পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बस्किम ब्रश्नावली চতুর্থ। পরাধীন রাজ্যের যে দদশা ঘটে, স্বাধীন পাঠানীদিগের রাজ্যে বাঙ্গালার সে দদশা ঘটে নাই। রাজা ৬ষ গুৰুতীয় হইলেই রাজ্যকে পরাধীন বলিতে পারা যায় না। সে সময়ের জমীদারদিগের যেরপ বৰ্ণনা দেখিতে পাওয়া যায়, তাহাতে তাঁহাদিগকেই রাজা বলিয়া বোধ হয়; তাঁহারা করদ ছিলেন মাত্র। পরাধীনতার একটি প্রধান ফল ইতিহাসে এই শানা যায় যে, পরাধীন জাতির মানসিক সাফাত্তি নিবিয়া যায়। পাঠানশাসনকালে বাঙ্গালীর মানসিক দীপ্তি অধিকতর উত্তজবল হইয়াছিল। বিদ্যাপতি চন্ডীদাস বাঙ্গালার শ্রেষ্ঠ কবিদ্বয় এই সময়েই আবির্ভূত; এই সময়েই অদ্বিতীয় নৈয়ায়িক, ন্যায়শাস্ত্রের নাতন সন্টিকত্তা রঘনাথ শিরোমণি; এই সময়ে সমাত্তি তিলক রঘানন্দন; এই সময়েই চৈতন্যদেব; এই সময়েই বৈষ্ণবগোস্বামীদিগের অপব্ব গ্রন্থাবলী-চৈতন্যদেবের পরগামী অপব্ব বৈষ্ণবসাহিত্য। পঞ্চদশ ও ষোড়শ খীস্টশতাব্দীর মধ্যেই ইহাদিগের সকলেরই আবিভােব। এই দাই শতাব্দীতে বাঙ্গালীর মানসিক জ্যোতিতে বাঙ্গালার যেরাপ মখোেজবল হইয়াছিল, সেরাপ তৎপর্বে বা তৎপরে আর কখনও হয় নাই । সেই সময়ের বাহ্য সৌষ্ঠব সম্বন্ধে রাজকৃষ্ণবাব কি বলিতেছেন, তাহাও শােনন। “লিখিত আছে যে, হোসেন শাহার রােজ্যারম্ভ সময়ে এতদেশীয় ধনিগণ সবণপাত্রে ব্যবহার করিতেন, এবং যিনি নিমন্ত্রিতসভায় যত সবৰ্ণপাত্র দেখাইতে পারিতেন, তিনি তত ময্যাদা পাইতেন। গৌড় ও পান্ডুয়া প্রভৃতি স্থানে যে সকল সম্পপণ্য বা ভগ্ন অট্টালিকা লক্ষিত হয়, তন্দ্বারাও তাৎকালিক বাঙ্গালার ঐশ্বৰ্য্য শিলপনৈপণ্যের বিলক্ষণ পরিচয় পাওয়া যায়। বাস্তবিক তখন এ দেশে স্থাপত্যবিদ্যার আশ্চৰ্য্যরােপ উন্নতি হইয়াছিল এবং গৌড়ে যেখানে সেখানে মাত্তিকা খনন করিলে যেরপে ইন্টক দন্ট হয়, তাহাতে অনমান হয় যে, নগরবাসী বহসংখ্যক ব্যক্তি ইন্টকনিমিত গহে বাস করিত।*।। দেশে অনেক ভূম্যধিকারী ছিলেন এবং তাঁহাদিগের বিস্তর ক্ষমতা ছিল; পাঠানরাজ্য ধন্বংসের কিয়ৎকাল পরে সঙ্কলিত আইন আকবরিতে লিখিত আছে যে, বাঙ্গালার জমীদারেরা ২৩,৩৩০ অশ্বারোহী, ৮, o১,১৫৮ পদাতিক, ১৮o গজ, ৪.২৬o কামান এবং ৪,৪০o নৌকা দিয়া থাকেন। এরপ যাদ্ধের উপকরণ যাহাদিগের ছিল তাহাদিগের পরাক্রম নিতান্ত কম ছিল না।” পশ্চিম। অতএব দেখা যাইতেছে যে, যে আকবর বাদশাহের আমরা শতমখে প্রশংসা করিয়া থাকি, তিনিই বাঙ্গালার কাল। তিনিই প্রথম প্রকৃতপক্ষে বাঙ্গালাকে পরাধীন করেন। সেই দিন হইতে বাঙ্গালার শ্ৰীহানির আরম্ভ। মোগল পাঠানের মধ্যে আমরা মোগলের অধিক সম্পদ দেখিয়া মািন্ধ হইয়া মোগলের জয় গাইয়া থাকি, কিন্তু মোগলই আমাদের শত্র, পাঠান আমাদের মিত্র। মোগলের অধিকারের পর হইতে ইংরেজের শাসন পয্যন্ত একখানি ভাল গ্রন্থ বঙ্গদেশে জন্মে নাই। যে দিন হইতে দিল্লীর মোগলের সাম্রাজ্যে ভুক্ত হইয়া বাঙ্গালা দরবস্থা প্রাপ্ত হইল, সেই দিন হইতে বাঙ্গালার ধন আর বাঙ্গালায় রহিল না, দিল্লীর বা আগ্রার ব্যয়নিকবাহাৰ্থ প্রেরিত হইতে লাগিল। যখন আমরা তাজমহলের আশচয্য রমণীয়তা দেখিয়া আহাদসাগরে ভাসি, তখন কি কোন বাঙ্গালীর মনে হয় যে, যে সকল রাজ্যের রক্তশোষণ করিয়া এই রত্নমন্দির নিশ্চিমত হইয়াছে, বাঙ্গালা তাহার অগ্রগণ্য ? তক্ততাউসের কথা পড়িয়া যখন মোগলের প্রশংসা করি, তখন কি মনে হয়, বাঙ্গালার কত ধন তাহাতে লাগিয়াছে ? যখন জমা মসজিদ, সেকান্দরা, ফতেপারসিকরি বা বৈজয়ন্ততুল্য শাহ জাহানাবাদের ভগ্নাবশেষ দেখিয়া মোগলের জন্য দঃখ হয়, তখন কি মনে হয় যে, বাঙ্গালার কত ধন সে সবে ক্ষয় হইয়াছে ? যখন শনি যে, নাদের শাহা বা মহারাষ্ট্ৰীয় দিল্পী লািঠ করিল, তখন কি মনে হয়, বাঙ্গালার ধনও তাহারা লািঠ করিয়াছে ? বাঙ্গালার ঐশ্বৰ্য্য দিল্লীর পথে গিয়াছে; সে পথে বাঙ্গালার ধন ইরান তুরান পৰ্যন্ত গিয়াছে। বাঙ্গালার সৌভাগ্য মোগল কত্ত্বক বিলপ্ত হইয়াছে। বাঙ্গালায় হিন্দরে অনেক

  • গৌড়ের ইন্টক লইয়া, মালদহ, ইংরেজবাজার, ভোলাহাট, রাইপার, গিলাবাড়ী, কাসিমপর প্রভৃতি অনেকগলি নগর নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। এই সকল নগর অট্টালিকাপণ, কিন্তু তথায় অন্য কোন ইন্টক ব্যবহৃত হয় নাই। গৌড়ের ইন্টক মরশিদাবাদের ও রাজমহলের নিশ্চমাণেও লাগিয়াছে। এখনও যাহা আছে আৰু জরিমিত। গৌড়ের ভগ্নাবশেষের বিস্তর দেখিয়া বােধ হয় যে, কলকাতা অপেক্ষ গোঁড় অনেক বড় ছিল।

OOR