পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুড়ি “লেখকের প্রধান উদ্দেশ্য এই যে আলোচিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সকল সাধারণ বাঙ্গালী পাঠক, বাঙ্গালা বিদ্যালয়ের উচ্চতর শ্রেণীর বালকেরা এবং আধনিক শিক্ষিত বাঙ্গালী সত্ৰী, বঝিতে পারেন। কতদার এ উদ্দেশ্য সফল হইবে বলিতে পারি না।” “বিজ্ঞােনরহস্যের প্রথম সংস্করণে ধলো” প্রবন্ধটি যে আকারে গ্রথিত হইয়াছে’, ‘বঙ্গদর্শনে” (ফাল্গন ১২৭৯)। ঠিক সে আকারে ছিল না। পাস্তকে ইহার গোড়ার অংশ পরিত্যক্ত হয়। সেই অংশটি এই ; “আমাদিগের দেশে অন্য যে বিষয়েরই অভাব থাকুক না কেন, কেবল এক বিষয়ের অভাব নাইবড় ২ বিষয়ে ক্ষমাদ্র ২ প্রবন্ধ। আমাদের দেশে অন্ন বস্ত্রের অভাব আছে; কিন্তু দর্শন, বিজ্ঞান, পরাবত্ত, রাজনীতি, সমাজনীতি, ও ধৰ্ম্ম নীতি, এ সকলের অভাব নাই; চাঁদনীর চকে জােতা কিনিলে বিনামল্যে অনায়াসে শিখিতে পারা যায়। জতা বাঁধা কাগজ পড়িলেই হইল। স্কুলের ছেলে বিস্তর; উমেদারও অনেক; সকলের চাকরি জাটে না; কাগজ কলম ধার চাহিলে পাওয়া যায়, কেন না, কেহ পরিশোধের প্রত্যাশা করে না; মাদ্রাযন্ত্র অতি সলভ। লিখিতে হইলে ছোট বিষয়ে লেখা অযক্তিসতরাং অন্ন বস্ত্রের যাদশ অভাব-বড় ২ বিষয়ে প্রবন্ধের তােদশ অভাব নাই। আমাদিগের ক্ষুদ্র বদ্ধিতে বিবেচনা হইয়াছিল যে, দশন বিজ্ঞানাদির কথা যাহাই হউক, কাব্য সমালোচনা কিছ: কঠিন; কেন না, দর্শনাদি শিখিলে তদ্বিষয়ে লেখা যায়, কিন্তু কাব্যের সমালোচনা কেবল শিক্ষার বশীভূত নহে। কিন্তু আমাদিগের দেশের সৌভাগ্য যে তাহারই কিছ ছড়াছড়ি অধিক। মা সরস্বতীর অনগ্ৰহ! আমরা ক্ষদ্রবদ্ধি এবং অলপজ্ঞান, সতরাং গারতের বিষয়ের সমালোচনায় অক্ষম। কোন সামান্য বিষয় অবলম্বন করিয়া একটি প্রস্তাব লিখিব। এই প্ৰতিজ্ঞা করিয়া সামান্য বিষয়ের অন্যসন্ধান করিতেছিলাম। অন্যাসন্ধান কালে আমাদের সম্মখে একজন ঝাড়দার’ সম্পমাতজনী হস্তে, রাজপথ পরিস্কার করিতেছিল, বড় ধলা, উড়াইতেছিল। দেখিয়া আমরা স্থির করিলাম যে, যাহার তত্ত্ব করিতেছিলাম, তাহা -আমরা ধলা সম্পবন্ধেই লিখিব। ধলার মত সামান্য পদাৰ্থ আর সংসারে নাই। ভাবিলাম যে, ধলার সম্পবন্ধে অনেক নাতন কথা লিখিতে পারিব, যথা-প্রথমতঃ, ধলায় জল ঢালিলে কাদা হয়; দ্বিতীয়তঃ, ধলা চক্ষে গেলে করােকর করে; তৃতীয়তঃ, ধলা দাঁতে গেলে কিচ কিচ’ করে; চতুৰ্থাতঃ, রেইলে বড় ধলা লাগে ইত্যাদি নানাবিধ নিতেন এবং বিস্ময়জনক তত্ত্বের আবিস্ক্রিয়া করিব, ইচ্ছা করিয়াছিলাম। সকল স্থানে রাস্তা ঘাটে ভাল জল দেওয়া হয় না বলিয়া মিউনিসিপাল কৰ্ম্মচারীদিগকে কিঞ্চিৎ সসভ্য গালিগালাজ করিব, এমতও ইচ্ছা ছিল। মনে করিয়াছিলাম, কাব্যালঙ্কারেও ধলার প্রয়োজন দেখাইতে পারিব, যথা ‘ধলায় ধসের অঙ্গ’, ‘ধলায় মিশাবে দেহ’ ইত্যাদি। বস্তৃতঃ আমরা কলপনা করিয়াছিলাম যে, কোন প্রকারে পাঠক মহাশয়ের চক্ষে ধােলা” দিব। পারি ত, আপনারাও কিছ ‘ধলা বাকস পাতা’ উপাৰ্জন করিব। দভাগ্যক্রমে আমাদিগের স্মরণ হইল যে, আচাৰ্য্য টি-ডেলও ধলা সম্পবন্ধে একটি দীঘ প্রস্তাব লিখিয়াছেন। এবং তাহা পাঠ করিয়া ধলো সামান্য তত্ত্ব বলিয়া বোধ হয় না, অত গরতের এবং দ্যজ্ঞেয় বিষয় বলিয়া স্বীকার করিতে হয়। আচাৰ্য স্বয়ং এক জন ইউরোপের মান্য বিজ্ঞানবিং মহামহোপাধ্যায়। তিনি বহদিন অবধি পরিশ্রম করিয়া, ধলাতত্ত্বের কিয়দংশ জানিতে পারিয়াছেন। সতরাং সামান্য বিষয় বুলি কেলর উপর যে আদর হইয়াছিল, তাহার লাঘব হইল। আমাদিগের কপালক্রমে ফলাও সামান্য নহে ।” প্রথম সংস্করণের সম্পর্বশেষ প্রবন্ধটি (সর উইলিয়াম টমসনকৃত জীবসন্টির ব্যাখ্যা) পাস্তকের দ্বিতীয় সংস্করণে একেবারে বাদ দেওয়া হইয়াছে। বিবিধ প্ৰবন্ধ (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ) : এই পাস্তকদ্বয় সম্বন্ধে কিছ ৰিলিতে গেলে, ‘বঙ্গদর্শনের কথাই আমাদের মনে সব্বপ্রথম উদিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র-সম্পাদিত ‘বঙ্গদশন’ বাংলা সািহত্যে যে নবযাগ সন্টি করিয়াছিল, তাহা আজি সন্বজনস্বীকৃত। ইহার পর্বে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, বিবিধাৰ্থ সংগ্রহ, রহস্য সন্দভী, শিক্ষা-দপণ প্রভৃতি মাসিক এবং সোমপ্রকাশ, আমত বাজার পত্রিকা প্রভৃতি সাপ্তাহিকে যে, সকল ভাবধারার ক্ৰমবিকাশ ঘটিয়াছিল বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শনে’ যেন ঐসব একটি পরিপােশ রােপ পরিগ্রহ করিল। বিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতকাব্য, বাংলা সাহিত্য, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, নতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, শিক্ষা, সঙ্গীত, রাষ্ট্ৰবিজ্ঞান, লোকশিক্ষা এমনু কোন বিষয় ছিল না যাহা বুঙ্গদর্শনে’ প্রবন্ধকারে আলোচিতৃ না হইত। পত্তিক সমালোচনাও ‘সাহিত্যু পৰ্যায়ে উন্নীত হইয়াছিল। আর এই সকলের এক বিরাট অংশ, প্রায় পািনর আনার লেখক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্ৰ স্বয়ং। এমনকি সঞ্জীবচন্দ্ৰ-সম্পাদিত, বঙ্গদর্শনের পরেও প্রচার’ এবং ‘নবজীবনে? বঙ্কিমচন্দ্র এই সকল বিষয়ক প্রবন্ধের জোর টানিয়াছিলেন। তবে