পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰঙ্কিম রচনাবলী অনষ্ঠান-প্ৰথা। কথিত ও বিহিত হইয়াছে, তাহাই কৰ্ম্ম । ভগবান বক্সাইতে চাহেন যে, ইহা প্রকৃত কৰ্ম্ম নহে। বরং যাহারা ইহাতে চিত্তনিবেশ করে, ঈশ্বর।ারাধনায় তাহাদিগের একাগ্রতা হয় না। এ জন্য প্রকৃত কৰ্ম্মযোগীর পক্ষে উহা কম নহে। এই ৪৫শ শ্লোকে সেই কথাই পনিরক্ত হইতেছে। ভগবান বলিতেছেন যে, বেদ সকল, যাহারা সংসারী, অর্থাৎ সংসারের সখি খোঁজে, তাহাদিগের অনসরণীয়। তুমি সেরাপ সাংসারিক সখি খজিও না। ত্ৰৈগণ্যের अउ ऊ श्९3 । কি প্রকারে ত্ৰৈগণ্যের অতীত হইতে পারা যায়, শ্লোকের দ্বিতীয় অদ্ধে তাহা কথিত হইতেছে। ভগবান বলিতেছে—তুমি নিদ্বন্দ্ব হও, নিত্যসত্ত্বস্থ হও, যোগ-ক্ষেম-রহিত হও এবং আত্মবান হও। এখন এই কয়টা কথা বঝিলেই শ্লোক বঝা হয়। ১। নিদ্বন্দ্ব-শীতোষ্ণ সখদঃখাদিকে দ্বন্দ্ব বলে, তাহা পাবে বলা গিয়াছে। যে সে-সকল তুল্য জ্ঞান করে, সেই নিদ্বন্দ্ব। ২। নিত্যসত্ত্বস্থ-নিত্য সত্ত্বগণাশ্রিত। ৩ । যোগ-ক্ষেম-রহিত-যাহা অপ্রাপ্ত, তাহার উপাত্তজনকে যোগ বলে, আর যাহা প্রাপ্ত, তাহার রক্ষণকে ক্ষেম বলে। অর্থাৎ উপাতজন রক্ষা সম্পবন্ধে যে চিন্তা, তদ্রহিত হও । ৪। আত্মবান—অথবা অপ্ৰমত্ত।* যাবানর্থ উদপানে সব্বতঃ সংপ্লতোদকে। তাবান সবেবষ বেদেষী ব্ৰাহ্মণস্য বিজানতঃ ॥ ৪৬ ৷৷ এখানে এই শ্লোকের অন্যবাদ দিলাম না। টীকার ভিতরে অন্যবাদ পাওয়া যাইবে। কেন না, এই শ্লোকের প্রচলিত যে অর্থ, তাহাতে দাই একটা আপত্তি ঘটে; সে সকলের মীমাংসা না করিয়া অন্যবাদ দেওয়া ব্যক্তিসঙ্গত নহে। আমি এই শ্লোকের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা বঝাইব । প্রথম। যে ব্যাখ্যাটি পািকব হইতে প্রচলিত, এবং শঙ্কর ও শ্ৰীধারাদির অন্যমোদিত, তাহাই অগ্রে বাবাইব । দ্বিতীয়। আর একটি নািতন ব্যাখ্যা পাঠকের সমীপে তাঁহার বিচার জন্য উপস্থিত করিব। সঙ্গত বোধ না হয়, পাঠক তাহা পরিত্যাগ করবেন। তৃতীয়। আধনিক ইংরেজি অনাবাদকেরা যেরােপ ব্যাখ্যা করিয়াছেন, তাহাও বাবাইব । সংক্ষেপতঃ সেই তিন প্রকার ব্যাখ্যা এই :- ১ম। সৰ্ববতঃ সংপ্লতোদকে উদপানে যাবানথঃ বিজানতো ব্রাহ্মণস্য সব্বেষ বেদেষ। তাবানথঃ। ইংরেজি অনাবাদকেরা এই অৰ্থ করিয়াছেন। ইহার কোন মানে হয় না। ২য়। সব্বতঃ সংপ্লতোদকে সতি উদপানে যাবানৰ্থ ইত্যাদি পৰিববিৎ। এই ব্যাখ্যা নতেন।

  • আমার ক্ষদ্র বন্ধিতে যোেরােপ মােলসঙ্গত বোধ হইয়াছে, আমি সেইরােপ অৰ্থ করিলাম। কিন্তু যাঁহারা বেদের গৌরব বজায় রাখিয়া এই শ্লোকের অর্থ করিতে চান, তাঁহারা কিরােপ বঝেন, তাহার উদাহরণস্বরূপ বাবা কেদারনাথ দত্ত কৃত এই শ্লোকের ব্যাখ্যা নিম্পেন্ন উদ্ধত করিতেছি। পাঠকের যে অৰ্থ সঙ্গত বোধ হয়, সেই অর্থ গ্রহণ করবেন।

“শাস্ত্ৰসমহের দই প্রকার বিষয়-অর্থাৎ উদ্দিন্ট বিষয় ও নিদিলেট বিষয়। যে বিষয়টি যে শাস্ত্রের চরম উদ্দেশ্য, তাহাই তাহার উদ্দিন্ট বিষয়। যে বিষয়কে নির্দেশ করিয়া উদ্দিন্ট বিষয়কে লক্ষ্য করে, সেই বিষয়ের নাম নিদিলেট বিষয়। অরন্ধতী যে স্থলে উদ্দিন্ট বিষয়, সে স্থলে তাহার নিকটে প্রথমে লক্ষিত যে স্থলে তারা, তাহাই নিন্দিািলট বিষয় হয়। বেদসমােহ নিগণ তত্ত্বকে উদ্দিন্ট বলিয়া লক্ষ্য করে, কিন্তু নিগণ তত্ত্ব সহসা লক্ষিত হয় না বলিয়া প্রথমে কোন স্যগণ তত্ত্বকে নিন্দেশ করিয়া থাকে। সেই জন্যই সত্ত্ব, রজঃ ও তম রােপ ত্ৰিগণময়ী মায়াকেই প্রথম দন্টিক্রমে বেদ সকলের বিষয় বলিয়া বোধ হয়। হে অজািন, তুমি সেই নিন্দিলন্ট বিষয়ে আবদ্ধ না থাকিয়া নিগণিতত্ত্বরপ উদ্দিস্ট তত্ত্ব লাভ করতঃ নিস্ত্রৈগণ্য কর। বেদ শাস্ত্রে কোন স্থলে রজস্তমোগণোত্মক কলম, কোন স্থলে সত্ত্বগণাত্মক জ্ঞান এবং বিশেষ বিশেষ স্থলে নিগণ ভক্তি উপদিষ্ট হইয়াছে। গণময় মানাপমানাদি দ্বন্দ্বভাব হইতে রহিত হইয়া নিত্য সত্ত্ব অর্থাৎ আমার ভক্তগণের সঙ্গ করতঃ কম্পমতিজ্ঞানমাগের অন্যােসন্ধেয় যোগ ও ক্ষেমানসন্ধান পরিত্যাগপক্ষবাক বন্ধিযোগ সহকারে নিসৈন্ত্রগণ্য লাভ কর।” ᏄᏬᏅ