পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা फूभिका ভগবান শঙ্করাচাৰ্য্য প্রভৃতি প্রণীত গীতার ভাষ্য ও টীকা থাকিতে গীতার অন্য ব্যাখ্যা অনাবশ্যক। তবে ঐ সকল ভাষ্য ও টীকা সংস্কৃত ভাষায় প্রণীত। এখনকার দিনে এমন অনেক পাঠক আছেন যে, সংস্কৃত বাঝেন না, অথচ গীতা পাঠে বিশেষ ইচ্ছক। কিন্তু গীতা এমনই দািরহ গ্ৰন্থ যে, টীকার সাহায্য ব্যতীত অনেকেরই বোধগম্য হয় না। এই জন্য গীতার একখানি বাঙ্গালা টীকা প্রয়োজনীয়। শঙ্গালা টীকা দই প্রকায় হইতে পারে। এক, শতকরাদি-প্রণীত প্রাচীন ভাষ্যের ও টীকার যাঙ্গালা অন্যবাদ দেওয়া যাইতে পারে। দ্বিতীয়, নািতন বাঙ্গালা টীকা প্রণয়ন করা যাইতে পারে। কেহ কেহ প্রথমোক্ত প্রথা অবলম্বন করিয়াছেন। বাব হিতলাল মিশ্র নিজকৃত অনাবাদে, কখন শতকরভাষ্যের সারাংশ, কখন শ্ৰীধর স্বামিকৃত টীকার সারাংশ সঙ্কলন করিয়াছেন। পরম বৈষ্ণব ও পন্ডিত শ্ৰীযক্ত বাবা কেদারনাথ দত্ত নিজকৃত অনাবাদে, অনেক সমযে বিশ্বনাথ চক্রবত্তীর্ণ প্রণীত টীকায় মৰ্মমাখা দিয়াছেন। ইহাদিগের নিকট বাঙ্গালী পাঠক তাঁচজন্য বিশেষ ঋণী । প্রিয়বার শ্ৰীযক্ত বােব ভূধরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গীতার আর একখানি সংস্করণ প্রকাশে উদ্যত হইয়াছেন; বিজ্ঞাপনে দেখিলাম, তাহাতে শঙ্করভাষ্যোব অন্যবাদ থাকিবে। ইহা বাঙ্গালী পাঠকের বিশেষ সৌভাগ্যের বিষয়। শ্ৰীষিক্ত বাবা শ্ৰীকৃষ্ণপ্ৰসন্ন দ্বিতীয় প্রথা অবলম্বন করিয়াছেন। তিনি নিজকৃত অনাবাদের সহিত “গীতাসন্দীপনী” নামে একখানি বাঙ্গালা টীকা প্রকাশ করিতেছেন। ইহা সখের বিষয় যে, “গীতাসন্দীপনী"তে গীতার মন্ম পািব্বপন্ডিতেরা যেরপ বঝিয়াছিলেন, সেইরােপ বৰ্ব্বান হইতেছে। বাঙ্গালী পাঠকেরা শ্ৰীকৃষ্ণপ্ৰসন্ন বাবার নিকট তত্তজন্য কৃতজ্ঞ হইবেন সন্দেহ নাই। এই সকল অনাবাদ বা টীকা থাকাতেও মাদশ ব্যক্তির অভিনব অন্যবাদ ও টীকা প্রকাশে প্রবত্ত হওয়া ব্যথা পরিশ্রম বলিয়া গণিত হইতে পারে। কিন্তু ইহার যথার্থ প্রয়োজন না থাকিলে, আমি এই গােরােতর কায্যে হস্তক্ষেপ করিতাম না। সে প্রয়োজন কি, তাহা বঝাইতেছি। ” এখনকার পাঠকদিগের মধ্যে প্রায় অধিকাংশই “শিক্ষিত” সম্প্রদায়ভুক্ত। যাঁহারা পাশ্চাত্ত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, তাঁহাদিগেরই সচরাচর “শিক্ষিত” বলা হইয়া থাকে ; আমি প্রচলিত প্রথার পশবতী হইয়াই তদৰ্থে “শিক্ষিত" শব্দ ব্যবহার করিতেছি। কাহারও শিক্ষা বেশী, কাহারও শিক্ষা কম, কিন্তু কম হউক, বেশী হউক, এখানকার পাঠক অধিকাংশই “শিক্ষিত” সম্প্রদায়ভুক্ত ইহা আমার জানা আছে। এখন গোলযোগের কথা এই যে, এই শিক্ষিত সম্প্রদায় প্রাচীন পন্ডিতদিগের উক্তি সহজে বঝিতে পারেন না। বাঙ্গালায় অন্যবাদ করিয়া দিলেও তাহা বঝিতে পারেন না। যেমন টোলের পন্ডিতেরা, পাশ্চাত্তাদিগের উক্তির অন্যবাদ দেখিয়াও সহজে বঝিতে পারেন না, যাঁহারা পাশ্চাত্তা শিক্ষায় শিক্ষিত, তাঁহারা প্রাচীন প্রাচ্য পণিততদিগের বাক্য কেবল অন্যবাদ করিয়া দিলে সহজে বঝিতে পারেন না। ইহা তাঁহাদিগের দোষ নহে, তাঁহাদিগের শিক্ষার নৈসগিক ফল। পাশচাত্ত্য চিন্তা-প্ৰণালী প্রাচীন ভারতবষীয়দিগের চিন্তা-প্ৰণালী হইতে এত বিভিন্ন যে, ভাষার অন্যবাদ হইলেই ভাবের অন্যবাদ হৃদয়ঙ্গম হয় না। এখন আমাদিগের “শিক্ষিত" সম্প্রদায়, শৈশব হইতে পাশ্চাত্তা চিন্তা-প্ৰণালীর অন্যবিত্তীর্ণ প্রাচীন ভারতবষীয় চিন্তা-প্ৰণালী তাঁহাদিগের নিকট অপরিচিত; কেবল ভাষান্তরিত হইলে প্রাচীন ভাবসকল তাঁহাদিগের হৃদয়ঙ্গম হয় না। তাঁহাদিগকে বঝাইতে গেলে পাশ্চাত্ত্য প্রথা অবলম্বন করিতে হয়, পাশ্চাত্ত্য ভাবের সাহায্য গ্রহণ করিতে হয়। পাশ্চাত্ত্য প্রথা অবলম্বন করিয়া পাশ্চাত্ত্য ভাবের সাহায্যে গীতার মন্ম তাঁহাদিগকে বঝান, আমার এই টীকার উদ্দেশ্য। ইহার আরও বিশেষ প্রয়োজন। এই যে, পাশ্চাত্ত্য শিক্ষায় শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মনে যে সকল সংশয় উপস্থিত হইবার সম্ভাবনা, পািব্বপন্ডিতদিগের কৃত ভাষ্যাদিতে তাহার মীমাংসা নাই। থাকিবারও সম্ভাবনা নাই; কেন না, তাঁহারা যে সকল পাঠকের সাহায্য জন্য ভাষ্যাদি প্রণয়ন や げ0