পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰঙ্কিম রচনাবলী কথা বলা আবশ্যক। প্রথমতঃ কৃষ্ণের ঈদশ উক্তি বেদের নিন্দা নহে, বৈদিক কৰ্ম্মবাদীদিগের নিন্দা। যাহারা বলে, বেদোক্ত কম্পমাই (যথা, অশ্বমেধাদি)। ধৰ্ম্ম, কেবল তাঁহাই আচরণীয়, তাহাদেরই নিন্দা। কিন্তু বেদে যে কেবল অশ্বমেধাদি যজ্ঞেরাই বিধি আছে, আর কিছ নাই, এমন নহে। উপনিষদে যে অত্যুন্নত ব্ৰহ্মবাদ আছে, গীতা সম্পণেরপে তাহার অনাবাদিনী, তদািক্ত জ্ঞানবাদ অনেক সময়েই গীতায় উদ্ধত, সঙ্কলিত ও সম্প্রসারিত হইয়া নিস্কাম কৰ্ম্মমবাদ ও ভক্তিবাদের সহিত সামঞ্জস্যীভূত হইয়াছে। অতএব কৃষ্ণের এতদাক্তিকে সমস্ত বেদের নিন্দা বিবেচনা করা অনচিত। তবে দ্বিতীয় কথা এই বক্তব্য যে, যাঁহারা বলেন যে, বেদে যাহা আছে, তাহাই ধৰ্ম্মম , তাহা ছাড়া আর কিছ ধৰ্ম্ম নহে, শ্ৰীকৃষ্ণ তাঁহাদের মধ্যে নহেন। তিনি বলেন, (১) বেদে ধৰ্ম্ম আছে, ইহা মানি। (২) কিন্তু বেদে এমন অনেক কথা আছে, যাহা প্রকৃত ধৰ্ম্ম নহে-যথা, এই সকল জন্মকৰ্ম্মফলপ্ৰদা ক্রিয়াবিশেষবহলা পণ্ডিপতা কথা। (৩) তিনি আরও বলেন যে, যেমন এক দিকে বেদে এমন অনেক কথা আছে, যাহা ধৰ্ম্মম নহে, আবার অপর দিকে অনেক তত্ত্ব যাহা প্রকৃত ধৰ্ম্মমতত্ত্ব, অথচ বেদে নাই। ইহার উদাহরণ আমরা গীতাতেই পাইব। কিন্তু গীতা ভিন্ন মহাভারতের অন্য স্থানেও পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরাপ কণী পৰ্ব্বব হইতে দাইটি শ্লোক উদ্ধত করিতেছি। শ্ৰতেধৰ্ম্ম ইতি হ্যেকে বদন্তি বহবো জনাঃ। তত্তে ন প্রত্যািসয়ামি ন চ সৰ্ব্ববং বিধীয়তে৷৷ ৫৬ ৷৷ প্রভাবাথায় ভূতানাং ধৰ্ম্মম প্রবচনং কৃতম৷ ৫৭ ৷* যদি কেহ ইহাকে বেদনিন্দা বলিতে চাহেন, তবে শ্ৰীকৃষ্ণ বেদনিন্দক এবং গীতার এবং মহাভারতের অন্যত্র বেদনিন্দা আছে। বস্তুতঃ ইহা এই পৰ্য্যন্ত বেদানিন্দা যে, এতদ্দ্বাবা বেদের অসম্পপণতা সচিত হয়। তত দর। ইহাকে না হয়, বেদনিন্দাই বলা যাউক। এই বেদনিন্দার ভিতর একটা ঐতিহাসিক তত্ত্ব নিহিত আছে বলিয়াছি, তাহা মৎপ্রণীত ‘ধৰ্ম্মতত্ত্ব” গ্রন্থে বঝাইয়াছি। কিন্তু ঐ গ্রন্থ সম্প্রতি মাত্র প্রচারিত হইয়াছে। এ জন্য পাঠকদিগের সােলভ না হইতে পারে। অতএব প্রয়োজনীয় অংশ নিম্পেন্ন উদ্ধত করিতেছি। “সাধারণ উপাসকের সহিত সচরাচর উপাস্য দেবের সে সম্পবিন্ধ দেখা যায়, বৈদিক ধৰ্ম্মে উপাস্য-উপাসকের সেই সম্প্ৰবন্ধ ছিল। ‘হে ঠাকুর! আমার প্রদত্ত এই সোমরস পান কর। হবি ভোজন কর, আর আমাকে ধন দাও, সম্পদ দাও, পত্র দাও, গোর দাও, শস্য দাও, আমার শত্রকে পরাস্ত কর।” বড় জোর বলিলেন, “আমার পাপ ধবংস কর।” দেবগণকে এইরপ অভিপ্ৰায়ে প্রসন্ন করিবার জন্য বৈদিকেরা যজ্ঞাদি করিতেন। এইরপ কাম্য বস্তুর উদ্দেশ্যে যজ্ঞাদি করাকে কাম্য কম বলে । , কাম্যাদি কম্পমাত্মক যে উপাসনা, তাহার সাধারণ নাম কম্পম । এই কাজ করিলে তাহার এই ফল; অতএব কাজ করিতে হইবে-এইরপ ধৰ্ম্মমাজ্ঞজনের যে পদ্ধতি, তাহারই নাম কৰ্ম্মম। বৈদিক কালের শেষ ভাগে এইরাপ কম্পমাত্মক ধর্মের অতিশয় প্রাদাভােব হইয়াছিল। যাগযজ্ঞের দৌরাত্ম্যে ধৰ্ম্মের প্রকৃত মৰ্ম্মম বিলপ্ত হইয়া গিয়াছিল। এমন অবস্থায় উচ্চ শ্রেণীর প্রতিভাশালী ব্যক্তিগণ দেখিতে পাইলেন যে, এই কম্পমাত্মক ধৰ্ম্ম ব্যথা ধৰ্ম্ম। তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই বঝিয়াছিলেন যে, বৈদিক দেবদেবীর কলপনায় এই জগতের অস্তিত্ব বাবা যায় না; ভিতরে ইহার একটা অনন্ত অজ্ঞেয় কারণ আছে। তাঁহারা সেই কারণের অন্যসন্ধানে তৎপর হইলেন। এই সকল কারণে কম্পেমর উপর অনেকে বীতশ্রদ্ধ হইলেন। তাঁহারা ত্ৰিবিধ বিপ্লব উপস্থিত করিলেন। সেই বিপ্লবের ফলে আসিয়া প্রদেশ অদ্যাপি শাসিত। এক দল চাৰিবাক।--তাঁহারা বলেন, কামকান্ড সকলই মিথ্যা-খাও দাও, নেচে বেড়াও । দ্বিতীয় সম্প্রদায়ের সন্টিকত্তা ও

  • “অনেকে শ্রীতিকে ধৰ্ম্ম প্রমাণ বলিয়া নিন্দেশ কবেন। আমি তাহাতে দোষারোপ করি না। কিন্তু শ্ৰতি সমদায় ধৰ্ম্মতত্ত্ব নিন্দিািলট নাই। এই নিমিত্ত অনমান দ্বারা অনেক স্থলে ধৰ্ম্ম নিদিনটি করিতে হয়।” কালীপ্রসন্ন সিংহের অন্যবাদ-কৰ্ণ পৰবৰ্ত, ৭০ অধ্যায়। সিংহ মহোদয় যে কাপি দেখিয়া

অন্যবাদ করিয়াছেন, তাহাতে এই শ্লোক দটি ৭০ অধ্যায়ে আছে। কিন্তু অন্যত্র ৩৯ অধ্যাযে ইহা পাওয়া যায়। ԳՀԵ