পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোক রহস্য পরে তাঁহারা অন্য একদিন সকলে পরামর্শ করিয়া আহারান্তে সভার অধিবেশন করিলেন। সে দিন নিবিবাঘের সভার কার্য্য সম্পন্ন হইয়া প্রবন্ধের অবশিস্টং বিজ্ঞাপনী প্রাপ্ত হইলে, আমরা প্রকাশ করিব। শ পঠিত হইল। তাহার দ্বিতীয় প্রবন্ধ সভাপতি মহাশয়, বাঘিনীগণ, এবং ভদ্র ব্যাঘ্রগণ! আমি প্রথম বক্তৃতায় অঙ্গীকার করিয়াছিলাম যে, মানষের বিবাহপ্রণালী এবং অন্যান্য বিষয় সম্পবন্ধে কিছ বলিব। ভদ্রের অঙ্গীকার পালনই প্রধান ধৰ্ম্ম। অতএব আমি একবারেই আমার বিষয়ে প্রবেশ করিলাম। বিবাহ কাহাকে বলে, আপনারা সকলেই অবগত আছেন। সকলেই মধ্যে মধ্যে অবকাশ মতে বিবাহ করিয়া থাকেন। কিন্তু মনষ্যবিবাহে কিছ বৈচিত্ৰ্য আছে। ব্যাঘ্র প্রভৃতি সভ্য পশদিগের দারপরিগ্রহ কেবল প্রয়োজনাধীন, মনীষাপশার সেরাপ নহে-তাহদের মধ্যে অনেকেই এককালীন জন্মের মত বিবাহ কারিয়া রাখে। মনষ্যবিবাহ দ্বিবিধ-নিত্য এবং নৈমিত্তিক। তন্মধ্যে নিত্য অথবা পৌরোহিত্য বিবাহই মান্য। পরোহিতকে মধ্যবত্তীর্ণ করিয়া যে বিবাহ সম্পন্ন হইয়া থাকে, তাহাই পৌরোহিত বিবাহ। भशप्रश्gी। श्रद्धाश्ऊि कि ? বহল্লাঙ্গল। অভিধানে লেখে, পরোহিত চালকলাভোজী বগুনাব্যবসায়ী মনষ্যবিশেষ। কিন্তু এই ব্যাখ্যা দন্ট। কেন না, সকল পরোহিত চালকলাভোজী নহে, অনেক পরোহিত মদ্য মাংস খাইয়া থাকেন; অনেক পরোহিত সৰ্ব্বভুক। পক্ষান্তরে চালকলা খাইলেই পরোহিত হয়, এমত নহে। বারাণসী নামক নগরে অনেকগালিন ষাঁড় আছে—তাহারা চালকলা খাইয়া থাকে। তাহারা পরোহিত নহে, তাহার কারণ তাহারা বণ্ডক নহে। বণ্ডকে যদি চালকলা খায়, তাহা হইলেই পরোহিত হয়। পৌরোহিত বিবাহে এইরহপ একজন পরোহিত বীরকন্যার মধ্যবত্তীর্ণ হইয়া বসে। বসিয়া কতকগলা বকে। এই বক্তৃতাকে মন্ত্র বলে। তাহার অর্থ কি, আমি সবিশেষ অবগত নহি, কিন্তু আমি যেরপ পশ্চিডত, তাহাতে ঐ সকল মন্ত্রের একপ্রকার অর্থ মনে মনে অনভূত করিয়াছি। বোধ হয়, পরোহিত বলে, “হে বীরকন্যা! আমি আজ্ঞা করিতেছি, তোমরা বিবাহ করা। তোমরা বিবাহ করিলে, আমি নিত্য চালকলা পাইব-অতএব তোমরা বিবাহ করা। এই কন্যার গভধানে, সীমান্তোন্নয়নে, সাঁতিকাগারে, চালকলা পাইব-অতএব তোমরা বিবাহ করা। সন্তানের ষাঠীপজায়, অন্নপ্রাশনে, কণীবোধে, চড়াকরণে বা উপনয়নে-অনেক চালকলা পাইব, অতএব তোমরা বিবাহ করা। তোমরা সংসারধৰ্ম্মে প্রবত্ত হইলে, সব্বদা ব্ৰত নিয়মে, পাজা পাৰ্ব্বণে যাগ যজ্ঞে রত হইবে, সতরাং আমি চালকলা পাইব, অতএব তোমরা বিবাহ করা। বিবাহ কর, কখন এ বিবাহ রহিত করিও না। যদি রহিত কর, তবে আমার চালকলার বিশেষ বিঘা হইবে। তাহা হইলে এক এক চপেটাঘাতে তোমাদের মন্ডপাত করিব। আমাদের পািব্ব পরিষদিগের এইরপ আজ্ঞা।” বোধ হয়, এই শাসনের জন্যই পৌরোহিত বিবাহ কখন রহিত হয় না। আমাদিগের মধ্যে যে বিবাহপ্রথা প্রচলিত আছে, তাহাকে নৈমিত্তিক বিবাহ বলা যায়। মনকেষ্যমধ্যে এরপ বিবাহও সচরাচর প্রচলিত। অনেক মনষ্য এবং মানবী, নিত্য নৈমিত্তিক উভয়বিধ বিবাহ করিয়া থাকে। কিন্তু নিত্য নৈমিত্তিক বিবাহে বিশেষ প্রভেদ এই যে নিত্য বিবাহ কেহ গোপন করে না, নৈমিত্তিক বিবাহ সকলেই প্ৰাণপণে গোপন করে। যদি একজন মনষ্য অন্য মনষ্যের নৈমিত্তিক বিবাহের কথা জানিতে পারে, তাহা হইলে কখন কখন তাহাকে ধরিয়া প্রহার করে। আমার বিবেচনায় পরোহিতরাই এই অনার্থের মািল। নৈমিত্তিক বিবাহে তাহারা চালকলা পায় না-সতরাং ইহার দমনই তাহদের উদ্দেশ্য- তাহদের শিক্ষামতে সকলেই নৈমিত্তিকবিবাহকারীকে ধরিয়া প্রহার করে। কিন্তু বিশেষ চমৎকার এই যে, অনেকেই গোপনে স্বয়ং নৈমিত্তিক বিবাহ করে, অথচ পরকে নৈমিত্তিক বিবাহ করতে দেখিলে ধরিয়া প্রহার করে! ইহাতে আমার বিবেচনা হইতেছে যে, অনেক মনীষাই নৈমিত্তিক বিবাহে সম্মত, তবে পরোহিত প্রভৃতির ভয়ে মািখ ফাটিতে পারে না। আমি মনষ্যালয়ে বাসকালীন জানিয়া