পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বঙ্গদর্শনের পত্র-সচেনা কি ? সহজে কালো চামড়ার অপরাধে ধরা পড়িয়া আমরা নানারাপ সাফাইয়ের চেন্টায় বেড়াইতেছি, বাঙ্গালা পড়িয়া কবলিজবাব কেন দিব! ইংরাজিভূক্তদিগের এই রােপ। সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত্যাভিমানীদিগের “ভাষায়” যেরপে শ্রদ্ধা, তদ্বিষয়ে লিপিবাহ ল্যের আবশ্যকতা নাই। যাঁহারা “বিষয়ী লোক”, তাঁহাদিগের পক্ষে সকল ভাষাই সমান। কোন ভাষার বহি পড়িবার তাঁহাদের অবকাশ নাই। ছেলে স্কুলে দিয়াছেন, বহি পড়া আর নিমন্ত্রণ রাখার ভার ছেলের উপর। সতরাং বাঙ্গালা গ্রন্থাদি এক্ষণে কেবল নক্ষমাল সকলের ছাত্র, গ্রাম্য বিদ্যালয়ের পণ্ডিত, অপ্রাপ্তবয়ঃ-পৌর-কন্যা, এবং কোন কোন নিম্পকম্পমা রসিকতা-ব্যবসায়ী পরিষের কাছেই আদর পায়। কদাচিৎ দই একজন কৃতবিদ্য সদাশয় মহাত্মা বাঙ্গালা গ্রন্থের বিজ্ঞাপন বা ভূমিকা পৰ্যন্ত পাঠ করিয়া বিদ্যোৎসাহী বলিয়া খ্যাতি ठाएछ <FOदन्म । লেখাপড়ার কথা দরে থােক, এখন নব্য সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন কাজই বাঙ্গালায় হয় না। বিদ্যালোচনা ইংরাজিতে। সাধারণের কাৰ্য্য, মিটিং, লেকচার, এড্রেস, প্রোসিডিংস, সমদায় ইংরাজিতে। যদি উভয় পক্ষ ইংরাজি জানেন, তবে কথোপকথনও ইংরাজিতেই হয়, কখন ষোল আনা, কখন বার আনা ইংরাজি। কথোপকথন যাহাই হউক, পত্র লেখা কখনই বাঙ্গালায় হয় না। আমরা কখন দেখি নাই যে যেখানে উভয় পক্ষ ইংরাজির কিছ জানেন, সেখানে বাঙ্গালায় পত্র লুৎফুল্লায়। আমাদিগের এমনও ভরসা আছে যে, অগোলে দুর্গোৎসবের মন্যাদি ইংরাজিতে ইহাতে কিছই বিস্ময়ের বিষয় নাই। ইংরাজি একে রাজভাষা, অথোেপাজনের ভাষা, তাহাতে আবার বহ বিদ্যার আধার, এক্ষলে আমাদের জ্ঞানোেপাক্তজনের একমাত্র সোপান; এবং বিশেষ, ইংরাজিতে না বলিলে ইংরাজে বঝে না ; ইংরাজে না বঝিলে ইংরাজের নিকট মান ময্যাদা হয় না; ইংরাজের কাছে মান ময্যাদা না থাকিলে কোথাও থাকে না, অথবা থাকা না থাকা সমান। ইংরাজ যাহা না। শনিল, সে অরণ্যে রোদন ; ইংরাজ যাহা না দেখিল, তাহা ভস্মে ঘতে। আমরা ইংরাজি বা ইংরাজের দ্বেষক নাহি। ইহা বলিতে পারি যে, ইংরাজ হইতে এ দেশের লোকের যত উপকার হইয়াছে, ইংরাজি শিক্ষাই তাহার মধ্যে প্রধান। অনন্তরত্নপ্রসতি। ইংরাজি ভাষার যতই অনশীলন হয়, ততই ভাল। আরও বলি, সমাজের মঙ্গল জন্য কতকগলি সামাজিক কায্য রাজপরিষদিগের ভাষাতেই সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। আমাদিগের এমন অনেকগালিন কথা আছে, যাহা রাজপরিষদিগকে বঝাইতে হইবে। সে সকল কথা ইংরাজিতেই বক্তব্য। এমন অনেক কথা আছে যে, তাহা কেবল বাঙ্গালীর জন্য নহে; সমস্ত ভারতবর্ষ তাহার শ্রোতা হওয়া উচিত। সে সকল কথা ইংরাজিতে না বলিলে, সমগ্ৰ ভারতবর্ষ বঝিবে কেন ? ভারতবষীয় নানা জাতি একমত, একপরামশী, একোদ্যোগী না হইলে, ভারতবষের উন্নষতি নাই। এই মতৈক্য, একপরামশিত্ব, একোদাম, কেবল ইংরাজির দ্বারা সাধনীয়; কেন না, এখন সংস্কৃত লিপ্ত হইয়াছে। বাঙ্গালী, মহারাভিট্টী, তৈলঙ্গী, পঞ্জাবী, ইহাদিগের সাধারণ মিলনভূমি ইংরাজি ভাষা। এই রক্তজতে ভারতীয় ঐক্যের গ্রন্থি বাঁধতে হইবে * অতএব যতদর ইংরাজি চলা আবশ্যক, ততদার চলক। কিন্তু একেবারে ইংরাজ হইয়া বসিলে চলিবে না। বাঙ্গালী কখন ইংরাজ হইতে পারিবে না। বাঙ্গালী অপেক্ষা ইংরাজ অনেক গণে গণবান, এবং অনেক সখে সখী; যদি এই তিন কোটি বাঙ্গালী হঠাৎ তিন কোটি ইংরাজ হইতে পারিত, তবে সে মন্দ ছিল না। কিন্তু তাহার কোন সম্ভাবনা নাই; আমরা যত ইংরাজি পড়ি, যত ইংরাজি কহি বা যত ইংরাজি লিখি না কেন, ইংরাজি কেবল আমাদিগের মত সিংহের চম্পমর্সিবিরাপ হইবে মাত্র। ডাক ডাকিবার সময়ে ধরা পড়িব । পাঁচ সাত হাজার নকল ইংরাজ ভিন্ন তিন কোটি সাহেব কখনই হইয়া উঠিবে না। গিলটি পিতল হইতে খাঁটি রাপা ভাল। প্রস্তরময়ী সন্দরী মাত্তি অপেক্ষা, কুৎসিতা বন্যনারী জীবনযাত্রার সংসহায়। নকল ইংরাজ অপেক্ষা খাঁটি বাঙ্গালী সপািহণীয়। ইংরাজি লেখক, ইংরাজি বাচক সম্প্রদায় হইতে নকল ইংরাজ ভিন্ন কখন খাঁটি

  • এখানে যাহা কথিত হইয়াছে, কংগ্রেস এখন তাহা সিদ্ধ করিতেছেন।

SRNS