পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোক রহস্য রামায়ণের একটি কান্ডে যোদ্ধাদিগের কোন কথা না থাকায় তাহার নাম হইয়াছে “অবোদ্ধাকাশড”। গ্ৰন্থকার তাহা “অযোদ্ধাকান্ড” না লিখিয়া “অযোধ্যাকান্ড” লিখিয়াছেন। প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে ས་ আশদ্ধ সংস্কৃত প্রায় দেখা যায়। আধনিক ইউরোপীয় পন্ডিতেরাই বিশদ্ধ সংস্কৃতে ধকারী। বিষ সমালোচন সম্পবাদ পত্রের প্রথা আছে, নব বর্ষ প্রবত্ত হইলে গত বর্ষের ঘটনা সমালোচনা করিতে হয়। বঙ্গদর্শনগ্ধ সম্পবাদপত্র নহে, সতরাং বঙ্গদর্শন বিষ সমালোচনে বাধ্য নহে। কিন্তু আমাদের কি সাধ করে না ? যেমন অনেকে রাজা না হইয়াও রাজকায়দায় চলেন, যেমন অনেক কালা বাঙ্গালি হইয়াও সাহেব সাজিবার সাধে কোট পেন্টেলন অ্যাটেন, আমরাও তেমনি ক্ষদ্র মাসিক পত্রিকা হইয়াও, দোদ্দািড প্রচন্ড প্রতাপশালী সম্পবাদপত্রের অধিকার গ্রহণ করিব, ইচ্ছা করিয়াছি। কিন্তু মনষ্যজাতির এমনই দরদীটি যে, যে যখন যে সাধ করে, তাহার সেই সাধে তখন বিঘা ঘটে। নািতন বৎসর গিয়াছে পৌষ মাসে, আমরা লিখিতেছি, অগ্রহায়ণ মাসের বঙ্গদশন! সব্বনাশ, এ যে রাম না হইতে রামায়ণ! সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, বঙ্গদশান রচনাসম্পবন্ধে কোন নিয়মই মানে না-অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী। অতএব আমরা মনের সাধ মনে না মিটাইয়া, সে সাধে বিষাদ ইত্যাদি অন্যপ্রাসের লোভ সম্পবরণ করিয়া অগ্রহায়ণ মাসেই ১৮৭৫ সালের সমালোচনা করিব। অতএব হে গত বর্ষ! সাবধান হও, তোমাকে সমালোচনা করিব। গত বৎসরে রাজকাৰ্য্য কিরাপে নিৰ্ব্ববাহ প্রাপ্ত হইয়াছে, তদ্বিষয়ে অনেক অন্যাসন্ধান করিয়া জানিয়াছি যে, এই বৎসরে তিন শত পয়ষট্টি দিবস ছিল, একদিনও কম হয় নাই। প্রতি দিবসে ২৪টি করিয়া ঘণ্টা, এবং প্রতি ঘণ্টায় ৬০টি করিয়া মিনিট ছিল। কোনটির আমরা একটিও কম পাই নাই। রাজপরিষগণ ইহাতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপণ করেন নাই। ইহাতে তাঁহাদিগের বিজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া যায় বটে। অনেকে বলেন যে, এ বৎসরে গোটাকত দিন কমাইয়া দিলে ভাল হইত; আমরা এ কথার অন্যামোদন করি না; দিন কমাইলে কেবল চাকুরিয়াদিগের বেতন লাভ এবং সম্পবাদপত্ৰলেখকদিগের শ্রমলাঘব; সাধারণের কোন লাভ নাই ; (আমরা মাসিক, ১২ মাসে বারখানি কেহ ছাড়িবে না।) তবে গ্রীষ্মকালটি একেবারে উঠাইয়া দিলে ভাল হয় বটে। আমরা কর্তৃপক্ষগণকে অনরোধ করিতেছি, বার মাসই শীতকাল থাকে, এমন একটি আইন প্রচারের চেস্টা দেখন। আমরা শনিয়া দঃখিত হইলাম, এ বৎসর সকলেরই এক এক বৎসর পরমায় চুরি গিয়াছে। কথাটায় আমরা সম্পণে বিশ্বাস করি না। আমরা প্রত্যক্ষ দেখিতেছি, আমাদের ৭১ বৎসর বয়স ছিল, এ বৎসর ৭২ হইয়াছে। যদি পরমায় চুরি গেল, তবে এক বৎসর বাড়িল কি প্রকারে ? নিন্দক সম্প্রদােয়ই এমত অযথার্থ প্রবাদ রটাইয়াছে। এ বৎসর যে সবৎসর ছিল, তাহার বিশেষ প্রমাণ এই যে, এ বৎসর অনেকেরই সন্তান জন্মিয়াছে। টিভিস্টমেন্টেল ডিপার্টমেন্টের সদক্ষ কৰ্ম্মমচারিগণ বিশেষ তদন্তে জানিয়াছেন যে, কাহারও কাহারও পত্র হইয়াছে, কাহারও কন্যা হইয়াছে, এবং কাহার গভদ্রাব হইয়া গিয়াছে। দঃখের বিষয় এই যে, এ বৎসর কতকগলি মনীষা, অধিক নহে, রোগাদিতে মরিয়াছে। শনিয়াছি যে, এদেশীয় কোন মহাসভা পালিয়ামেলেট আবেদন করিবেন যে, এই পণ্যভূমি ভারতরাজ্যে মনষ্য না মরিতে পায়। তাঁহারা এই রােপ প্ৰস্তাব করেন যে, যদি কাহারও নিতান্ত মরা আবশ্যক হয়, তবে সে পলিশে জানাইয়া অনািমতি লইয়া মরিবে। এ বৎসর ফাইন্যানসিয়ল ডিপার্টমেন্টের কান্ড অতি বিচিত্ৰ-আমরা শ্রত হইয়াছি যে, গবৰ্ণমেণ্টের আয়ও হইয়াছে, ব্যয়ও হইয়াছে। ইহা বিস্ময়করা হউক বা না হউক, বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, ইহাতে গবৰ্ণমেন্টের টাকা, হয় কিছ উদ্বত্ত হইয়াছে, নয়। কিছ আকুলান হইয়াছে, নয় ঠিক ঠিক মিলিয়া গিয়াছে। আগামী বৎসর (৭৬ সালে) টেক্স বসিবে কি না, তাহা এক্ষণে বলা যায় না, কিন্তু ভরসা করি, ৭৭ সালের এপ্রিল মাসে আমরা এ কথা নিশ্চিত বলিতে পারিব।

  • এই প্ৰবন্ধ প্রথম বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয়।

s