পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰািকম রচনাবলী অন্যান্য ধর্মেও ছিল বা আছে। তবে ইউরোপে এ মত অগ্রাহ্য এবং ইহার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নাই। এজন্য শিক্ষিত বাঙ্গালী এ মত গ্রাহ্য করেন না। বাস্তবিক আত্মার অস্তিত্ব সম্পবন্ধে যেমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নাই, তেমনি জন্মান্তর সম্পবন্ধেও তদুপ কোন প্রমাণ নাই। পক্ষান্তরে যেমন আত্মার অস্তিত্ব অপ্রমাণ করা যায় না, জন্মান্তরও অপ্রমাণ করা যায় না। তা না যাক, যাহার প্রমাণাভাব, তাহা মানিতে কেহ বাধ্য নহে। এই তত্ত্বে বিশ্বাস যে, চিত্তবাত্তি সকলের সমচিত অনশীলনে স্বতঃসিদ্ধ হয়, এমন কথাও আমি বলিতে পারি না। তবে যিনি সবগ নরকাদি মানেন, জলমান্তরবাদীর অপেক্ষা তাঁহার বেশী জোর কিছই নাই। যেমন জন্মান্তরিবাদের আপ্তোপদেশ ভিন্ন অন্য প্রমাণ নাই, সবগ নরকাদিরও তেমনি অন্য প্রমাণ নাই। বিসময়ের বিষয় এই যে, এ দেশে অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি ইউরোপীয়দিগের দেখাদেখি প্রমাণাভাবেও সবগনরকে বিশ্বাসৰান--অর্থাৎ সখ-দঃখ-যক্তি পারলৌকিক অবস্থাবিশেষে বিশ্বাসাবান, কিন্তু জন্মান্তরে কোন মতেই বিশ্বাসাবান নহেন। কথাটা একটা সবিস্তারে সমালোচনা করিবার আমাদের একটি প্রয়োজন আছে। যিনি আত্মার অস্তিত্ব মানেন না, তাঁহার সঙ্গে ত আমাদের কথাই নাই; কেন না, তিনি কাজেই জন্মান্তর মানিবেন না। কিন্তু যিনি আত্মার অস্তিত্ব ও অবিনাশিত মানেন, তাঁহার সম্মখে একটা বড় গরতের প্রশন আপনা হইতেই উপস্থাপিত হয়। জীবাত্মা যদি অবিনশবর হইল, তবে দেহান্তে তাহার গতি কি হয় ? এ বিষয়ে জগতে অনেকগলি মত প্রচলিত আছে। ১। ভূতযোনি প্রাপ্ত হয়। ইহা সচরাচর অসভ্য জাতিদিগের বিশ্বাস। ২। সবগাদি লোকান্তর প্রাপ্ত হয়। শ্ৰীষ্টিয়ান ও মসলমানদিগের এই মত। ৩ । জন্মান্তর প্রাপ্ত হয়। বৌদ্ধ দিগের এই মত। ৪ । পরব্রহ্মে লীন হয় বা নিৰুবাণ প্রাপ্ত হয়। হিন্দধমের শেষোক্ত এই তিনটি মতই প্রচলিত আছে। এই তিনটি মতের সামঞ্জস্য কি প্রকার হইয়াছে, তাহা বঝাইতেছি। হিন্দরা বলেন যে, দেহান্তে জীবাত্মা মক্ত হয় না; আপনার কৃত কম্পমানসারে পনেকবার দেহান্তর প্রাপ্ত হয়, তাহার। আবার জন্মান্তর হয়। যখন জীবাত্মা এমন অবস্থা প্রাপ্ত হয় যে, ঈশ্বরে লীন হইবার যোগ্য হইয়াছে, তখন আর জন্ম হয় না, ঈশ্বরপ্রাপ্তি হয় বা নিৰ্ব্ববাণপ্ৰাপ্তি হয়। ইহাকেই সচরাচর মাক্তি বা মোক্ষ বলে। কিসে জীবাত্মা এই অবস্থাপন্ন হইতে পারে, ইহাই সাংখ্যাদি দর্শনশাস্ত্রের উদ্দেশ্য। হিন্দরা ইহাও বলেন যে, যখন জীবাত্মা মক্ত হইবার অবস্থা প্রাপ্ত হয় নাই। অথচ এমন কোন সরকৃত করিয়াছে যে, সবগাদি উপভোগের যোগ্য, তখন জীবাত্মা কৃত পণ্যের পরিমাণানযায়ী কাল, সবগাদি উপভোগ করে, পরে জলমান্তর প্রাপ্ত হয়। আপাততঃ শানিলে এ সকল কথা পাশ্চাত্ত্য শিক্ষাপ্রাপ্ত অনেকের নিকট আশ্রদ্ধেয় বলিয়া বোধ হইতে পারে। কিন্তু একটা বিচার করিলে আর এক রকম বোধ হইবে। এই জন্মান্তরবাদ হিন্দধমৌ অতিশয় প্রবল। উপনিষদত্ত হিন্দধাম, গীতোক্ত হিন্দধাম, পৌরাণিক হিন্দধৰ্ম্ম বা দাশনিক হিন্দধৰ্ম্ম সকল প্রকার হিন্দধৰ্ম্মম ইহার উপর স্থাপিত। যেমন সত্রে মণি গ্রথিত থাকে, হিন্দধন্মের সকল তত্ত্বগলিই তেমনি এই সত্রে গ্রথিত আছে। অতএব এই তত্ত্বটি আমাদিগকে বড় যত্নপর্বক বঝিতে হইবে। কথাটাও বড় গরতের,-অতি দরহে। আমরা বাল্যকাল হইতে কথাটা শনিয়া আসিতেছি, ইহা আমাদের বাল্য-সংস্কারের মধ্যে, সতরাং আমরা সচরাচর ইহার গৌরব অনভব করি না। কিন্তু বিদেশীয় এবং অন্যধৰ্ম্মমাবলম্বী চিন্তাশীল পশিডতেরা কুসংস্কারবজিত হইয়া ইহার আলোচনাকালে বিস্ময়াবিল্ট হয়েনি! গীতার অনবাদকার টমসন সাহেব এতৎসম্বন্ধে লিখিয়াছেন, 'Undoubtedly it is the most novel and starting idea ever started in any age or country' as its &ICE 'One of the most remarkable developments of ethical spcculation” za eprs VT5 flg. * কথাটা যদি এমনই গরতর, তবে ইহা আর একটি ভাল করিয়া বঝিবার চেন্টা করা যাউক । "Primitive Culture, Vol. I, p. 12. A O R