পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকরূহুল্য দশী-সব্বদাই পরস্পরের অমঙ্গল চেন্টা করে। অতএব তাহারা অবিরত রূপার চাকি ও তামার চাকি সংগ্রহের চেন্টায় কুমারের চাকের ন্যায় ঘরিয়া বেড়ায়। মনষ্যদিগের বিবাহতত্ত্ব যেমন কৌতুকাবহী, অন্যান্য বিষয়ও তদুপ। তবে, পাছে দীঘ বক্তৃতা করিলে, আপনাদিগের বিষয়কক্ষেমর সময় পািনরপেস্থিত হয়, এই জন্য অদ্য এইখানে সমাধা করিলাম। ভবিষ্যতে যদি অবকাশ হয়, তবে অন্যান্য বিষয়ে কিছ বলিব। এইরুপে বস্তৃতা সমাধা করিয়া পশিডতবর ব্যাঘাচাৰ্য্য বহল্লাঙ্গল, বিপােল। লাঙ্গলচটচটারবমধ্যে উপবেশন করিলেন। তখন দীঘনিখ নামে এক সশিক্ষিত যাবা ব্যাঘ, গাত্ৰোখান করিয়া, হাউ মাউ শব্দে বিতকা আরম্ভ করিলেন। দীঘনিখ মহাশয় গজানান্তে বলিলেন, “হে ভদ্র ব্যাঘ্রগণ! আমি অদ্য বক্তার সদ্বক্তৃতার জন্য তাঁহাকে ধন্যবাদ দিবার প্রস্তাব করি। কিন্তু ইহা বলাও কৰ্ত্তব্য যে, বক্তৃতাটি নিতান্ত মন্দ ; মিথ্যাকথা পরিপািণ, এবং বক্তা অতি গন্ডমািখ।” অমিতোদর। আপনি শান্ত হউন। সভ্যজাতীয়েরা অত সম্পন্ট করিয়া গালি দেয় না। প্রচ্ছন্নভাবে আপনি আরও গরতের গালি দিতে পারেন। দীঘনিখ। যে আজ্ঞা। বক্তা অতি সত্যবাদী, তিনি যাহা বলিলেন, তাহার মধ্যে অধিকাংশ কথা অপ্রকৃত হইলেও, দই একটা সত্য কথা পাওয়া যায়। তিনি অতি সপন্ডিত ব্যক্তি। অনেকেই মনে করিতে পারেন যে, এই বক্তৃতার মধ্যে বক্তব্য কিছই নাই। কিন্তু আমরা যাহা পাইলাম, তাহার জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। তবে বক্তৃতার সকল কথায় সম্পমতি প্রকাশ করিতে পারি না। বিশেষ, আদৌ মনষ্যেমধ্যে বিবাহ কাহাকে বলে, বক্তা তাহাই অবগত নহেন। ব্যাঘ্রজাতির কুলরক্ষার্থ যদি কোন বাঘ কোন বাঘিনীকে আপনি সহচরী করে (সহচরী, সঙ্গে চরে) তাহাকেই আমরা বিবাহ বলি। মানষের বিবাহ সেরাপ নহে। মানষে স্বভাবতঃ দৰবল এবং প্রভুভক্ত। সতরাং প্রত্যেক মনষ্যের এক একটি প্ৰভু চাহি। সকল মনীষাই এক একজন সত্ৰীলোককে আপন প্ৰভু বলিয়া নিযক্ত করে। ইহাকেই তাহারা বিবাহ বলে। যখন তাহারা কাহাকে সাক্ষী রাখিয়া প্ৰভু নিয়োগ করে, তখন সে বিবাহকে পৌরোহিত বিবাহ বলা যায়। সাক্ষীর নাম পরোহিত। বহল্লাঙ্গল মহাশয় বিবােহমন্ত্রের যে ব্যাখ্যা করিয়াছেন, তাহা অযথাৰ্থ। সে মন্ত্র এইরহপ:- পরোহিত। বল, আমাকে কি বিষয়ের সাক্ষী হইতে হইবে ? বর। সাক্ষী থাকুন, আমি এই সত্ৰীলোকটিকে জন্মের মত আমার প্রভুত্বে নিযক্ত করিলাম। পরো। আর কি ? বর। আর আমি জন্মের মত ইহার শ্ৰীচরণের গোলাম হইলাম। আহার যোগানের ভার আমার উপর;-খাইবার ভার উপহার উপর। পরো। (কন্যার প্রতি) তুমি কি বল ? কন্যা। আমি ইচ্ছাক্রমে এই ভূত্যটিকে গ্রহণ করিলাম। যত দিন ইচ্ছা হইবে, চরণসেবা করিতে দিব। যে দিন ইচ্ছা না হইবে, সে দিন নাতি মারিয়া তাড়াইয়া দিব। পরো। শািভমন্থ। এইরােপ আরও অনেক ভুল আছে। যথা, মাদ্রাকে বক্তা মনীষাপজিত দেবতা বলিয়া বৰ্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু বাস্তবিক উহা দেবতা নহে। মাদ্রা একপ্রকার বিষচক্ৰ। মনষ্যেরা অত্যন্ত বিষপ্রিয়; এই জন্য সচরাচর মাদ্রাসংগ্ৰহজন্য যত্নবান। মনষ্যেগণকে মাদ্রাভক্ত জানিয়া আমি পর্বে বিবেচনা করিয়াছিলাম যে, “না জানি, মাদ্রা কেমনই উপাদেয় সামগ্রী; আমাকে একদিন খাইয়া দেখিতে হইবে।” একদা বিদ্যাধরী নদীর তীরে একটা মনীষাকে হত করিয়া ভোজন করিবার সময়ে, তাহার বসত্রিমধ্যে কয়েকটা মাদ্রা পাইলাম। পাইবামাত্র উদরাসাৎ করিলাম। পরদিবস উদরের পীড়া উপস্থিত হইল। সতরাং মাদ্রা যে এক প্রকার বিষ, তাহাতে সংশয় কি ? দীঘনিখ এইরূপে বক্তৃতা সমাপন করিলে পর অন্যান্য ব্যাঘ্র মহাশয়েরা উঠিয়া বক্তৃতা করিলেন। পরে সভাপতি আমিতোদর মহাশয় বলিতে লাগিলেন :- “এক্ষণে রাত্রি অধিক হইয়াছে, বিষয়কম্পেমর সময় উপস্থিত। বিশেষ, হরিণের পাল কখন আইসে, তাহার স্থিরতা কি ? অতএব দীঘ বক্তৃতা করিয়া কালাহরণ। কৰ্ত্তব্য নহে। বক্তৃতা অতি উত্তম হইয়াছে—এবং বহল্লাঙ্গল মহাশয়ের নিকট আমরা বড় বাধিত হইলাম। এক কথা এই G