পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বঙ্গদেশের কৃষক গহিণী কিরােপ জলযোগের আয়োজন করিয়া রাখিয়াছেন, তাহাই ভাবিতেছিলেন। জজ সাহেব যখন দিবোধ্য বাঙ্গালায় “চাষ্য” দিতেছেন, তখন তাঁহারা মনে মনে জজ সাহেবের দাড়ির পাকা চুলগীলিন গণিতেছিলেন। জজ সাহেব যে শেষে বলিলেন, “সন্দেহের ফল প্রতিবাদী পাইবে,” তাহাই কেবল ক্যানে গেল। জািরর মহাশয়দিগের সকলই সন্দেহ-কিছই শানেন নাই, কিছই বাঝেন নাই; শনিয়া বঝিয়া একটা কিছ. স্থির করা অভ্যাস নাই, হয় তা সে শক্তিও নাই, সতরাং সন্দেহের ফল প্রতিবাদীকেই দিলেন। গোমস্তা মহাশয় খালাস হইয়া আবার কাছাড়িতে গিয়া জমকিয়া বসিলেন। ভয়ে বাদী সবংশে ফেরার হইল। যাহারা দোষীর বিরদ্ধে সাক্ষ্য দিয়াছিল, গোমস্তা তাহদের ভিটামাটি লোপ করিলেন। আমরা বড় সন্তুষ্ট হইলামকেন না, জরির বিচার হইয়াছে—বিলাতি প্রথানসারে বিচার হইয়াছে—আমরা বড় সভ্য হইয়া ऐठिंशाळू ॥ বৰ্ত্তমান আইনের এইরূপ অযৌক্তিকতা এবং জটিলতা অবিচারের চতুৰ্থ কারণ। পশ্চিম কারণ, বিচারকবগের অযোগ্যতা। এদেশের প্রধানতম বিচারকেরা সকলেই ইংরাজ । ইংরাজেরা সচরাচর কাৰ্য্যদক্ষ, সশিক্ষিত, এবং সদানন্ঠাতা। কিন্তু তাহা হইলেও বিচারকায্যে তাহাদিগের তােদশ যোগ্যতা নাই। কেন না, তাঁহারা বিদেশী, এ দেশের অবস্থা তাদশে অবগত নহেন, এ দেশের লোকের চরিত্র বাঝেন না, তাহাদিগের সহিত সহৃদয়তা নাই, এবং অনেকে এ দেশের ভাষাও ভাল করিয়া বাঝেন না। সতরাং সবিচার করিতে পারেন না। বিচারকাষের জন্য যে বিশেষ শিক্ষা আবশ্যক, তাহা অনেকেরই হয় নাই। কেহ কেহ বলিতে পারেন যে, অধিকাংশ মোকদ্দমাই অধস্তন বিচারকের দ্বারা নিজপক্ষ হইয়া থাকে, এবং অধিকাংশ অধস্তন বিচারকই এ দেশীয়-তবে উপরিস্থ জন কতক ইংরাজ বিচারকের দ্বারা অধিক বিচারহানি সম্ভবে না। ইহার উত্তর, প্রথমতঃ সকল বাঙ্গালী বিচারকই বিচারকায্যের যোগ্য নহেন। বাঙ্গালী বিচারকের মধ্যে অনেকে মািখ, স্থলবদ্ধি, অশিক্ষিত, অথবা অসৎ। এ সম্প্রদায়ের বিচারক সৌভাগ্যক্রমে দিন দিন অলপসংখ্যক হইতেছেন। তথাপি বিশেষ সংযোগ্য বাঙ্গালীরা বিচারক শ্রেণীভুক্ত নহেন। ইহার কারণ, এ দেশীয় বিচারকের উন্নতি নাই, পদবদ্ধি নাই; যাঁহারা ওকালতি করিয়া অধিক উপাত্তজনে সক্ষম, সে সকল ক্ষমতাশালী লোক বিচারকের পদের প্রাথী হয়েন না। সতরাং সচরাচর মধ্যম শ্রেণীর লোক এবং অধম শ্রেণীর লোকই ইহাতে প্রবত্ত হয়েন। দ্বিতীয়তঃ, অধস্তন বিচারকে সবিচার করিলে কি হইবে ? আপীলে চড়ান্ত বিচার ইংরাজের হাতে। নীচে সবিচার হইলেও উপরে অবিচার হয়, এবং সেই অবিচারই চডান্ত। অনেক বিচারক সবিচার করিতে পারিলেও আপীলের ভয়ে করেন না; যাহা আপীলে থাকিবে, তাহাঁই করেন। এ বিষয়ে হাইকোট অনেক সময় বিশেষ অনিন্টিকর। তাঁহারা অধস্তন বিচারক বগকে বিচারপদ্ধতি দেখাইয়া দেন, আইন বঝাইয়া দেন :- বলেন, এইরপে বিচার করিও, এই আইনের অর্থ এইরােপ বঝিও। অনেক সময়ে এই সকল বিধি ভ্ৰমাত্মক-কখন কখন হাস্যাস্পদও হইয়া উঠে। কিন্তু অধস্তন বিচারকদিগকে তদনবিত্তীর্ণ হইয়া চলিতে হয়। হাইকোর্টের জজীদিগের অপেক্ষা ভাল বাঝেন, এমন সবডিনেট জজ, মন্সেফ ও ডেপটি ম্যাজিস্ট্রেট অনেক আছেন; কিন্তু তাঁহাদিগকে অপেক্ষাকৃত অবিজ্ঞাদিগের নিন্দেশবত্তীর্ণ হইয়া চলিতে হয়। এই প্ৰবন্ধ লিপিবদ্ধ হইলে পর “সমাজদাপািণ” নামে একখানি অভিনব সংবাদপত্র দটি করিলাম। তাহাতে “বঙ্গদশন ও জমীদারগণ” এই শিরোনামে একটি প্রস্তাব আছে, আমাদিগের এই প্রবন্ধের পািকব পরিচ্ছেদের উপলক্ষে উহা লিখিত হইয়াছে। তাহা হইতে দই একটি কথা উদ্ধত করিতে ইচ্ছা করি; কেন না, লেখক যেরূপে বিবেচনা করিয়াছেন, অনেকেই সেইরাপ বিবেচনা করেন বা করিতে পারেন। তিনি বলেন “একেই তা দশশালা বন্দোবস্তের চতুদিকে গত্তি খনন করা হইয়াছে, তাহাতে বঙ্গদর্শনের মত দই এক জন সম্প্রান্ত বিচক্ষণ বাঙ্গালীর অন্যামোদন বঝিলে কি আর রক্ষা আছে ?” আমরা পরিস্কার কারিয়া বলিতে পারি যে, দশশালা বন্দোবস্তের ধবংস আমাদিগের কামনা নহে বা তাহার অন্যামোদনও করি না। ১৭৯৩ সালে যে ভ্ৰম ঘটিয়াছিল, এক্ষণে তাহায় সংশোধন সম্ভাবে না। সেই ভ্ৰান্তির উপরে আধনিক বঙ্গসমাজ নিশ্চিমত হইয়াছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ধবংসে বঙ্গসমাজের ঘোরতর বিশােখলা উপস্থিত হইবার সম্ভাবনা। আমরা সামাজিক OS