পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম । নাবল । কি যদি ভ্ৰান্ত, তাহার মীমাংসা নিতান্ত সহজ নহে। অন্ততঃ ইহা স্থির যে, উভয়মধ্যে কাহারও কাৰ্য্য সর্বভাববিরদ্ধে নহে। সেইরােপ গ্রীকেরা সবাধীনতাপ্রিয়; হিন্দরা সবাধীনতাপ্রিয় নহে, শান্তিসখের অভিলাষী; ইহা কেবল জাতিগত সাবভাববৈচিত্র্যের ফল, বিসময়ের বিষয় নহে। কিন্তু অনেকে এ কথা মনে করেন না। হিন্দরা যে পরাধীন, সবাধীনতালাভের জন্য উৎসক নহে, ইহাতে তাঁহারা অনামান করেন যে, হিন্দরা দৰবল, রণভীর, সবাধীনতা লাভে অক্ষম; এ কথা তাঁহাদের মনে পড়ে না যে, হিন্দরা সাধারণতঃ সবাধীনতা লাভে অভিলাষী বা যত্নবান নহে। অভিলাষী বা যত্নবান হইলেই লাভ করিতে পারে। সবাতন্ত্র্যে অনাস্থা, কেবল আধনিক হিন্দীদিগের সর্বভাব, এমত আমরা বলি না; ইহা হিন্দজাতির চিরস্বভাব বোধ হয়। যিনি এমত বিবেচনা করেন যে, হিন্দরা সাত শত বৎসর স্বাতন্ত্র্যহীন হইয়া, এক্ষণে তদ্বিষয়ে আকাঙ্ক্ষাশন্য হইয়াছে, তিনি অযথাৰ্থ অনামান করেন। সংস্কৃত সাহিত্যাদিতে কোথাও এমন কিছ পাওয়া যায় না যে, তাহা হইতে পািব্বতন হিন্দগণকে স্বাধীনতাপ্রয়াসী বলিয়া সিদ্ধ করা যাইতে পারে। পরাণোপপরিাণ কাব্য নাটকাদিতে কোথাও স্বাধীনতার গণগান নাই। মীবার ভিন্ন কোথাও দেখা যায় না যে, কোন হিন্দসমাজ সবাতন্ত্র্যের আকাঙ্ক্ষায় কোন কায্যে প্রবত্ত হইয়াছে। রাজার রাজ্য সম্পত্তি রক্ষায় যত্ন, বীরের বীরদপ, ক্ষত্ৰিয়ের যাদ্ধপ্রয়াস, এ সকলের ভুরি ভুরি উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু সবাতন্ত্র্য লাভাকাঙক্ষা সে সকলের মধ্যগত নহে। সর্বাতন্ত্র্য, সবাধীনতা, এ সকল নতন কথা। ভারতবষীয়দিগের এইরােপ স্বভাব সিদ্ধ সবাতন্ত্র্যে অনাস্থার কারণানসন্ধান করিলে তাহাও দাভেদ্ৰয় নহে। ভারতবর্ষের ভূমির উর্বরতাশক্তি এবং বায়ার তাপাতিশয্য প্রভৃতি ইহার গৌণ কারণ। ভূমি উকবােরা, দেশ সব্বসামগ্ৰী-পরিপািণ, অলপায়াসে জীবনযাত্রা নিৰ্ব্ববাহ হয়। লোককে অধিক পরিশ্রম করিতে হয় না, এ জন্য অবকাশ যথেস্ট। শারীরিক পরিশ্রম হইতে অধিক অবকাশ হইলে, সহজেই মনের গতি আভ্যন্তরিক হয়; ধ্যানের বাহাল্য ও চিন্তার বাহল্য হয়। তাহার এক ফল কবিত্ব। জগত্তত্ত্বে পান্ডিত্য। এই জন্য হিন্দরা অলপকালে অদ্বিতীয় কবি এবং দার্শনিক হইয়াছিলেন। কিন্তু মনের আভ্যন্তরিক গতির দ্বিতীয় ফল বাহ্য সখে অনাস্থা। বাহ্য সখে অনাস্থা হইলে সতরাং নিশেচন্দ্টতা জন্মিবে। সবাতন্ত্র্যে অনাস্থা এই স্বাভাবিক নিশ্চেন্টতার এক অংশ মাত্র। আয্য ধৰ্ম্মতত্ত্বে, আৰ্য দর্শনশাস্ত্রে এই অচেন্টাপরতা সব্বত্র বিদ্যমান। কি বৈদিক, কি বৌদ্ধ, কি পৌরাণিক ধৰ্ম্মম , সকলেই এই নিশ্চেন্টতারই সম্পবদ্ধ নাপারিপািণ । বেদ হইতে বেদান্ত সাংখ্যাদি। দশনের উৎপত্তি; তদনসারে লয় বা ভোগক্ষান্তিই মোক্ষ; নি✉কামত্বই পণ্য। বৌদ্ধধৰ্ম্মেমরি সার-নিব্বাণই মাক্তি। এক্ষণে জিজ্ঞাসা হইতে পারে যে, হিন্দজাতি যদি চিরকাল সবাতন্ত্র্যে হতাদর, তবে মসলমানকৃত জয়ের পকেবা সাদ্ধ সহস্ৰ বৎসর তাহারা কেন যত্ন করিয়া পািনঃ পািনঃ পরজাতি বিমখ পাকবািক সবাধীনতা রক্ষা করিয়াছিল ? পরজাতিগণ সহজে কখন বিমখ হয় নাই, অনেক কন্টে হইয়া থাকিবে। যে সখের প্রতি আস্থা নাই, সে সখের জন্য হিন্দসমাজ কেন এত কম্পট बौका कद्धिक्षाछिका ? উত্তর, হিন্দসমাজ যে কখন শক যবন প্রভৃতিকে বিমখীকরণ জন্য বিশেষ যত্নবান হইয়াছিল, তাহার প্রমাণ কোথাও নাই। হিন্দ,রাজগণ আপনার রাজ্যসম্পত্তি রক্ষার জন্য যত্ন করিয়াছিলেন, তাঁহাদিগের সংগহীত সেনায় যাদ্ধ করিত; যখন পারিত, শত্র বিমাখ করিত, তাহাতেই দেশের সবাতন্ত্র্য রক্ষা হইত ; তাত্তিষ যে “আমাদের দেশে ভিন্নজাতীয় রাজা হইতে দিব না” বলিয়া সাধারণ জনগণ কখন উৎসাহায্যক্ত বা উদ্যমশালী হইয়াছিল, ইহার প্রমাণ কোথাও নাই। বরং তদ্বিপরীতই প্রকৃত বলিয়া বিবেচনা হয়। যখনই সমরলক্ষমীর কোপদন্টিপ্রভাবে হিন্দ রাজা বা যদ্ধে সমবেত হয় নাই। কেন না, আর কাহার জন্য যাদ্ধ করিবে ? যখনই রাজা নিধনপ্রাপ্ত বা অন্য কারণে রাজ্য রক্ষায় নিশ্চেন্ট হইয়াছেন, তখনই হিন্দ যাদ্ধ সমাধা হইয়াছে। আর কেহ তাহার স্থানীয় হইয়া সবাতন্ত্র্য পালনের উপায় করেন নাই; সাধারণ সমাজ হইতে অরক্ষিত রােজ্যরক্ষার কোন উদ্যম হয় নাই। যখন বিধির বিপাকে যবন বা পারসীক, শাক বা বাহিক, কোন প্রদেশখন্ডের রাজাকে রণে পরাজিত করিয়া তাঁহার সিংহাসনে বসিয়াছে, প্ৰজাগণ তখনই তাহাকে পািব্বপ্রভুর RObo