পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রমোপজীবী, তাহারা ইহাদিগের বশবত্তী হইয়া শ্রম করে। অতএব প্রথমেই বৈষম্য উপস্থিত হইল। কিন্তু এ বৈষম্য প্রাকৃতিক, ইহার উচ্ছেদ সম্ভবে না। এবং উচ্ছেদ মঙ্গলকরও নহে। বদ্ধপজীবীর জ্ঞান ও বদ্ধির দ্বারা শ্রমোপজীবীরা উপকৃত হয়, পরিস্কারস্বরপ উহারা শ্রমোপজীবীর অভিজাত ধনের অংশ গ্রহণ করে ; শ্রমোপজীবীর ভরণপোষণের জন্য যাহা প্রয়োজনীয়, তাহার অতিরিক্ত যাহা জন্মে, তাহা উহাদেরই হাতে জমে। অতএব সমাজের যে অতিরিক্ত ধন, তাহা ইহাদেরই হাতে সঞ্চিত হইতে থাকে। তবে, দেশের উৎপন্ন ধন দাই ভাগে বিভক্ত হয়, এক ভাগ শ্রমোপজীবীর, এক ভাগ বদ্ধপজীবীর। প্রথম ভাগ, “মজরির বেতন." দ্বিতীয় ভাগ ব্যবসায়ের “মনোফা”।* আমরা “বেতন” ও “মনাফা", এই দাইটি নাম ব্যবহার মনোফার কোন অংশ পায় না। শ্রমোপজীবীরা সংখ্যায়। যতই হউক না কেন, উৎপন্ন ধনের যে সুন্টুড়েন, সেইটিই তাহদের মধ্যে বিভক্ত হইবে “মনাফার” মধ্য হইতে এক পয়সাও তাহারা का । মনে কর, দেশের উৎপন্ন কোটি মাদ্রা; তন্মধ্যে পঞ্চাশ লক্ষ “বেতন", পঞ্চাশ লক্ষ “মনোফা" । মনে কর, দেশে পাঁচিশ লক্ষ শ্রমোপজীবী। তাহা হইলে এই পঞ্চাশ লক্ষ মাদ্রা “বেতন', পাঁচিশ লক্ষ লোকের মধ্যে ভাগ হইবে, প্রত্যেক শ্রমোপজীবীর ভাগে দই মাদ্রা পড়িবে। মনে কর, হঠাৎ ঐ পাঁচিশ লক্ষ শ্রমোপজীবীর উপর আর পাচিশ লক্ষ লোক কোথা হইতে আসিয়া পড়িল । তখন পঞ্চাশ লক্ষ শ্রমোপজীবী হইল। সেই পঞ্চাশ লক্ষ মাদ্রাই ঐ পণাঞ্চাশ লক্ষ লোকের মধ্যে বিভক্ত হইবে। যাহা “মনাফা”, তাহার এক পয়সাও উহাদের প্রাপ্য নহে, সতরাং ঐ পঞ্চাশ লক্ষ মাদ্রার বেশী এক পয়সাও তাহদের মধ্যে বিভাজ্য নহে। সতরাং এক্ষণে প্রত্যেক শ্রমোপজীবীর ভাগ দাই মাদ্রার পরিবত্তে এক মাদ্রা হইবে। কিন্তু দাই মাদ্রাই ভরণপোষণের জন্য মুহাক বলিয়াই, তাহা পাইত। অতএব এক্ষণে তাহাদের গ্রাসাচ্ছাদনের কষ্টে বিশেষ স্পেশা द । যদি ঐ লোকাগমের সঙ্গে সঙ্গে আর কোটি মাদ্রা দেশের ধনবদ্ধি হইত, তাহা হইলে এ কমন্ট হইত না। পঞ্চাশ লক্ষ মাদ্রা বেতন ভাগের স্থানে কোটি মাদ্রা বেতন ভাগ হইত। তখন লোক বেশী আসাতেও সকলের দই টাকা করিয়া কুলাইত। অতএব দেখা যাইতেছে যে, লোকসংখ্যা বদ্ধি শ্রমোপজীবীদের মহৎ আনিলেন্টর কারণ। যে পরিমাণে লোকসংখ্যা বদ্ধি হয়, যদি সেই পরিমাণে দেশের ধনবদ্ধি পায়, তবে শ্রমোপজীবীদের কোন অনিন্ট নাই। যদি লোকসংখ্যা বদ্ধির অপেক্ষা ধনবদ্ধি গারতের হয়, তবে শ্ৰমোপজীবীদের শ্ৰীবদ্ধি-যথা ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়। আর যদি এই দইয়ের একও না ঘটিয়া, ধন্যবদ্ধির অপেক্ষা লোকসংখ্যা বদ্ধি অধিক হয়, তবে শ্রমোপজীবীদের দন্দশা। ভারতবর্ষে প্রথমোদ্যমেই তাহাই ঘটিল। লোকসংখ্যা বদ্ধি সবাভাবিক নিয়ম। এক পরষ ও এক সন্ত্রী হইতে অনেক সন্তান জন্মে। তাহার। আর একটি সন্তানের আবার অনেক সন্তান জন্মে। অতএব মনষ্যের দদশা এক প্রকার সবভাবের নিয়মাদিন্ট। সকল সমাজেই এই অনিস্টপাতের সম্ভাবনা। কিন্তু ইহার সদ্যপায় আছে। প্রকৃত সদ্যপায় সঙ্গে সঙ্গে ধনবদ্ধি। পরন্তু যে পরিমাণে প্রজাবদ্ধি, সে পরিমাণে ধনবদ্ধি প্রায়ই ঘাঁটিয়া উঠে না। ঘটিবার অনেক বিঘা আছে। অতএব উপায়ান্তর অবলম্বন করিতে হয়। উপায়ান্তর দাইটি মাত্র। এক উপায়ে দেশীয় লোকের কিয়দংশের দেশান্তরে গমন। কোন দেশে লোকের অন্নে কুলায় না, অন্য দেশে অন্ন খাইবার লোক নাই। প্রথমোক্ত কতক দেশের লোক শেষোক্ত দেশে যাউক, তাহা হইলে প্রথমোক্ত দেশের লোকসংখ্যা কমিবে। এবং শেষোক্ত দেশেরও কোন অনিন্ট ঘটিবে না। এইরপে ইংলন্ডের মহদীপকার হইয়াছে। ইংলন্ডের লোক আমেরিকা, অস্ত্রেলিয়া এবং পথিবীর অন্যান্য ভাগে বাস করিয়াছে। তাহাতে ইংলন্ডের শ্ৰীবদ্ধি হইয়াছে, উপনিবেশ সকলেরও মঙ্গল হইয়াছে। দ্বিতীয় উপায় বিবাহপ্রবত্তির দমন। এইটি প্রধান উপায়। যদি সকলেই বিবাহ করে, তবে

  • “ভূমির কর” এবং “সন্দে” ইহার অন্তৰ্গত। এ স্থলে বিবেচনা করিতে হইবে। সংক্ষেপাভিপ্ৰায়ে আমরা কর বা সদের উল্লেখ করিলাম না।

OS6