পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

བསམ་རྒྱ་ প্ৰজাপীড়ক হইলেন, তখন তিনি আর রাজা নহেন, আর ভক্তির পাত্র নহেন। এরপ রাজাকে ভক্তি করা দরে থােক, যাহাতে সে রাজা সশাসন করিতে বাধ্য হয, তাহা দেশবাসীদিগের কৰ্ত্তব্য। কেন না, রাজার স্বেচ্ছাচারিতা সমাজের অমঙ্গল। কিন্তু সে সকল কথা ভক্তিতত্ত্বে উঠিতেছে না, প্ৰীতিতত্ত্বের অন্তগত। আর একটা কথা বলিয়া রাজভক্তি সমাপ্ত করি। রাজা যেমন ভক্তির পাত্র, তাঁহার প্রতিনিধিস্বরপ রাজপরিষগণও যথাযোগ্য সম্মানের পাত্র। কিন্তু তাঁহারা যতক্ষণ আপনি আপন রাজকায্যে নিযক্ত থাকেন, এবং ধৰ্ম্মতঃ সেই কাৰ্য্য নিৰ্ম্মবাহ করেন, ততক্ষণই তাঁহারা সম্পমানের পাত্র। তার পর তাঁহারা সাধারণ মনয্যে। রাজপরিষে যথাযোগ্য ভক্তি ভাল, কিন্তু বেশী মাত্রায় কিছই ভাল নহে-কেন না, বেশী মাত্রা অসামঞ্জস্যের কারণ। রাজা সমাজের প্রতিনিধি এবং রাজপরিষেরা সমাজের ভূত-এ কথা কাহারও বিস্মত হওয়া উচিত নয়। আমাদের দেশীয় লোক এ কথা বিস্মত হইয়া, রাজপরিষের অপরিমিত তোষামোদ করিয়া থাকেন। (৩) রাজার অপেক্ষাও, যাঁহারা সমাজের শিক্ষক, তাঁহারা ভক্তির পাত্ৰ। গহস্থ গরের কথা, গাহস্থিত ভক্তির পাত্রদিগের সঙ্গে বলিয়াছি, কিন্তু এই গরগণ, কেবল গাহস্থ্যি গর নহেন, সামাজিক গাের। যাঁহারা বিদ্যা বদ্ধি বলে, পরিশ্রমের সহিত সমাজের শিক্ষায় নিযক্ত, তাঁহারাই সমাজের প্রকৃত নেতা, তাঁহারাই যথাৰ্থ রাজা। অতএব ধৰ্ম্মমবেত্তা, বিজ্ঞানবেত্তা, নীতিবেত্তা, দার্শনিক, পরাণবেত্তা, সাহিত্যকার, কবি প্রভৃতির প্রতি যথোচিত ভক্তির অনশীলন কৰ্ত্তব্য। পথিবীর যাহা কিছ উন্নতি হইয়াছে, তাহা ইহাদিগের দ্বারা হইয়াছে। ইহারা পথিবীকে যে পথে চালান, সেই পথে পথিবী চলে। ইহারা রােজ্যাদিগেরও গর। রাজগণ ইহাদিগের নিকট শিক্ষা লাভ করিয়া। তবে সমাজশাসনে সক্ষম হয়েন। এই হিসাবে, ভারতবর্ষ। ভারতীয় ঋষিদিগের সন্টি-এই জন্য ব্যাস, বািলমীকি, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, মন, যাজ্ঞবল্ক্য, কপিল, গৌতম—সমস্ত ভারতবর্ষের পজ্যেবাদ পিতৃগণস্বরাপ। ইউরোপেও গালিলীও, নিউটন, কান্ত, কোমাৎ, দান্তে, শেক্ষাপীয়র প্রভৃতি সেই স্থানে। শিষ্য। আপনার কথার তাৎপৰ্য্য কি এইরুপ বঝিতে হইবে যে, যাঁহা দ্বারা আমি যে পরিমাণে উপকৃত, তাঁহার প্রতি সেই পরিমাণে ভক্তিযক্তি হইব ? গর। তাহা নহে। ভক্তি কৃতজ্ঞতা নহে। অনেক সমযে নিকৃন্টের নিকটও কৃতজ্ঞ হইতে হয়। ভক্তি পরের জন্য নহে, আপনার উন্নতির জন্য। যাহারা ভক্তি নাই, তাহার চরিত্রের উন্নতি নাই। এই লোকশিক্ষকদিগের প্রতি যে ভক্তির কথা বলিলাম, তাহাই উদাহরণ সাবরাপ লইয়া বঝিয়া দেখ। তুমি কোন লেখকের প্রণীত গ্রন্থ পড়িতেছ। যদি সে লেখকের প্রতি তোমার ভক্তি না থাকে, তবে সে গ্রন্থের দ্বারা তোমার কোন উপকার হইবে না। তাঁহার প্রদত্ত উপদেশে তোমার চরিত্র কোনরপে শাসিত হইবে না। তাহার মন্মথ তুমি গ্রহণ করিতে পরিবে না। গ্রন্থকারের সঙ্গে সহৃদয়তা না থাকিলে, তাঁহার উক্তির তাৎপৰ্য্য বাবা যায় না। অতএব জগতের শিক্ষকদিগের উপর ভক্তি না থাকিলে শিক্ষা নাই। সেই শিক্ষাই সকল উন্নতির মহল ; অতএব সে ভক্তি ভিন্ন উন্নতিও নাই। ইহাদের প্রতি সমচিত ভক্তি অনশীলন পরম ধৰ্ম্মম । শিষ্য। কৈ, এ ধৰ্ম্মম ত আপনার প্রশংসিত হিন্দধমে শিখায় না ? গর। এটা অতি মাখের মত কথা। বরং হিন্দধৰ্ম্মে ইহা যে পরিমাণে শিখায়, এমন আর কোন ধৰ্ম্মেই শিখায় নাই। হিন্দধমৌ ব্রাহ্মণগণ সকলের পাজ্য। তাঁহারা যে বণ্যশ্রেণীঠ এবং আপামর সাধারণের বিশেষ ভক্তির পাত্র, তাহার কারণ এই যে, ব্ৰাহ্মণেরাই ভারতবর্ষে সামাজিক শিক্ষক ছিলেন। তাঁহারা ধৰ্ম্মমবেত্তা, তাঁহারাই নীতিবেত্তা, তাঁহারাই বিজ্ঞানবেত্তা, তাঁহারাই পরাণবেত্তা, তাঁহারাই দার্শনিক, তাঁহারাই সাহিত্যপ্রণেতা, তাঁহারাই কবি। তাই অনন্তজ্ঞানী হিন্দধমের উপদেশকগণ তাঁহাদিগকে লোকের অশেষ ভক্তির পাত্র বলিয়া নিদিলিট করিয়াছেন। সমাজ ব্রাহ্মণকে এত ভক্তি করিত বলিয়াই, ভারতবষী অলপকালে এত উন্নত হইয়াছিল। সমাজ শিক্ষাদাতাদিগের সম্পণে বশবত্তী হইয়াছিল বলিয়াই সহজে উন্নতি লাভ করিয়াছিল। শিষ্য। আধনিক মত এই যে, ভান্ড ব্রাহ্মণেরা আপনাদিগের চাল কলার পাকা বন্দোবস্ত করিবার জন্য এই দলজিয়া ব্ৰহ্মভক্তি ভারতবর্ষে প্রচার করিয়াছে। S a