পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বঙ্গদর্শনের পত্র-সচেনা প্রতিযোগিনী নগরী। এথেন্সে সকলে সমান; সপার্টায় এক জাতি প্ৰভু, এক জাতি দাস ছিল। এথেন্স হইতে পথিবীর সভ্যতার সন্টি হইল-যে বিদ্যাপ্রভাবে আধনিক ইউরোপের এত গৌরব, এথেন্স তাহার প্রসতি। সম্পার্টা কুলক্ষয়ে লোপ পাইল। ফ্রান্সে পার্থক্য হেতু ১৭৮৯ খ্রীস্টােব্দ হইতে যে মহাবিপ্লব আরম্ভ হয়, অদ্যাপি তাহার শেষ হয় নাই। যদিও তাহার চরম ফল মঙ্গল বটে, কিন্তু অসাধারণ সমাজপীড়ার পর সে মঙ্গল সিদ্ধ হইতেছে। হস্তপদাদিচ্ছেদ করিয়া, যেরপ রোগীর আরোগ্যসাধন, এ বিপ্লবে সেইরােপ সামাজিক মঙ্গলসাধন। সে ভয়ানক ব্যাপার। সকলেই অবগত আছেন। মিশর দেশে সাধারণের সহিত ধৰ্ম্ম-যাজকদিগের পার্থক্যহেতুক, অকালে সমাজোন্নতি লোপ। প্রাচীন ভারতবর্ষে বর্ণগত পার্থক্য। এই বর্ণগত পার্থক্যের কারণ, উচ্চ বাণ এবং নীচ বণে যেরপ গারতের ভেদ জন্মিয়াছিল, এরপ কোন দেশে জন্মে নাই, এবং এত অনিন্টও কোন দেশে হয় নাই। সে সকল অমঙ্গলের সবিস্তার বর্ণনা এখানে করার আবশ্যকতা নাই। এক্ষণে বর্ণগত পার্থক্যের অনেক লাঘব হইয়াছে। দভাগ্যক্রমে শিক্ষা এবং সম্পত্তির প্রভেদে অন্যপ্রকার বিশেষ পার্থক্য জন্মিতেছে। সেই পার্থক্যের এক বিশেষ কারণ ভাষাভেদ। সশিক্ষিত বাঙ্গালীদিগের অভিপ্ৰায়সকল সাধারণতঃ বাঙ্গালা ভাষায় প্রচারিত না হইলে, সাধারণ বাঙ্গালী তাঁহাদিগের মৰ্ম্ম বঝিতে পারে না, তাঁহাদিগকে চিনিতে পারে না, তাঁহাদিগের সংস্রবে। আসে না। আর, পাঠক বা শ্রোতাদিগের সহিত সহৃদয়তা, লেখকের বা পাঠকের সম্ভবতঃসিদ্ধ গণ্য। লিখিতে গেলে বা কহিতে গেলে, তাহা আপনা হইতে জন্মে। যেখানে লেখক বা বক্তার স্থির জানা থাকে যে, সাধারণ বাঙ্গালী তাঁহার পাঠক বা শ্রোতার মধ্যে নহে, সেখানে কাজে কাজেই তাহাদিগের সহিত তাঁহার সহৃদয়তার অভাব ঘাঁটিয়া উঠে । যে সকল কারণে সশিক্ষিত বাঙ্গালীর উক্তি বাঙ্গালা ভাষাতেই হওয়া কত্তব্য, তাহা আমরা একটি বিশেষ বিঘা আছে। সশিক্ষিতে বাঙ্গালা পড়ে না। সশিক্ষিতে যাহা পড়িবে না, তাহা সশিক্ষিতে লিখিতে চাহে না। “আপরিতোষা দ্বিদ্যষাং ন সাধ মন্যে প্রয়োগবিজ্ঞানম।” আমরা সকলেই সবাথ্যাভিলাষী। লেখক মাত্রেই যশের অভিলাষী। যশঃ, সাঁশিক্ষিতের মখে। অন্যে সদসৎ বিচারক্ষম নহে; তাহদের নিকট যশঃ হইলে, তাহাতে রচনার পরিশ্রমের সার্থকতা বোধ হয় না। সশিক্ষিতে না পড়িলে সশিক্ষিত ব্যক্তি লিখিবে না। এদিকে কোন সশিক্ষিত বাঙ্গালীকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, “মহাশয়, আপনি বাঙ্গালীবাঙ্গালা গ্রন্থ বা পত্রাদিতে আপনার এত হতােদর কেন ?” তিনি উত্তর করেন, “কোন বাঙ্গালা গ্রন্থে বা পত্রে আদর করিব ? পাঠ্য রচনা পাইলে অবশ্য পড়ি।” আমরা মক্তকণ্ঠে স্বীকার করি যে, এ কথার উত্তর নাই। যে কয়খানি বাঙ্গালা রচনা পাঠযোগ্য, তাহা দই তিন দিনের মধ্যে পড়িয়া শেষ করা যায়। তাহার পর দই তিন বৎসর বসিয়া না থাকিলে আর একখানি পাঠ্য বাঙ্গালা রচনা পাওয়া যায় না। এইরপ বাঙ্গালা ভাষার প্রতি বাঙ্গালীর অনাদরেই বাঙ্গালার অনাদর বাড়িতেছে। সশিক্ষিত বাঙ্গালীরা বাঙ্গালা রচনায় বিমাখ বলিয়া সশিক্ষিত বাঙ্গালী বাঙ্গালা রচনা পাঠে বিমােখ। সশিক্ষিত বাঙ্গালীরা বাঙ্গালা পাঠে বিমাখ বলিয়া, সাঁশিক্ষিত বাঙ্গালীরা বাঙ্গালা রচনায় বিমােখ। আমরা এই পত্রকে সশিক্ষিত বাঙ্গালীর পাঠোপযোগী করিতে যত্ন করিব। যত্ন করিব, এই মাত্র বলিতে পারি। যত্নের সফলতা ক্ষমতাধীন। এই আমাদিগের প্রথম উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়, এই পত্র আমরা কৃতবিদ্য সম্প্রদায়ের হস্তে, আরও এই কামনায় সমপণ করিলাম যে, তাঁহারা ইহাকে আপনাদিগের বাত্তাবিহসােবরােপ ব্যবহার করন। বাঙ্গালী সমাজে৷ ইহা uBDDDDB DDDS BDS DBuBDDDBS BLBD DuBuB BB DB SS DBDDB DDDuD বহন করিয়া, ইহা বঙ্গ-মধ্যে জ্ঞানের প্রচার কারক। অনেক সশিক্ষিত বাঙ্গালী বিবেচনা করেন যে, এরপ বাৰ্ত্তােবহের কতক দর অভাব আছে। সেই অভাব নিরাকরণ এই পত্রের এক উদ্দেশ্য। আমরা যে কোন বিষয়ে, যে কাহারও রচনা, পাঠোপযোগী হইলে সাদরে গ্রহণ করিব। এই পত্র, কোন বিশেষ পক্ষের সমর্থন জন্য বা কোন সম্প্রদায়বিশেষের মঙ্গলসাধনাথ সল্ট হয় নাই। আমরা কৃতবিদ্যাদিগের মনোরঞ্জনাৰ্থ যত্ন পাইব বলিয়া, কেহ এরপ বিবেচনা করিবেন না RbO