পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী কেবল বলিলেন যে, “প্রজা প্রভৃতির রক্ষার্থ ও মঙ্গলাৰ্থ গবৰ্ণর জেনারেল যে সকল নিয়ম আবশ্যক বিবেচনা করিবেন, তাহা যখন উপযক্ত সময় বিবেচনা করিবেন, তখনই বিধিবদ্ধ করবেন। তজজন্য জমীদার প্রভৃতি খাজনা আদায় করার পক্ষে কোন আপত্তি করিতে পরিবেন না।”* “বিধিবদ্ধ করবেন” আশা দিলেন, কিন্তু করিলেন না। প্রজারা পরষানক্রমে জমীদার কত্ত্বক পীড়িত হইতে লাগিল, কিন্তু ইংরাজ কিছই করিলেন না। প্রজাদিগের দ্বিতীয়বার অশভগ্রহ। ১৮১৯ সালে কোর্ট অব ডিরেক্টরস লিখিলেন, “যদিও সেই বন্দোবস্তের পর এত বৎসর অতীত হইয়াছে, তথাপি আমরা তৎকালে প্রজাদিগের স্বত্ব নিরূপণ এবং সামঞ্জস্য করিবার যে অধিকার হাতে রাখিয়াছিলাম, তদনযায়ী অদ্যাপি কিছই করা হইল না।” এই আক্ষেপ করিয়াই ক্ষান্ত হইলেন। ১৮৩২ সালে কাফেবল নামক একজন বিচক্ষণ রাজকৰ্ম্মচারী লিখিলেন, “এ অঙ্গীকার অদ্যাপি রাজকীয়া ব্যবস্থামােলার শিরোভাগে বিত্তমান রহিয়াছে, কিন্তু গবৰ্ণমেণ্ট ভ্ৰাম্য ভূস্বামী (প্রজা) দিগের অগ্রে জমীদারকে দাঁড় করাইয়া, তাহদের সহিত সাক্ষাৎ সম্প্ৰবন্ধ উচ্ছেদ করিয়াছেন। সতরাং সে অঙ্গীকার মত কৰ্ম্মম করেন নাই।” বরং তদ্বিপরীতই করিলেন। দািবলকে আরও দাহ্মবল করিলেন, বলবানকে আরও বলবান করিলেন। ১৮১২ সালের ৫ আইনের দ্বারা প্রজার যে কিছ স্বত্ব ছিল, তাহা লোপ করিলেন। এই বিধি হইল যে, জমীদার প্রজাকে যে কোন হারে পাটা দিতে পারিবেন। ইহার অর্থ এই হইল যে, জমীদার যে কোন প্রজার নিকট, যে কোন হারে খাজনা আদায় করিতে পরিবেন। ডিরেকটরেরা স্বয়ং এই অর্থ করিলেন, সতরাং কৃষককে ভূমিতে রাখা না রাখা জমীদারের ইচ্ছাধীন হইল। ভূমির সঙ্গে কৃষকের কোন সম্পবিন্ধ রহিল না। কৃষক মজর হইল। এই তৃতীয় কুগ্রহ। এই ১৮১২ সালের ৫ আইন পািব্বকালের বিখ্যাত “পঞ্জাম”। যদি কেহ প্রজার সব্বস্ব লটিয়া লইতে চাহিত, সে “পঞ্জম” করিত। এখনও আইন। তাই আছে, কেবল সে নামটি নাই। “কোরোক” কি চমৎকার ব্যাপার, তাহা আমরা দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে লিখিয়াছি। সন ১৮১২ সালের ৫ আইনও কোরোকের প্রথম আইন নহে। যে বৎসর জমীদার প্রথম ভূস্বামী হইলেন, সেই বৎসর কোরোকের আইনও প্রথম বিধিবদ্ধ হইল ॥া জমীদার চিরকালই প্রজার ফসল কাড়িয়া লইতেন, কিন্তু ইংরাজেরা প্রথমে সে দস্যুবত্তিকে আইনসঙ্গত করিলেন। অদ্যাপি এই দস্যবিত্তি আইনসঙ্গত। প্রজাদিগের এই চতুর্থ কপালের দোষ। পরে ১৮১২ সালের ১৮ আইন। ৫ আইন তন্দ্বারা আরও স্পষ্টীকৃত হইল। ডিরেকটরেরা লিখিলেন যে, এই আইন অনসারে জমীদারেরা কদিমী প্রজাদিগকেও নিরিকের বিবাদচ্ছলে তাহাদিগের পৈতৃক সম্পত্তি হইতে উচ্ছেদ করিতে পারেন ॥৪ তাহার পর সন ১৮৫৯ সাল পৰ্য্যন্ত আর কোন দিকে কিছর হইল না। ১৮৫৯ সালে বিখ্যাত দশ আইনের সন্টি হইল। ইংরাজ কর্তৃক প্রজার উপকারার্থ এই প্রথম নিয়মসংস্থাপন হইল। ১৭৯৩ সালে কণাওয়ালিস যে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন, প্রায় ৭০ বৎসর পরে প্রাতঃস্মরণীয় লর্ড কানিঙ হইতে প্রথম তাহার কিঞ্চিৎমাত্র পরিণ হইল। সেই পরিণ প্ৰথম, সেই পরিণই শেষ। তাহার পর আর কিছ হয় নাই। সন ১৮৬৯ সালের ৮ আইন দশ আইনের অনলিপিমাত্র ক্ষ* ১৮৫৯ সালের দশ আইনও যে প্রজাদিগের বিশেষ মঙ্গলকর, এমত আমরা বলি না। প্রজাদিগের যাহা ছিল, তাহা তাহারা আর পাইল না। তাহাদিগের উপর যে সকল অত্যাচার

  • ১৭৯৩ সালের ১ আইনের ৮। ধারা। l Revenue Letter to Bengal, 9th May, 1821, para 54,
  • সন ১৭৯৩ সালের ১৮ আইনের ২ ধারা। S Revenue Letter, 9th May, 1821, para 54.

যখন এই প্রবন্ধ লিখিত হয় তখন নািতন Tenancy Act প্রচারিত হয় নাই। ** এই সকল তত্ত্ব যাঁহারা সবিস্তারে অবগত হইতে ইচ্ছা করেন, তাঁহারা শ্ৰীযক্ত বাকী সঞ্জীবচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায় প্রণীত “বঙ্গীয় প্রজা” (Bengal Ryox") নামক গ্রন্থ পাঠ করবেন। আমরা এ প্রবন্ধের এ অংশের কতক কতক সেই গ্ৰন্থ হইতে সঙ্কলিত করিয়াছি। V9Qy