পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী নাই। কিন্তু তথাপি উশানাভের জাল ফরোয় না। বিধানের অন্ত নাই। এ দিকে রাজ্যশাসনপ্ৰণালী দন্ডবিধি দায় সন্ধিবিগ্ৰহ প্রভৃতি হইতে আচমন, শয়ন, বসন, গমন, কথোপকথন, হাস্য, রোদিন, এই সকল পয্যন্ত ব্ৰাহ্মণের রচিত বিধির দ্বারা নিয়মিত হইতে লাগিল। “আমরা য্যেরাপে বলি, সেইরাপে শইবে, সেইরাপে খাইবে, সেইরাপে বসিবে, সেইরূপে হাঁটিবে, সেইরাপে কথা কহিবে, সেইরাপে হাসিবে, সেইরাপে কাঁদিবে; তোমার জন্মমাতৃত্যু পৰ্যন্ত আমাদের ব্যবস্থার বিপরীত হইতে পরিবে না; যদি হয়, তবে প্ৰায়শিচত্ত করিয়া, আমাদিগকে দক্ষিণা দিও।” জালের এইরােপ সত্ৰ।।*।। কিন্তু পরকে ভ্রান্ত করিতে গেলে আপনিও ভ্রান্ত হইতে হয়; কেন না, ভ্ৰান্তির আলোচনায় ভ্রান্তি অভ্যস্ত হয়। যাহা পরকে বিশ্বাস করাইতে চাহি, তাহাতে নিজের বিশ্বাস দেখাইতে হয়; বিশ্বাস দেখাইতে দেখাইতে যথাৰ্থ বিশ্বাস ঘটিয়া উঠে। যে জালে ব্রাহ্মণেরা ভারতবর্ষকে জড়াইলেন, তাহাতে আপনারাও জড়িত হইলেন। পৌরাবত্তিক প্রমাণে প্রতিপন্ন হইয়াছে যে, মানষের স্বেচ্ছািনবেত্তিতার প্রয়োজনাতিরিক্ত বোধ করিলে সমাজের অবনতি হয়। হিন্দসমাজের অবনতির অন্য যত কারণ নিন্দেশ করিয়াছি, তন্মধ্যে এইটি বোধ হয় প্রধান, অদ্যাপি জাজবল্যমান। ইহাতে রদ্ধ এবং রোধকারী সমান ফলভোগী। নিয়ম-জালে জড়িত হওয়াতে ব্ৰাহ্মণদিগের বিদ্ধিাস্ফীত্তি লিপ্ত হইল। যে ব্ৰাহ্মণ রামায়ণ, মহাভারত, পাণিনি ব্যাকরণ, সাংখ্যদর্শন প্রভৃতির অবতারণা করিয়াছিলেন, তিনি বাসবদত্তা, কাদশবরী, প্রভৃতির প্রমুদ্র গুরুত্ববধ করিতে লাগিলেন। শেষে সে ক্ষমতাও গেল। ব্রাহ্মণদিগের মানস ক্ষেত্র মরভূমি আমরা দেখাইলাম যে, দাইটি প্রাকৃতিক কারণে ভারতবর্ষের শ্রমোপজীবীদের চিরদিন্দশা। প্রথম ভূমির উর্বরতাধিক্য, দ্বিতীয় বায়বাদির তাপাধিক্য। এই দাই কারণে অতি পািব্বকালেও ভারতবর্ষে সভ্যতার উদয় হইয়াছিল। কিন্তু সেই সকল কারণে বেতন অলপ হইয়া উঠিল। এবং গরতের সামাজিক তারতম্য উপস্থিত হইল। ইহার পরিণাম, প্রথম, শ্রমোপজীবীদিগের (১) দারিদ্র্য, (২) মািখতা, (৩) দাসত্ব। দ্বিতীয়, এই দশা একবার উপস্থিত হইলে প্রাকৃতিক নিয়মবলেই স্থায়িত্ব প্রাপ্ত হইল। তৃতীয়, সেই দন্দীশা ক্রমে সমাজের অন্য সকল সম্প্রদায়কে প্রাপ্ত হইল। এক স্রোতে আরোহণ করিয়া ব্রাহ্মণ ক্ষত্ৰিয় বৈশ্য শব্দ্র, একত্রে নিম্নভূমে অবতরণ করিতে লাগিলেন। এক্ষণে জিজ্ঞাস্য হইতে পারে যে, যদি এ সকল অলংঘ্য প্রাকৃতিক নিয়মের ফল, তবে বঙ্গদেশের কৃষকের জন্য চীৎকার করিয়া ফল কি ? রাজা ভাল আইন করিলে কি ভারতবর্ষ। শীতল দেশ হইবে, না জমীদার প্রজাপীড়নে ক্ষান্ত হইলে ভূমি অনব্বারা হইবে ? উত্তর, আমরা যে সকল ফল দেখাইতেছি, তাহা নিত্য নহে। অথবা এইরােপ নিত্য যে, যদি অন্য নিয়মের বলে প্রতিরন্ধ না হয়, তবেই তাহার উৎপত্তি হয়। কিন্তু ঐ সকল ফলোৎপত্তি কারণান্তরে প্রতিষিদ্ধ হইতে পারে। সে সকল কারণ, রাজা ও সমাজের আয়ত্ত। যদি প্রয়োদশ শতাব্দীতে না তৎপরে ইতালিতে গ্ৰীক সাহিত্যাদির আবিস্ক্রিয়া না হইত, তবে এক্ষণকার অবস্থা হইতে ইউরোপের অবস্থা ভিন্ন হইত, সন্দেহ নাই। কিন্তু জলবায়ার শীতোষ্ণতা বা ভূমির উর্বরতা বা অন্য বাহ্য প্রকৃতির কোন কারণের কিছ পরিবত্তন হইত না। bकृथ* अब्रिटछा-आदेन বঙ্গদেশের কৃষকেরা যে দরিদ্র-অন্নবস্ত্রের কাঙ্গাল, তাহা কেবল জমীদারের দোষ নহে। কেবল প্রাকৃতিক নিয়মের ফলে নহে। জমীদারের দোষ, প্রাকৃতিক নিয়মের ফল, রাজবিধির দ্বারা সংশোধিত হইতে পারে। দািব্বলের উপর পীড়ন করা বলবানের স্বভাব। সেই পীড়ন নিবারণ জন্যই রাজত্ব। রাজা বলবান হইতে দৰবলকে রক্ষা করেন, ইহারই জন্য মনষ্যের রাজশাসনশঙ্খলে বদ্ধ হইবার আবশ্যকতা। যদি কোন রাজ্যে দৰবািলকে বলবানে পীড়ন করে, তবে তাহা রাজারই দোষ। সে রাজ্যে রাজা আপন কৰ্ত্তব্যসাধনে হয়। অক্ষম, নয় পরাখমাখ। যদি এ দেশে জমীদারে কৃষককে পীড়িত করেন, ইহা সত্য হয়, তবে তাহাতে ইংরাজ

  • টাকাটার উলটা পিঠ আমি ধৰ্ম্মতত্ত্বে দেখাইয়াছি। উভয় মতই সত্যমলেক ।

908