পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণচরিত্র ১১৭ সক্তের ৭ ঋকে এক কৃষ্ণের নাম আছে। সে কৃষ্ণ কে, তাহা জানিবার উপায় নাই। সম্ভবতঃ তিনি বসদেবানন্দন নহেন। তাহার পর দেখিতে পাই ঋগ্বেদসংহিতার অনেকগালি সক্তের ঋষি একজন কৃষ্ণ। তাঁহার কথা পরে বলিতেছি। অথব্বসংহিতায় আসার কৃষ্ণকেশীর নিধনকারী কৃষ্ণের কথা আছে। তিনি বসদেবানন্দন সন্দেহ নাই। কেশিনিধনের কথা আমি পশ্চাৎ বলিব। পাণিনির সত্রে ‘বাসদেব’ নাম আছে-সে। সত্রে উদ্ধত করিয়াছি। কৃষ্ণ মহাভারতে বাসদেব নামে সচরাচর অভিহিত হইয়াছেন। বসদেবের পত্র বলিয়াই বাসদেব নাম নহে, সে কথা স্থানান্তরে বলিব । বসদেবের পত্র না হইলেও বাসদেব নাম হয়। এই মহাভারতেই পাওয়া যায়-পড়াধিপতিরও নাম ছিল বাসদেব। বসদেবকে কবিকল্পনা বলতে হয়, বল-কিন্তু বাসদেব কবিকলপনা নহেন। ইউরোপীয়দিগের মত এই যে, কৃষ্ণ আদৌ মহাভারতে ছিলেন না, পরে মহাভারতে তাঁহাকে বসাইয়া দেওয়া হইয়াছে। এরপ বিবেচনা করিবার যে সকল কারণ তাঁহারা নিন্দেশ করেন, তাহা নিতান্তই অকিঞ্চিংকর। কেহ বলেন, কৃষ্ণকে মহাভারত হইতে উঠাইয়া দিলে মহাভারতের কোন ক্ষতি হয় না। এক হিসাবে নয় বটে। গত ফরাসীপ্রসের যাদ্ধ হইতে মোলটিকেকে TèŠIRIT ÎMCGT (KISIN SFÎ5 z TNT i Gravelotte, Woerth Metz, Sedan, Paris eşîVS রণজয় সবই বজায় থাকে; কেন না, Moltke হাতে হাতিয়ারে এ সকলের কিছই করেন নাই। তাঁহার সেনাপতিত্ব তারে তারে বা পত্রে পত্রে নিববাহিত হইয়াছিল। মহাভারত হইতে কৃষ্ণকে উঠাইয়া দিলে সেরাপ ক্ষতি হয় না। তাহার বেশী ক্ষতি হয় কি না, এ গ্রন্থ পাঠ করিলেই পাঠক জানিতে পারিবেন। হইলর সাহেবেরও এ বিষয়ে একটা মত আছে। তাঁহার যেরপ পরিচয় দিয়াছি, তাহাতে বোধ হয়, তাঁহার মতে প্রতিবাদের বিশেষ প্রয়োজন নাই। তথাপি মতটা কিয়ৎপরিমাণে চলিয়াছে বলিয়া, তাঁহার প্রসঙ্গ উত্থাপিত করিলাম। তিনি বলেন, দ্বারকা হস্তিনাপাের হইতে সাত শত ক্রোশ ব্যবধান। কাজেই কৃষ্ণের সঙ্গে পান্ডবদিগের যে ঘনিষ্পাঠ সম্পবিন্ধ মহাভারতে কথিত হইয়াছে, তাহা অসম্ভব। কেন অসম্ভব, আমরা তাহা কিছই বঝিতে পারিলাম না, কাজেই উত্তর করিতে পারিলাম না। বাঙ্গালীর মসলমান রাজপরিষদিগের সঙ্গে দিল্লীর পাঠান মোগল রাজপরিষদিগের ঘনিষ্ঠ সম্প্ৰবন্ধ যিনিই সমরণ করবেন, তিনিই বোধ হয়, হইলর সাহেবের এই অশ্রাব্য কথায় কণপাত করবেন না। বিখ্যাত ফরাসী পন্ডিত Bournouf বলেন যে, বৌদ্ধশাস্ত্ৰে কৃষ্ণ নাম না পাইলে, ঐ শাস্ত্র প্রচারের উত্তরকালে কৃষ্ণোপাসনা প্রবত্তিত হয়, বিবেচনা করিতে হইবে। কিন্তু বৌদ্ধশাস্ত্রের মধ্যে ললিত বিস্তরে কৃষ্ণের নাম আছে। বৌদ্ধশাস্ত্র মধ্যে সত্রপিটক সব্বাপেক্ষা প্রাচীন গ্রন্থ। তাহাতেও কৃষ্ণের নাম আছে। ঐ গ্রন্থে কৃষ্ণকে অসাের বলা হইয়াছে। কিন্তু নাস্তিক ও হিন্দধৰ্ম্মম বিরোধী বৌদ্ধেরা কৃষ্ণকে যে অসাের বিবেচনা করিবে, ইহা বিচিত্র নয়। আর ইহাও বক্তব্য, বেদাদিতে ইন্দ্রাদি দেবগণকে মধ্যে মধ্যে অসাের বলা হইয়াছে। বৌদ্ধেরা ধন্মের প্রধান শত্র যে প্রবত্তি, তাহার নাম দিয়াছেন “মার”। কৃষ্ণপ্রচারিত অপব্ব নিম্পাকামধৰ্ম্ম তৎকৃত সনাতন ধমের অপব্ব সংস্কার, স্বয়ং কৃষ্ণের উপাসনা বৌদ্ধধৰ্ম্মপ্রচারের প্রধান বিঘা ছিল সন্দেহ নাই। অতএব তাঁহারা কৃষ্ণকেই অনেক সময় মার বলিয়া প্ৰতিপন্ন করিতে চেন্টা করিয়াছেন। বুলি কথা থাক। স্থান্দেগােপনিষদে একটি কথা আছে; সেইটি উদ্ধত করিতেছি। ՀpQIITԵ ԶՀ “তদ্ধৈতন্ঘোর আঙ্গিরসঃ কৃষ্ণায় দেবকীপত্রায় উক্তৰা, উবাচ। অপিপাস এবং স বভুব। সোহন্তবেলায়ামেতািত্ৰয়ং প্রতিপদ্যেত অক্ষিতমসি, আচু্যতমসি, প্রাণসং " কৃষ্ণ শব্দ পােরনঃ পািনঃ পাওয়া যায়। কৃষ্ণনামা বৈদিক ঋষির কথা পশ্চাৎ বলিতেছি। তস্তিন্ন অস্টম মন্ডলে ১৬ সক্তে কৃষ্ণনামা একজন অনান্য রাজার কথা পাওয়া যায়। এই অনাৰ্য্য কৃষ্ণ অংশমতীনদীতীরনিবাসী; সতরাং ইনি যে বাসদেব কৃষ্ণ নহেন, তাহা নিশ্চিত। পাঠক ইহাতে বঝিতে পারবেন। যে, পাণিনির কোন সত্রে “কৃষ্ণ” শব্দ থাকিলে তাহা বাসদেব কৃষ্ণের ঐতিহাসিকতার প্রমাণ বলিয়া গণ্য হয় না। কিন্তু পাণিনিস ত্রে “বাসদেব” নাম যদি পাওয়া যায়, তবে তাহা প্রমাণ বলিয়া গণ্য। ঠিক তাহাই আছে। SRO