পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীতা বলা হইয়াছে, জীবাত্মা পরমাত্মার অংশ, ইহা হিন্দীশাস্ত্রের উক্তি। পরমাত্মা বা পরব্রহ্মের অংশ তাঁহা হইতে পার্থক্য লাভ করিল কি প্রকারে ? তাঁহার দেহবন্ধাবস্থা বা কেন ? হিন্দইহার যে উত্তর আছে, তাহা বঝাইতেছি। ঈশ্বরের অশেষ প্রকার শক্তি আছে। একটি নাম মায়া। এই মায়া কি, তাহা স্থানান্তরে বাবাইব । এই মায়ার দ্বারা তিনি আপনার জগতে পরিণত করিয়াছেন। তিনি চৈতন্যময়; তাঁহা ভিন্ন আর চৈতন্য নাই; অতএব জগতে যে চৈতন্য দেখি, ইহা তাঁহারই অংশ; তাঁহার সিসাক্ষাক্রমে এই অংশ মায়ার বশীভূত হইয়া পথিক ও দেহবন্ধ হইয়াছে। যদি সেই পথগভুত চৈতন্য বা জীবাত্মা কোন প্রকারে মায়ার বন্ধন হইতে মক্ত হইতে পারে, তবে আর তাহার পার্থক্য থাকিবে কেন ? পার্থক্য ঘাঁচিয়া যাইবে, জীবাত্মা আবার পরমাত্মায় বিলীন হইবে। এখন জিজ্ঞাস্য হইতে পারে যে, জীবাত্মা এই মায়াকে অতিক্রম করবে কি প্রকারে ? যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা বা নিয়োগক্রমেই বদ্ধ হইয়া থাকে, তবে আবার বিমাক্ত হইবার সাধ্য কি ? ইহার উত্তর এই যে ঈশ্বরের নিয়োগ এরপ নহে যে, জীবাত্মা চিরকালই মায়াবদ্ধ থাকিবে। তিনি যে সকল নিয়ম করিয়াছেন, মায়ার অতিক্রমের উপায়ও তাহার ভিতরে রাখিয়াছেন। সে উপায় কি, তদ্বিষয়ে মতভেদ আছে। কেহ বলেন, জ্ঞানেই সেই মায়াকে অতিক্রম করা যায়; কেহ বলেন -কম্পেমা, কেহ বলেন-ভক্তিতে। এই সকল মতের মধ্যে কোনটি সত্য বা কোনটি অসত্য, তাহার বিচার পশ্চাৎ করা যাইবে। এখন সকলগলিই সত্য, ইহা স্বীকার করিয়া লওয়া যাউক । এখন এইগলিই যদি ঈশ্বরে বিলীন হইবার উপায় হয়, তবে যে ব্যক্তি ইহজীবনে জ্ঞান, কম্পমা বা ভক্তির সমচিত অনন্ঠন করে নাই, সে ঈশ্বরে লয় বা মাক্তি লাভ করিবে না। তবে মে ব্যক্তির আত্মা, মাতুত্যুর পর কোথায় যাইবে ? আত্মা অবিনশ্বর; সতরাং দেহভ্রন্ট আত্মাকে কোথাও না কোথাও যাইতে হইবে। ইহার এক উত্তর এই হইতে পারে যে, দেহভ্রন্ট আত্মা কম্পমানসারে সবগে বা নরকে যাইবে। সবগ বা নরক প্রভৃতি লোকান্তরের অস্তিত্বের প্রমাণাভাব। কিন্তু প্রমাণের কথা এখন থােক। স্বীকার করা যাউক, কৰ্ম্মমািফলানসারে আত্মা সবগে বা নরকে যায়। এখন জিজ্ঞাস্য যে, জীবাত্মা সবগে বা নরকে কিয়াংকালের জনা যায়, না অনন্তকালের জন্য যায় ? যদি বল কিয়াৎকালের জন্য যায়, তবে সেখান হইতে ফিরিয়া আবার কোথায় যাইবে ? জন্মান্তর স্বীকার না করিয়া, এ প্রশেনর উত্তর নাই। হয় বল যে, জীব কমফলের উপযোগী কাল সবগ বা নরক ভোগ করিয়া, পানবার জন্মগ্রহণ করিবে, নয় বল যে অনন্তকাল সে সবগ বা নরক ভোগ কবিবে। খীন্টিয়ানেরা তাই বলেন। তাহারা বলেন যে, ঈশ্বর বিচার করিয়া পাপীকে অনন্ত নরকে এবং পণ্যবানকে অনন্ত সবগে প্রেরণ করেন। এ কথায় বড় গোলমালো পড়িতে হয়। মনষ্যলোকে এমন কেহই নাই যে, কোন সৎ কম্পম কখন করে নাই বা কোন অসৎ কৰ্ম্ম কখন করে নাই। সকলেই কিছ পাপ, কিছু পণ্য করে। এখন জিজ্ঞাস্য যে, যে কিছ পাপ করিয়াছে, কিছ পণ্য করিয়াছে, সে অনন্ত সবগে যাইবে, না। অনন্ত নরকে যাইবে ? যদি সে অনন্ত সবগে যায়, তবে জিজ্ঞাসা করি, তাহার পাপের দণ্ডড হইল না কেন ? যদি বল, অনন্ত নরকে যাইবে, তবে জিজ্ঞাসা করি, তাহার পণ্যের পরিস্কার হইল না কেন ? যদি বল, যাহার পাপের ভাগ বেশী, সে অনন্ত নরকে, যাহার পণ্যের ভাগ বেশী, সে অনন্ত সলগে যাইবে, তাহা হইলেও ঈশ্বরে অবিচার আরোপ করা হইল। কেন না, তাহা হইলে এক পক্ষে পণ্যের কিছই পরিস্কার হইল না, আর এক পক্ষে পাপের কিছই দন্ড হইল না। কেবল ঈশ্বরের প্রতি অবিচার আরোপ করা হয়, এমত নহে। ঘোরতর নিম্ঠারতা আরোপ করাও হয়। যাঁহাকে দয়াময় বলি, তিনি যে এই অলপ কাল পরিমিত মনীষাজীবনে কৃত পাপের জন্য অনন্তকালস্থায়ী দশড বিধান করিবেন, ইহার অপেক্ষা অবিচার ও নিন্ঠরতা আর কি আছে ? ঈদশ নিন্ঠরতা ইহলোকের পামীরগণের মধ্যেও পাওয়া যায় না। যদি বল, যাহার পাপের ভাগ বেশী, পণ্যের ভাগ কম, সে পণ্যােনরোেপ কাল সবগ ভোগ করিয়া অনন্তকাল জন্য নরকে যাইবে, এবং তদ্বিপরীতে বিপরীত ফল হইবে; তাহাতেও ঐ সকল আপত্তির নিরাস হইল না। কেন না, পরিমিত কাল, কোটি কোটি যােগ হইলেও, অনন্ত ό. Ο Ο