পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-সাংখ্যদর্শন এইরুপ সকল জীবের। অতএব দেখা যাইতেছে যে, এই জগতের কিয়দংশ অন্যমেয় মাত্র, ইন্দ্ৰিয়গোচর নহে, এবং সখি দঃখাদির ভোগকৰ্ত্তা। যে সখি দঃখাদির ভোগকৰ্ত্তা, সেই আত্মা। সাংখ্যে তাহার নাম পরিষ। পরিষ ভিন্ন জগতে আর যাহা কিছ আছে, তাহা প্রকৃতি। আধনিক মনস্তত্ত্ববিদেরা কহেন যে, আমাদিগের সখ দঃখ মানসিক বিকার মাত্র। সেই সকল মানসিক বিকার কেবল মস্তিকের ক্রিয়া মাত্র। তুমি আমার অঙ্গে কণ্টক বিদ্ধ করিলে, বিদ্ধ স্থানস্থিত স্নায় তাহাতে বিচলিত হইল-সেই বিচলন মস্তিম্ভক পৰ্যন্ত গেল। তাহাতে মস্তিকের যে বিকৃতি হইল, তাহাই বেদনা। সাংখ্য-মতাবলম্বীরা বলিতে পারেন, “মানি, তাহাই ব্যথা। কিন্তু ব্যথা ভোগ করিল সেই আত্মা।” এক্ষণকার অন্য সম্প্রদায়ের মনস্তত্ত্ববিদেরাও প্রায় সেইরােপ বলেন। তাঁহারা বলেন, মস্তিকের বিকারই সখি দঃখ, বটে, কিন্তু মস্তিক্ষক আত্মা নহে। ইহা আত্মার ইন্দ্ৰিয় মাত্র। এ দেশীয় দার্শনিকেরা যাহাকে অন্তরিান্দ্ৰিয় বলেন, উহারা মস্তিস্ককে তাহাই বলেন। শরীরাদি ব্যাতিরিক্ত পরিষ। কিন্তু দঃখ, ত শারীরাদিক। শরীরাদিতে যে দঃখের কারণ নাই, এমন দঃখ নাই। যাহাকে মানসিক দঃখ বলি, বাহ্য পদার্থই তাহার মল। আমার বাক্যে তুমি অপমানিত হইলে; আমার বাক্য প্রাকৃতিক পদার্থ। তাহা শ্রবণেন্দ্ৰিয়ের দ্বারা তুমি গ্রহণ করিলে, তাহাতে তোমার দঃখ। অতএব প্রকৃতি ভিন্ন কোন দঃখ নাই। কিন্তু প্রকৃতিঘটিত দঃখ পরিষকে বত্তে কেন ? “অসঙ্গোইয়ম্পপরিষঃ।” পরীষ একা, কাহারও সংসগবিশিস্ট নহে (১ অধ্যায়, ১৫ সত্ৰ) । অবস্থাদি সকল শরীরের, আত্মার নহে (ঐ, ১৪ সত্ৰ) । “ন বাহ্যান্তরয়োর পরাজ্যোপিরঞ্জকভাবোহপি দেশব্যবধানাৎ শ্রািঘস্থপাটলিপত্রস্থয়োরিব।” বাহ্য এবং আন্তরিকের মধ্যে উপরাজ্য এবং উপরঞ্জক ভাব নাই; কেন না, তাহা পরস্পর সংলগ্ন নহে; দেশব্যবধানবিশিস্ট। যেমন একজন পাটলীপত্র নগরে থাকে, আর একজন শ্ৰীঘনগরে থাকে, ইহাদিগের পরস্পরের ব্যবধান তদুপ। পরিষের দঃখ কেন ? প্রকৃতির সহিত সংযোগই পরিষের দঃখের কারণ। বাহ্যে আন্তরিকে দেশব্যবধান আছে বটে, কিন্তু কোন প্রকার সংযোগ নাই, এমত নহে। যেমন সফটিকপাত্রের নিকট জবা কুসন্ম রাখিলে, পাত্র পম্পের বণবিশিষ্ট হয় বলিয়া, পাম্প এবং পাত্রে একপ্রকার সংযোগ আছে বলা যায়, এ সেইরােপ সংযোগ। পলিপ এবং পাত্ৰমধ্যে ব্যবধান থাকিলেও পাত্রের বর্ণ বিকৃত হইতে পারে, ইহাও সেইরাপ। এ সংযোগ নিত্য নহে, দেখা যাইতেছে। সতরাং তাহার উচ্ছেদ হইতে পারে। সেই সংযোগ উচ্ছেদ হইলেই, দঃখের কারণ অপনীত হইল। অতএব এই সংযোগের উচ্ছিত্তিই দঃখনিবারণের উপায়। সতরাং তাহাই পরিষার্থ। “যদ্বা তদ্বা তদচ্ছিত্তিঃ পরিষার্থস্তদচ্ছিত্তিঃ পরিষার্থঃ (৬, ৭o) । সাংখ্যের মত এই। যদি আত্মা শরীর হইতে পথক হয়, যদি আত্মাই সখ-দঃখভোগী হয়, যদি আত্মা দেহনাশের পরেও থাকে, যদি দেহ হইতে বিষাক্ত আত্মার সখ-দঃখাদি ভোগের সম্ভাবনা থাকে, তবে সাংখ্যদর্শনের এ সকল কথা যথাৰ্থ বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে। কিন্তু এই “যদি”গলিন অনেক। আধনিক পজিটিবিলট এখনই বলিবেন,- ১ম। আত্মা শরীর হইতে পথক কিসে জানিতেছ? শারীর তত্ত্বে প্রতিপন্ন হইতেছে যে, শরীরই বা শরীরের অংশবিশেষই আত্মা। ২য়। আত্মাই যে সখদঃখভোগী, তাহারই বা প্রমাণ কি ? প্রকৃতি সখদঃখভোগী নহে কেন ? ৩য়। দেহনাশের পর যে আত্মা থাকিবে, তাহা ধৰ্ম্মপান্তকে বলে; কিন্তু তদ্ভিন্ন অণমাত্র প্রমাণ নাই। আত্মার নিত্যত্ব যদি মানিতে হয়, তবে ধামপাস্তকের আজ্ঞানসারে; দশনশাস্ত্রের আজ্ঞানসারে মানিব বা। ৪র্থ। দেহধবংসের পর আত্মা থাকিলে, তাহার যে আবার জরােমরণাদিজ দঃখের সম্ভাবনা আছে, তাহার কিছমাত্র প্রমাণ নাই। অতএব যাঁহারা আত্মার পার্থক্য ও নিত্যত্ব মানেন, তাঁহারাও সাংখ্য মানিবেন না h এবং এ সকল মত যে, এ কালে গ্রাহ্য হইবে, এমত বিবেচনায় আমরা সাংখ্যদর্শন বঝাইতে প্রবত্ত হই নাই। কিন্তু এক্ষণে যাহা অগ্রাহ্য, দাই সহস্ৰ বৎসর उाश आश5यT आदिक्षिा। সেই আশচষ্য আবিক্রিয়া কি, ইহাই, বৰঝান, আমাদিগের অভিপ্ৰায়।

  • ミー>○ RSRG