পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গহী, রাজনীতিজ্ঞ, ষোদ্ধা, দশভূপ্রণেতা, তপস্বী, ধৰ্ম্মপ্রচারক; সংসারী ও গহীদিগের, রাজাদিগের, যোদ্ধাদিগের, রাজপরিষদিগের, তপস্বীদিগের, ধৰ্ম্মমবেত্তাদিগের এবং একাধারে সব্বাঙ্গীণ মনুষ্যত্বের আদর্শ। জরাসন্ধাদির বধ আদশ রাজপরিষ ও দন্ডপ্রণেতার অবশ্য অনন্দ্ঠেয়। ইহাই Hindu. Ideal । অসম্পণে যে বৌদ্ধ বা খীস্ট ধৰ্ম্ম, তাহার আদর্শ পরিষকে আদর্শ স্থানে বসাইয়া, সম্পণে ষে হিন্দধৰ্ম্ম, তাহার আদশ পরিষকে আমরা বঝিতে পারিব না। কিন্তু বঝিবার বড় প্রয়োজন হইয়াছে, কেন না, ইহার ভিতর আর একটা বিস্ময়কর কথা আছে। কি খীস্টধৰ্ম্মমাবলম্বী ইউরোপে, কি হিন্দধম্মাবলম্বী ভারতবর্ষে, আদশের ঠিক বিপরীত ফল ফলিয়াছে। খীস্টীয় আদশ পরিষ, বিনীত, নিরীহ, নিৰ্ম্মবরোধী সন্ন্যাসী; এখনকার খীন্টিয়ান ঠিক বিপরীত। ইউরোপ এখন ঐহিক সাখারত সশস্ত্ৰ যোদ্ধবগের বিস্তীর্ণ শিবির মাত্র। হিন্দধম্পেমার আদশ পরিষ সব্বকৰ্ম্মকৃৎ-এখনকার হিন্দ, সব্বকৰ্ম্মে অকম্পমা। এরপ ফলবৈপরীত্য ঘটিল কেন ? উত্তর সহজ-লোকের চিত্ত হইতে উভয় দেশেই সেই প্রাচীন আদশ লিপ্ত হইয়াছে। উভয় দেশেই এককালে সেই আদশ একদিন প্রবল ছিল -প্রাচীন খাঁটিয়ানদিগের ধৰ্ম্মমপরায়ণতা ও সহিষ্ণতা, ও প্রাচীন হিন্দ রাজগণ ও রাজপরিষগণের সব্ব গণ্যবত্তা তাহার প্রমাণ। যে দিন সে আদশ হিন্দীদিগের চিত্ত হইতে বিদারিত হইল। --যে দিন আমরা কৃষ্ণচরিত্র অবনত করিয়া লইলাম, সেই দিন হইতে আমাদিগের সামাজিক অবনতি। জয়দেব গোঁসাইয়ের কৃষ্ণের অন্যাকরণে সকলে ব্যস্ত-মহাভারতের কৃষ্ণকে কেহ সমরণ করে না। এখন আবার সেই আদশ পরিষকে জাতীয় হৃদয়ে জাগরিত করিতে হইবে। ভরসা। করি, এই কৃষ্ণচরিত্র ব্যাখ্যায়। সে কায্যের কিছ আনকল্য হইতে পরিবে। জরাসন্ধবধের ব্যাখ্যায়। এ সকল কথা বলিবার তত প্রয়োজন ছিল না, প্রসঙ্গতঃ এ তত্ত্ব উত্থাপিত হইয়াছে মাত্র। কিন্তু এ কথাগালি এক স্থানে না এক স্থানে আমাকে বলিতে হইত। আগে বলিয়া রাখায় লেখক পাঠক উভয়ের পথ সংগম হইবে। অন্টাম পরিচ্ছেদ-ভীম-জরাসন্ধের যাদ্ধ আমরা এ পয্যন্ত কৃষ্ণচরিত্র যত দীর সমালোচনা করিয়াছি, তাহাতে মহাভারতে কৃষ্ণকে কোথাও বিষ্ণ, বলিয়া পরিচিত হইতে দেখি নাই। কেহ তাঁহাকে বিষ্ণ, বলিয়া সম্বোধন বা বিষ্ণজ্ঞানে তাঁহার সঙ্গে কথোপকথন করে নাই। তাঁহাকেও এ পৰ্যন্ত মনষ্যেশক্তির অতিরিক্ত শক্তিতে কোন কাষ্য করিতে দেখি নাই। তিনি বিষ্ণর অবতার হউন, বা না হউন কৃষ্ণচরিত্রের স্থলে মৰ্ম্ম মনীষ্যত্ব, দেবত্ব নহে, ইহা আমরা পািনঃ পািনঃ বাবাইয়াছি। কিন্তু ইহাও স্বীকার করিতে হয় যে, ইহার পরে মহাভারতের অনেক স্থানে তাঁহাকে বিফ বলিয়া সম্বোধিত এবং পরিচিত হইতে দেখি। অনেকে বিষ্ণ, বলিয়া তাঁহার উপাসনা করিতেছে দেখি; এবং কদাচ কখনও তাঁহাকে লোকাতীতা বৈষ্ণবী শক্তিতে কাৰ্য্য করিতেও দেখি; এ পৰ্যন্ত তাহা দেখি নাই, কিন্তু এখনই দেখিব। এই দাইটি ভােব পরস্পর বিরোধী কি না ? যদি কেহ বলেন যে, এই দাইটি ভাব পরস্পর বিরোধী নহে, কেন না, যখন দৈব শক্তির বা দেবত্বের কোন প্রকার বিকাশের কোন প্রয়োজন নাই, তখন কাব্যে বা ইতিহাসে কেবল মনষ্যাভাব প্রকাটিত হয়, আর যখন তাহার প্রয়োজন আছে, তখন দৈবভাব প্রকটিত হয়, তাহা হইলে আমরা বলিব যে, এই উত্তর যথার্থ হইল না। কেন না, নিম্পপ্রয়োজনেই দৈবভাবের প্রকাশ অনেক সময়ে দেখা যায়। এই জরাসন্ধবধ হইতেই দই একটা উদাহরণ দিতেছি। জরাসন্ধবধের পর কৃষ্ণ ও ভীমাজজন জরাসন্ধের রথখানা লইয়া তাহাতে আরোহণপক্ষািবক নিৰ্ম্মফ্ৰান্ত হইলেন। দেবনিশ্চিমত রথ, তাহাতে কিছর অভাব নাই। তব, খামখাই কৃষ্ণ গরীড়কে স্মরণ করিলেন, সমরণমাত্র গরড়ে আসিয়া রথের চড়ায় বসিলেন। গরুড় আসিয়া আর কোন কাজ করিলেন না, তাঁহাতে আর কোন প্রয়োজনও ছিল না। কথাটারও আর কোন প্রয়োজন দেখা যায় না, কেবল মােঝ হইতে কৃষ্ণের বিকত্বে সচিত হয়। জরাসন্ধকে বধ করিবার সময় কোন দৈব শক্তির প্রয়োজন হইল না, কিন্তু রথে চড়িবার বেলা হইল! আবার যাদ্ধের পন্ধেব, অমনি একটা কথা আছে। জরাসন্ধ যন্ধে স্থিরংসংকল্প হইলে কৃষ্ণ জিজ্ঞাসা করিলেন, 6S