পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-প্রাচীন এবং নবীনা দিতে পারেন। ততোধিক ঋণদান ব্যবসায়ীর কাজ। এই তিনটি নিয়মের দ্বারা অথশাস্ত্ৰবেত্তাদিগের আপত্তির মীমাংসা হইতেছে। প্রাচীন হিন্দরা অর্থশাস্ত্র বিলক্ষণ বঝিতেন। নিম্নোদ্ধত নীতি, ইংরেজেরা এ পয্যন্ত শিখিলেন না। না শিখাতে তাঁহাদিগের ক্ষতি “হে মহারাজ ! যথাকালে গাত্ৰোখানাপাকবািক বেশভূষা সমাধান করিয়া, কালজ্ঞ মন্ত্ৰিগণে পরিবত হইয়া, দর্শনাথী প্ৰজাগণকে ত দশন প্রদান করেন ?" “যে রাজাকে প্ৰজাগণ কখন দেখিতে পায় না-তাঁহার প্রতি প্ৰজাদিগের অন্যরাগ সঞ্চার হয় না; বিশেষতঃ এদেশের লোকের সর্বভাব এই। আর রাজদর্শন প্ৰজাগণের দালাভ হইলে, তাহাদিগের সকলপ্রকার দঃখ ও প্রকৃত অবস্থা রাজা বা রাজপরিষেরা কখন জানিতে পারেন না। হিন্দ,রাজাদিগের ন্যায় মসলমানেরাও এ কথা বঝিতেন। এখন যেখানে সম্পবৎসরে একটা দরবার বা “লেবী” হয়, সেখানে হিন্দ ও মসলমানদিগের প্রাত্যহিক দরবার হইত। পারে“দািব্বল শত্রকে ত বলপ্রকাশপর্বক সাতিশয় পীড়িত করেন না ?” তাহা হইলে দািব্বল শত্রও বলবান হইয়া উঠে। এই দোষে স্পেনের দ্বিতীয় ফিলিপ “নিম্পনদেশ” অর্থাৎ হল্যান্ড হইতে বহি ভকৃত হইয়াছিলেন। ইংলন্ড যে আমেরিক উপনিবেশ হইতে বহিস্কৃত হইয়াছিলেন, তাহারও কারণ প্রায় অনারাপ। তৎপরে, “দন্ট অহিতকারী কদৰ্য্যস্বভাব দণ্ডডাহ তস্কর লোপ্তসহ গহীত হইয়াও তাহাদিগের নিকটে ত ক্ষমা লাভ করিয়া থাকে না ?” যে দেশে জারির বিচার আছে, সে দেশের রাজপরিষদিগকে আমরাও এ কথা জিজ্ঞাসা করি। নারদ যে চতুদশ রাজদোষ কীৰ্ত্তন করিয়াছেন, তাহাও শ্রবণযোগ্য,-যথা, “নাস্তিক্য, অনন্ত, ক্ৰোধ, প্রমাদ, দীঘসত্ৰতা, জ্ঞানবান ব্যক্তিদিগের সাক্ষাৎকার ত্যাগ, আলস্য, চিত্তচাপল্য, নিরন্তর অর্থ চিন্তা, অনৰ্থক ব্যক্তির সহিত পরামর্শ, নিশ্চিত বিষয়ের অনারম্ভ, মন্ত্রণার অপরিরক্ষণ, মঙ্গল কায্যের অপ্রয়োগ ও প্রত্যুত্থান, এই চতুদশ রাজদোষ।” আর একটি বাক্যমাত্র উদ্ধত করিয়া আমরা নিরস্ত হইব“অন্ধ, মক, পঙ্গ, বিকলাঙ্গ, বন্ধবিহীন, প্ৰব্ৰজিত ব্যক্তিদিগকে ত পিতার ন্যায় প্রতিপালন করেন ?” এই প্রকার সারবান এবং একালেও আদরণীয় কথা আরও অনেক আছে। প্রাচীনা এবং নবীনা আমাদিগের সমাজসংস্কারকেরা নাতন কীৰ্ত্তি স্থাপনে যাদশ ব্যগ্র, সমাজের গতি পৰ্যবেক্ষণায় তােদশ মনোযোগী নহেন। “এই হইলে ভাল হয়, অতএব এই কর,” ইহাই তাঁহাদিগের উক্তি, কিন্তু কি করিতে কি হইতেছে, তাহা কেহ দেখেন না। বাঙ্গালিরা যে ইংরেজি শিখে, ইহাতে সকলেরই উৎসাহী। কিন্তু ইহার ফল কি, তাহার সমালোচনা কেবল আজিকালি হইতেছে। এক শ্রেণীর লোক বলেন, ইহার ফল মাইকেল মধ্যসািদন দত্ত, দ্বারকানাথ মিত্র প্রভৃতি ; দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক বলেন, দই একটি ফল সাপক এবং সমধর বটে। কিন্তু অধিকাংশ তিক্ত ও বিষময় ; উদাহরণ-মাতালের দল এবং সাধারণ বাঙ্গালি লেখকের পাল । আবার দিনকতক ধােম পড়িল, সত্ৰীলোকদিগের অবস্থার সংস্কার কর, সন্ত্রীশিক্ষা দাও, বিধবাবিবাহ দাও, স্ত্রীলোককে গহপিঞ্জর হইতে বাহির করিয়া উড়াইয়া দাও, বহবিবাহ নিবারণ করা; এবং অন্যান্য প্রকারে পাঁচী। রামী মাধীকে বিলাতি মেম করিয়া তুল। ইহা করিতে পারিলে যে ভাল, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই; কিন্তু পাঁচী যদি কখন বিলাতি মেম হইতে পারে, তবে আমাদিগের শালতরও একদিন ওকবক্ষে পরিণত হইবে, এমন ভরসা করা যাইতে পারে। যে রীতিগলির চলন, আপাততঃ অসম্ভব, সেগালি চলিত হইল না; সন্ত্রীশিক্ষা সম্ভব, এ জন্য তাহা এক প্রকার প্রচলিত হইয়া উঠিতেছে। পাস্তক হইতে এক্ষণে বাঙ্গালি সত্ৰীগণ যে শিক্ষা প্রাপ্ত হয়, তাহা অতি সামান্য; পরিবত্তনশীল সমাজে অবস্থিতি জন্য অর্থাৎ শিক্ষিত এবং ইংরেজের অন্যাকরণ S8N)