না, তাঁহারা প্রাচীন এবং এদেশীয়। আধনিক বিজ্ঞান যাঁহাদিগের প্রণীত, তাঁহারা সামান্য মনষ্যে। সতরাং প্রাচীন মতই মানিব।” আর এক শ্রেণীর মধ্যস্থ আছেন, তাঁহারা বলেন, “কোনটি মানিতে হইবে, তাহা জানি না। দর্শনে কি আছে, তাহা জানি না, বিজ্ঞানে কি আছে তাহাও জানি না। কলেজে তোতা পাখীর মত কিছ, বিজ্ঞান শিখিয়াছিলাম বটে, কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা কর, কেন সে সব মানি, তবে আমার কোন উত্তর নাই। যদি দাই মানিলে চলে, তবে দাই মানি। তবে, যদি নিতান্ত পীড়াপীড়ি কর, তবে বিজ্ঞানই মানি; কেন না, তাহা না মানিলে, লোকে আজি কালি মািখ বলে। বিজ্ঞান মানিলে লোকে বলিবে, এ ইংরেজি জানে, সে গৌরব ছাড়িতে পারি না। আর বিজ্ঞান মানিলে বিনা কন্তু হিন্দুয়ানির বাঁধাবধি হইতে নিকৃত পাওয়া যায়। সে অল্প সখি নহে। সুতরাং বিজ্ঞানই יין dףןדול তৃতীয় শ্রেণীর মধ্যাস্থেরা বলেন, “প্রাচীন দশনশাস্ত্র দেশী বলিয়া তৎপ্রতি আমাদিগের বিশেষ প্রীতি বা অপ্রীতি নাই। আধনিক বিজ্ঞান সাহেবি বলিয়া তাহাকে ভক্তি বা অভক্তি করি না। যেটি যথাৰ্থ হইবে, তাহাই মানিব-ইহাতে কেহ খ্রীস্টান বা কেহ মািখ বলে, তাহাতে ক্ষতি বোধ করি না। কোনটি যথার্থ, কোনটি অযথাৰ্থ, তাহা মীমাংসা করিবে কে ? আমরা আপনার বদ্ধিমত মীমাংসা করিব;-পরের বদ্ধিতে যাইব না। দার্শনিকেরা আমাদিগের দেশী লোক বলিয়া তাঁহাদিগকে সববিজ্ঞ মনে করিব না-ইংরেজেরা রাজা বলিয়া তাঁহাদিগকে অদ্রান্ত মনে করি না। “সব্বজ্ঞ' বা ‘সিদ্ধ” মানি না, আধনিক মনষ্যাপেক্ষা প্রাচীন ঋষিদিগের কোন প্রকার বিশেষ জ্ঞানের উপায় ছিল, তাহা মানি না-কেন না, যাহা অনৈসগিক, তাহা মানিব না। বরং ইহাই বলি যে, প্রাচীনাপেক্ষা আধনিকদিগের অধিক জ্ঞানবত্তার সম্ভাবনা। কেন না, কোন বংশে যদি পরিষানক্রমে সকলেই কিছ কিছ সঞ্চয় করিয়া যায়, তবে প্রপিতামহ অপেক্ষা প্রপৌত্র S8S