পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী প্রজাবদ্ধির সীমা থাকে না। কিন্তু যদি কতক লোক অবিবাহিত থাকে, তবে প্রজাবন্ধির লাঘব হয়। যে দেশে জীবনের সবচ্ছন্দতা লোকের অভ্যস্ত, যেখানে জীবিকানিৰ্ব্ববাহের সামগ্রী প্রচুরপরিমাণে আবশ্যক, এবং কন্টে আহরণীয়, সেখানকার লোকে বিবাহপ্রবত্তি দমন করে। পরিবার প্রতিপালনের উপায় না দেখিলে বিবাহ করে না। ভারতবর্ষে এই দাইটির একটি উপায়ও অবলম্বিত হইতে পারে নাই। উষ্ণতা শরীরের শৈথিল্যজনক, পরিশ্রমে অপ্রবত্তিদায়ক। দেশান্তরে গমন, উৎসাহ, উদ্যোগ এবং পরিশ্রমের কাজ। বিশেষতঃ প্রকৃতিও তাহার প্রতিকলতাচরণ করিয়াছেন। ভারতবৰ্ষকে অলঙঘ্য পন্বত এবং বাত্যাসঙ্কুল সমদ্রমধ্যস্থ করিয়া বন্ধ করিয়া রাখিয়াছেন। যবদ্বীপ এবং বালি উপদ্বীপ ভিন্ন আর কোন হিন্দ উপনিবেশের কথা শানা যায় না। ভারতবর্ষের ন্যায় বহৎ প্রাচীন দেশের এইরপে সামান্য ঔপনিবেশিকা ক্রিয়া গণনীয় নহে। বিবাহপ্রবত্তির দমনবিষয়ে ভারতবর্ষের আরও মন্দাবস্থা। মাটি অ্যাঁচড়াইলেই শস্য জন্মে, তাহার যৎকিঞ্চিৎ ভোজন করিলেই শরীরের উপকার হউক না হউক, ক্ষধানিবত্তি এবং জীবনধারণ হয়। বায়ার উষ্ণতাপ্রযক্ত পরিচ্ছেদের বাহিল্যের আবশ্যকতা নাই। সতরাং অপকৃলট জীবিকা অতি সলভ। এমত অবস্থায় পরিবার প্রতিপালনে অক্ষমতাভয়ে কেহ ভীত নহে। সতরাং বিবাহপ্রবত্তি দমনে প্ৰজা পরাজমখ হইল। প্রজাবদ্ধির নিবারণের কোন উপায়ই অবলম্পিাবত না হওয়াতে তাহার বেগ অপ্রতিহত হইল। কাজে কাজেই সভ্যতার প্রথম আভু্যদয়ের পরেই ভারতীয় শ্রমোপজীবীর দন্দশা আরম্ভ হইল। যে ভূমির উর্বরতা ও বায়র অলঙ্ঘ্য নৈসগিক নিয়মের ফল। শ্রমোপজীবীর এই কারণে দন্দশার আরম্ভ। কিন্তু একবার অবনতি আরম্ভ হইলেই, সেই অবনতির ফলে আরও অবনতি ঘটে। শ্রমোপজীবীদিগের যে পরিমাণে দরবস্থা বদ্ধি হইতে লাগিল, সেই পরিমাণে তাহাদিগের সহিত সমাজের অন্য সম্প্রদায়ের তারতম্য অধিকতর হইতে লাগিল। প্রথম ধানের তারতম্য-তৎফলে অধিকারের তারতম্য। শ্রমোপজীবীরা হীন হইল বলিয়া তাহদের উপর বদ্ধপজীবীদিগের প্রভুত্ব বাড়িতে লাগিল। অধিক প্রভুত্বের ফল অধিক অত্যাচার। এই প্ৰভুত্বই শব্দ্রপীড়ক সমিতিশাস্ত্রের মল। এই বৈষম্যই অস্বাভাবিক। ইহাই অমঙ্গলের কারণ। আমরা যে সকল কথা বলিলাম, তাহার তিনটি গারতের তাৎপৰ্য্য দেখা যায় : ১। শ্রমোপজীবীদিগের অবনতির যে সকল কারণ দেখাইলাম, তাহার ফলে ত্ৰিবিধ। প্রথম ফল, শ্রমের বেতনের অলপতা। ইহার নামান্তর দারিদ্র্য। ইহা বৈষম্যবদ্ধক। দ্বিতীয় ফল, বেতনের অলপতা হইলেই পরিশ্রমের আধিক্যের আবশ্যক হয়; কেন না, যাহা কমিল, তাহা খাটিয়া পোষাইয়া লইতে হইবে। তাহাতে অবকাশের ধবংস। অবকাশের অভাবে বিদ্যালোচনার অভাব। অতএব দ্বিতীয় ফল মািখতা। ইহাও বৈষম্যবদ্ধক। তৃতীয় ফল, বদ্ধপজীবীদিগের প্রভুত্ব এবং অত্যাচার বদ্ধি। ইহার নামান্তর দাসত্ব। ইহা বৈষম্যের পরাকান্ঠা। দারিদ্র্য, মাখতা, দাসত্ব। ২। ঐ সকল ফল একবার উৎপন্ন হইলে ভারতবর্ষের ন্যায় দেশে প্রাকৃতিক নিয়মগণে স্থায়িত্ব লাভ করিতে উন্মখ হয়। Y দেখান গিয়াছে যে, ধনসম্প্ৰচয়ই সভ্যতার আদিম কারণ। যদি বলি যে, ধনলিপিসা সভ্যতাবদ্ধির নিত্য কারণ, তাহা হইলে অত্যুক্তি হইবে না। সামাজিক উন্নতির মালীভুত, মনষ্যেহীদয়ে। দাইটি বত্তি; প্রথম জ্ঞানলিপসা, দ্বিতীয় ধনলিপসা। প্রথমোক্তটি মহৎ এবং আদরণীয়, দ্বিতীয়টি *Iosise ase sb afaţsII eroi să “History of Rationalism in Europe” নামক গ্রন্থে লেকি সাহেব বলেন যে, দাইটি বত্তির মধ্যে ধনলিপসাই মনষ্যজাতির অধিকতর মঙ্গলকর হইয়াছে। বস্তৃত জ্ঞানলিপিসা কদাচিৎক, ধনলিপিসা সব্বসাধারণ; এজন্য অপেক্ষাকৃত ফলোপধায়ক। দেশের উৎপন্ন ধনে জনসাধারণের গ্রাসাচ্ছাদনের কুলান হইতেছে বলিয়া সামাজিক ধনলিপিসা কমে না। সব্বদা নািতন নািতন সখের আকাঙ্ক্ষা জন্মে। পর্বে যাহা নিম্পপ্রয়োজনীয় বলিয়া বোধ হইত, পরে তাহা আবশ্যকীয় বোধ হয়। তাহ পাইলে আবার QJd