পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ১ । তাঁহাদের প্রথম দোষ আলস্য। প্রাচীনা অত্যন্ত শ্রমশালিনী এবং গহকৰ্ম্মেম সাপট ছিলেন; নবীনা ঘোরতর বাব; জলের উপর পদ্মের মত স্থিরভাবে বসিয়া স্বচ্ছ দপিণে আপনার রাপের ছায়া। আপনি দেখিয়া দিন কাটান। গহকমের ভার, প্রায় পরিচারিকার প্রতি সমাপিত। ইহাতে অনেক অনিন্ট জন্মিতেছে;-প্রথম শারীরিক পরিশ্রমের অলপতায় যাবতীগণের শরীর বলশান্য এবং রোগের আগার হইয়া উঠিতেছে। প্রাচীনাদিগের, অর্থাৎ পািব্বকালের যাবতীগণের শরীর স্বাস্থ্যজনিত এক অপৰিব লাবণ্যবিশিস্ট ছিল, এক্ষণে তাহা কেবল নিম্নশ্রেণীর সত্ৰীলোকের মধ্যে দেখা যায়। নবীনাদিগের প্রাত্যহিক রোগভোগে তাহাদিগের স্বামী পিতা পত্র প্রভৃতি সব্বদা জবালাতন এবং অসাখী; এবং সংসােরও কাজে কাজেই বিশঙ্খলায্যক্ত এবং দঃখময় হইয়া উঠে। গহিণী রােগ শয্যাশায়িনী হইলে গহের শ্ৰী থাকে না; অর্থের ধবংস হইতে থাকে ; শিশগণের প্রতি অযত্ন হয়; সতরাং তাহাদিগ্নের স্বাস্থ্যক্ষতি ও কুশিক্ষা হয়; এবং গহমধ্যে সব্বত্র দনীতির প্রচার হয়। যাঁহারা ভালবাসে, তাহারাও নিত্য রশ্নের সেবায় দঃখ, সহ্য করিতে পারে না: সতরাং দম্পতিপ্ৰীতিরও লাঘব হইতে থাকে। এবং মাতার অকালমাতুতে শিশগণের এমত অনিন্ট ঘটে যে, তাহাদিগের মাতৃত্যুকাল পয্যন্ত তাহারা উহার ফলভোগ করে। সত্য বটে, ইংরেজজাতীয় সত্ৰীগণকে আলস্যাপরবশ দেখিতে পাই, কিন্তু তাহারা অশ্বারোহণ, বায়সেবন, ইত্যাদি অনেকগালি সর্বাস্থ্যরক্ষক ক্রিয়া নিয়মিতরাপে সম্পাদন করে। আমাদিগের গহ পিঞ্জরের বিহাঙ্গিনীগণের সে সকল কিছই হয় না। দ্বিতীয়, সত্ৰীগণের আলস্যের আর একটি গারতের কুফল এই যে, সন্তান দকবল এবং ক্ষীণজীবী হয়। শিশদিগের নিত্য রোগ এবং অকালম,তু্য অনেক সময়েই জননীর শ্রমে অন্যরাগশন্যতার ফল। অনেকে বলেন, আগে এত রোগ ছিল না; এখন নিত্য পীড়া; আগে লোকে দীঘজীবী ছিল; এক্ষণে অলপবয়সে মরে। অনেকের বিশ্বাস আছে, এ সকল কালমহিমা; কলিতে অনৈসগিক ব্যাপার ঘটিতেছে। বদ্ধিমান ব্যক্তি জানেন যে, নৈসগিক নিয়ম কখন কালমাহাম্ম্যে পরিবত্তিত হয় না; যদি আধনিক বাঙ্গালিরা বহরোগী এবং অলপায় হইয়া থাকে, তবে তাহার অবশ্য নৈসগিক কারণ আছে সন্দেহ নাই। আধনিক প্রসতিগণের শ্রমে বিরতিই সেই সকল নৈসগিক কারণের মধ্যে অগ্রগণ্য। যে বঙ্গদেশের ভরসা লোকের শারীরিক বলোন্নতির উপর বত্তিয়াছে, সেই বঙ্গদেশে জননীগণের আলস্যাবশ্যতার এরােপ বদ্ধি যে অতি শোচনীয় ব্যাপার, তাহার সন্দেহ নাই। আলস্যের তৃতীয় কুফল এই যে, নবীনাগণ গহকৰ্ম্মে নিতান্ত অশিক্ষিতা এবং অপট। কখনও সে সকল কাজ করেন না, এজন্য শিখেনও না; ইহাতে অনেক অনিষ্পষ্ট ঘটে। প্রাচীনারা নিতান্ত ধনী না হইলে জল তুলিতেন, বাসন মাজিতেন, উঠান ঝাঁট দিতেন; রন্ধন তাঁহাদের জীবনের প্রধান কাৰ্য্য ছিল। এ কিছ বাড়াবাড়ি; নবীনাদিগের এতদর করিতে আমরা অনরোধ করি না; যাহার যেমন অবস্থা, সে তদনসারে। কাৰ্য্য করিলেই যথেস্ট; কেবল ক্যাপেট তুলিয়া কাল কাটাইলে, অতি ঘণিতরীপে জীবননিৰ্ব্ববাহ করা হয় বিবেচনা করি। পরস্পরের সখবদ্ধন জন্য সকলেরই জন্ম ; যে সত্ৰী, ভূমন্ডলে আসিয়া, শয্যায় গড়াইয়া, দপিণ্যসম্মখে কেশরঞ্জন করিয়া, কাপেট তুলিয়া, সীতার বনবাস পড়িয়া, এবং সন্তান প্রসব করিয়া কাল কাটাইলেন, আপনার ভিন্ন কাহারও সখি বদ্ধি করিলেন না, তিনি পশজাতির অপেক্ষা কিঞ্চিং ভাল হইলে হইতে পারেন, কিন্তু তাঁহার সত্ৰীজন্ম নিরর্থক। এ শ্রেণীর সন্ত্রীলোকগণকে আমরা গলায় দাঁড়ি দিয়া মরিতে পরামর্শ দিই; পথিবী তাহা হইলে অনেক নিরর্থক ভারবহনযন্ত্রণা হইতে বিমাক্তা হয়েন । গহিণী গাহকৰ্ম্মম না জানিলে রািগ্নগহিণীর গাহের ন্যায় সকলই বিশঙ্খল হইয়া পড়ে; অর্থে উপকার হয় না; অর্থ অনর্থক ব্যয় হয়; দ্রব্য সামগ্ৰী লািঠ যায়; অদ্ধেক দাস-দাসী এবং অপর লোক চুরি করে। বহ ব্যয়েও খাদ্যাদির অপ্রতুল ঘটে; ভাল সামগ্রীর খরচ দিয়া মন্দ সামগ্রী ব্যবহার করিতে হয়; ভাল সামগ্ৰী গহস্থের কপালে ঘটে না। পৌরজনে পৌরজনে অপ্রণয় এবং কলহ ঘটিয়া উঠে। অতিথি অভ্যাগতের উপযক্ত সম্পমান হয় না। সংসার কণ্টকময় হয়। ২। নবীনাদিগের দ্বিতীয় দোষ ধৰ্ম্মম সম্পবন্ধে। আমরা এক্ষণকার বঙ্গাঙ্গনীগণকে অধাৰ্ম্মিমক বলিতেছি না-বঙ্গীয় যবকদিগের তুলনায় তাঁহারা ধৰ্ম্মম ভক্ত এবং বিশদ্ধাত্মা বটেন, কিন্তু SGS --