পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী চতুস্পদমধ্যে বানরদিগের সঙ্গে মনষ্যগণের বিশেষ সাব্দশ্য। পন্ডিতেরা বলেন যে, কালক্রমে দিগের অবয়বের উৎকর্ষ জন্মিতে থাকে; এক অবয়বের পশম ক্রমে অন্য উৎকৃষ্টতর পশর আকার প্রাপ্ত হয়। আমাদিগের ভরসা আছে যে, মনষ্য-পশও কালপ্রভাবে লাঙ্গ হইয়া ক্ৰমে বােনর হইয়া উঠিবে। মনষ্য-পশ, যে অত্যন্ত সদস্যবাদ, এবং সভক্ষ্য, তাহা আপনারা বোধ হয়, সকলেই অবগত আছেন। (শনিয়া সভ্যগণ সকলে আপনি আপন মািখ চাটিলেন)। তাহারা সচরাচর অনায়াসেই মারা পড়ে। মাগাদির ন্যায় তাহারা দ্রুত পলায়নে সক্ষম নহে, অথচ মহিষাদির ন্যায় বলবান বা শঙ্গাদি আয়ন্ধ-যক্তি নহে। জগদীশ্বর এই জগৎ-সংসার ব্যাঘ্ৰজাতির সখের জন্য সন্টি করিয়াছেন, সন্দেহ নাই। সেই জন্য ব্যান্ত্রের উপাদেয় ভোজ্য পশকে পলায়নের বা আত্মরক্ষার ক্ষমতা পর্যন্ত দেন নাই। বাস্তবিক মনষ্যজাতি যেরপ অরক্ষিত-নখ-দন্ত শঙ্গাদি বাডিজত, গমনে মন্থর এবং কোমলপ্ৰকৃতি, তাহা দেখিয়া বিস্মিত হইতে হয় যে, কি জন্য ঈশ্বর ইহাদিগকে সন্টি করিয়াছেন। ব্যাঘ্রজাতির সেবা ভিন্ন ইহাদিগের জীবনের কোন উদ্দেশ্য দেখা যায় না। এই সকল কারণে, বিশেষ তাহাদিগের মাংসের কোমলতা হেতু, আমরা মনষ্যে জাতিকে বড় ভালবাসি। দস্টি মাত্রেই ধরিয়া খাই। আশচয্যের বিষয় এই যে, তাহারাও বড় ব্যাঘ্ৰভক্ত। এই কথায় যদি আপনারা বিশ্বাস না করেন, তবে তাহার উদাহরণ সম্বরপ আমার যাহা ঘটিয়াছিল, তদ্বত্তান্ত বলি। আপনারা অবগত আছেন, আমি বহকালাবধি দেশ ভ্ৰমণ করিয়া বহােদশী হইয়াছি। আমি যে দেশে প্রবাসে ছিলাম, সে দেশ এই বাস্ত্ৰভূমি সন্দরবনের উত্তরে আছে। তথায় গো মনষ্যাদি ক্ষদ্রাশয় অহিংস্র পশ্যগণই বাস করে। তথাকার মনষ্যে দ্বিবিধ: এক জাতি কৃষ্ণবৰ্ণ, এক জাতি শ্বেতবর্ণ। একদা আমি সেই দেশে বিষয়কম্পেমাপলক্ষে গমন করিয়াছিলাম।” শনিয়া মহাদংষ্ট্রানামে একজন উদ্ধতস্বভাব ব্যাঘ্র জিজ্ঞাসা করিলেন,-“বিষয়কম্পমাটা কি ?” বহল্লাঙ্গল মহাশয় কহিলেন, “বিষয়কৰ্ম্ম, আহারান্বেষণ। এখন সভ্যলোকে আহারান্বেষণকে বিষয়কম বলে। ফলে সকলেই যে আহারান্বেষণকে বিষয়কৰ্ম্মম বলে, এমত নহে। সম্ভ্রান্ত লোকের আহারান্বেষণের নাম বিষয়কম্পমা, অসম্পন্দ্রান্তের আহারান্বেষণের নাম জয়াচুরি, উষ্ণুবত্তি এবং ভিক্ষা। ধৰ্ত্তের আহারান্বেষণের নাম চুরি ; বলবানের আহারান্বেষণ দস্যতা; লোকবিশেষে দস্যতা শব্দ ব্যবহার হয় না; তৎপরিবত্তে বীরত্ব বলিতে হয়। যে দস্যর দন্ডপ্রণেতা। আছে, সেই দস্যর কায্যের নাম দস্যতা: যে দস্যর দন্ডপ্রণেতা নাই, তাহার দস্যতার নাম বীরত্ব। আপনারা যখন সভ্যসমাজে অধিস্ঠিত হইবেন, তখন এই সকল নামবৈচিত্র্য সমরণ রাখিবেন, নচেৎ লোকে অসভ্য বলিবো। বস্তুতঃ আমার বিবেচনায় এত বৈচিত্র্যের প্রয়োজন নাই; এক উদর-পজা নাম রাখিলেই বীরত্বাদি সকল বঝাইতে পারে। সে যাহাই হউক, যাহা বলিতেছিলাম, শ্রবণ করান। মনষ্যেরা বড় ব্যাঘভক্ত। আমি একদা মনষ্যেবসতি মধ্যে বিষয়কম্পেমাপলক্ষে গিয়াছিলাম। শনিয়াছেন, কয়েক বৎসর হইল, এই সন্দরবনে পোর্ট ক্যানিং काम्लान छा°िऊ श्देशाछिल।” মহাদংষ্ট্ৰা বক্তৃতা বন্ধ করাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “পোর্ট ক্যানিং কোম্পানি কিরােপ জন্তু ?” বহল্লাঙ্গল কহিলেন, “তাহা আমি সবিশেষ অবগত নাহি। ঐ জন্তুর আকার, হস্তপদাদি কিরাপ, জিঘাংসাই বা কেমন ছিল, ঐ সকল আমরা অবগত নাহি। শনিয়াছি, ঐ জন্তু মনষ্যের প্রতিষ্ঠিত; মনষ্যদিগেরই হৃদয় শোণিত পান করিত; এবং তাহাতে বড় মোটা হইয়া মরিয়া গিয়াছে। মনষ্যেজাতি অত্যন্ত অপরিণামদশী। আপনি আপনি বধোপায় সম্পূর্বদা আপনারাই সজন করিয়া থাকে। মনষ্যেরা যে সকল অস্ত্ৰাদি ব্যবহার করিয়া থাকে, সেই সকল অস্ত্রই এ কথার প্রমাণ। মনষ্যেবধই ঐ সকল অস্ত্রের উদ্দেশ্য। শনিয়াছি, কখন কখন সহস্ৰ সহস্র মনষ্য প্রান্তরমধ্যে সমবেত হইয়া ঐ সকল অস্ত্রাদির দ্বারা পরস্পর প্রহার করিয়া বধ করে। আমার বোধ হয়, মনষ্যগণ পরস্পরের বিনাশাের্থ এই পোর্ট ক্যানিং কোম্পানি নামক রাক্ষসের সােজন করিয়াছিল। সে যাহাঁই হউক, আপনারা স্থির হইয়া এই মনীষা-বত্তান্ত শ্রবণ করান। মধ্যে মধ্যে রসভঙ্গ করিয়া প্রশন জিজ্ঞাসা করিলে বক্তৃতা হয় না। সভ্যজাতিদিগের এরপ নিয়ম নহে। আমরা এক্ষণে সভ্য হইয়াছি, সকল কাজে সভ্যদিগের নিয়মানসারে চলা ভাল। আমি একদা সেই পোট ক্যানিং কোম্পানির বাসস্থান মাতলায় বিষয়কম্পেমাপলক্ষে গিয়াছিলাম। তথায় এক বংশমণ্ডপ-মধ্যে একটা কোমল মাংসযক্ত নািতশীল ছাগবৎস দণ্টি করিয়া