পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণচরিত্র একোনশত বার ঘর্ণায়মান করিয়া নিক্ষেপ করিল। গদা মথরাস্থিত অদ্ভুত কৰ্ম্মঠ বাস দেবের একোনশত যোজন অন্তরে পতিত হইল। পৌরগণ কৃষ্ণসমীপে গদাপতনের বিষয় নিবেদন করিল। তদবধি সেই মথরিার সমীপবত্তী স্থান গদাবসান নামে বিখ্যাত হইল।” এখনও যদি কোন পাঠকের বিশ্বাস থাকে যে, বৰ্ত্তমান জরাসন্ধবধ-পৰ্ব্বাধ্যায়ের সমদায় অংশই মল মহাভারতের অন্তগত এবং একব্যক্তি প্রণীত, এবং কৃষ্ণাদি যথার্থই ছদ্মবেশে গিরিব্রজে আসিয়াছিলেন, তবে তাঁহাকে অননুরোধ করি, হিন্দীদিগের পরাণেতিহাস মধ্যে ভূমিক ভূত্বর অনুসন্ধান পরিভাগ করিয়া অন্য শস্যের আলােচনায় প্রবন্ড ইউন। এদিকে হহবে না। অতঃপর, জরাসন্ধবধের অবশিস্ট কথাগালি বলিয়া এ পরিবাধ্যায়ের উপসংহার করব; সে সকল খাব সোজা কথা। জরাসন্ধ যাদ্ধাৰ্থ ভীমকে মনোনীত করিলে, জরাসন্ধ “দ্যশস্বী ব্ৰাহ্মণ কর্তৃক কৃত-স্বস্ত্যয়ন হইয়া ক্ষত্ৰধৰ্ম্মানসারে বম ও কিরীটি পরিত্যাগ পর্বক” যন্ধে প্রবত্ত হইলেন। “তখন যাবতীয় পরবাসী ব্ৰাহ্মণ ঐত্ৰিয় বৈশ্য শািন্দ্র বণিতা ও বদ্ধগণ তাঁহাদের সংগ্রাম দেখিতে তথায় উপস্থিত হইলেন। যাদ্ধক্ষেত্ৰ জনতা দ্বারা সমাকীর্ণ হইল।” “চতুৰ্দশ দিবস যাদ্ধ হইল।” (যদি সত্য হয়, বোধ হয় তবে মধ্যে মধ্যে অবকাশমত যাদ্ধ হইত) চতুৰ্দশ দিবসে “বাসদেব জরাসন্ধকে ক্লান্ত দেখিয়া ভীমকম্পমা ভীমসেনকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, হে কৌন্তেয়! ক্লান্ত শত্রকে পীড়ন করা উচিত নহে; অধিকতর পীড্যমান হইলে জীবন পরিত্যাগ করে। অতএব ইনি তোমার পীড়নীয় নহেন। হে ভরতিষভ, ইহার সহিত বাহযোদ্ধ করা।” (অর্থাৎ যে শত্রকে ধন্মতঃ বধ করিতে হইবে, তাহাকেও পীড়ন কত্তব্য নহে।) ভীম জরাসন্ধকে পীড়ন করিয়াই বধ করিলেন। ভীমের ধর্ম জ্ঞান কৃষ্ণের তুল্য হইতে পারে না। তখন কৃষ্ণাঙ্গজনি ও ভীম কারাবদ্ধ মহীপালগণকে বিমাক্ত করিলেন। তাহাই জরাসন্ধবধের একমাত্র উদ্দেশ্য। অতএব রাজগণকে মক্ত করিয়া আর কিছই করিলেন না, দেশে চলিয়া গেলেন। তাঁহারা Annexationist ছিলেন না-পিতার অপরাধে পত্রের রাজ্য অপহরণ করিতেন না, তাঁহারা জরাসন্ধকে বিনন্ট করিয়া জরাসন্ধপত্রে সহদেবকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিলেন। সহদেব কিছ নজর দিল, তাহা গ্ৰহণ করিলেন। কারামত্ত রাজগণ কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এক্ষণে এই ভূতাদিগকে কি করিতে হইবে অনািমতি করন।” কৃষ্ণ তাঁহাদিগকে কহিলেন, “রাজা যধিস্ঠির রাজসয় যজ্ঞ করিতে অভিলাষ করিয়াছেন, আপনারা সেই সাম্রাজ্য-চিকীষ। ধামিকের সাহায্য করেন, ইহাই প্রার্থনা।” যধিস্ঠিরকে কেন্দ্ৰস্থিত করিয়া ধৰ্ম্ম রাজ্য সংস্থাপন করা, কৃষ্ণের এক্ষণে জীবনের উদ্দেশ্য। অতএব প্রতি পদে তিনি তাহার উদ্যোগ করিতেছেন। এই জরাসন্ধবধে কৃষ্ণচরিত্রের বিশেষ মহিমা প্রকাশমান-কিন্তু পরবত্তী লেখকদিগের দৌরাত্ম্যে ইহা বড় জটিল হইয়া পড়িয়াছে। ইহার পর শিশপালবধ । সেখানে আরও গণচূডগোল । যধিষ্ঠিরের রাজসয়ে যজ্ঞ আরম্ভ হইল। নানাদিক দেশ হইতে আগত রাজগণ, ঋষিগণ, এবং অন্যান্য শ্রেণীর লোকে রাজধানী পরিয়া গেল। এই বহৎ কায্যের সনির্বাহ জন্য পান্ডবেরা আত্মীয়বগকে বিশেষ বিশেষ কায্যে নিযক্ত করিলেন। দঃশাসন ভোজ্য দ্রব্যের তত্ত্বাবধানে, সঞ্জয় পরিচর্য্যায়, কৃপাচাৰ্য্য রত্নরক্ষায় ও দক্ষিণাদানে, দাৰ্য্যোধন উপায়নপ্রতিগ্রাহে, ইত্যাদি রপে সকলকেই নিযক্ত করিলেন। শ্ৰীকৃষ্ণ কোন কায্যে নিযক্ত হইলেন? দঃশাসনাদির নিয়োগের সঙ্গে শ্ৰীকৃষ্ণের নিয়োগের কথাও লেখা আছে। তিনি ব্রাহ্মণগণের পাদপ্রক্ষালনে নিযক্ত হইলেন। কথাটা বঝা গেল না। শ্ৰীকৃষ্ণ কেন এই ভূত্যেপযোগী কায্যে নিযক্ত হইয়াছিলেন? তাঁহার যোগ্য কি কোন ভাল কাজ ছিল না ? না, ব্ৰাহ্মণের পা ধোয়াই বড় মহৎ কাজ ? ܬܠG