পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা ৩য়। উপাদানে যাবানথঃ সম্ববতঃ সংপ্লতোদকে তাবানথঃ। এবং সৰোবষ বেদেষ ষাবানাথঃ বিজানতো ব্ৰাহ্মণস্য তাবানথঃ । এই অর্থ প্রাচীন এবং প্রচলিত। আগ্নে প্রচলিত ব্যাখ্যা বঝাইব । কিন্তু বাঙ্গালা অন্যবাদ দেওয়া যায় নাই; তদভাবে যাঁহারা সংস্কৃত না জানেন, তাঁহাদের অসবিধা হইতে পারে, এ জন্য প্রচলিত ব্যাখ্যার উদাহরণস্বরাপ প্রথমে প্রাচীন অনাবাদক হিতলাল মিশ্র-কৃত অন্যবাদ নিম্পেন্ন উদ্ধত করিতেছি :- “যাহা হইতে জল পান করা যায়, তাহা উদপান শব্দে বাচ্য, অর্থাৎ পস্করিণী এবং কপাদি। তাহাতে স্থিত অলপ জলে একেবারে সমস্ত প্রয়োজন সাধনের অসম্ভব হেতু সেই সেই সমস্ত কপাদি পরিভ্রমণ করিলে, পথক পথক যে প্রকার স্নান পানাদি প্রয়োজন সম্পন্ন হয়, সে সমদায় প্রয়োজন, সংপ্লতোদকশব্দবাচ্য এক মহাস্থদে একত্র যেমন নিববাহ হইতে পারে, তদ্রপ সমস্ত বেদে কথিত যে কম্পমফলরপ অর্থ, তাহা সমদায়ই ভগবস্তুক্তিযক্তি ব্রহ্মনিষ্ঠ ব্যক্তির তদন্দ্বারাই সম্পন্ন হয়।” শঙ্কর ও শ্ৰীধর উভয়েই এইরপ অৰ্থ করিয়াছেন, কাজেই আর সকলে সেই পথের পথিক হইয়াছেন। শ্ৰীধর-কৃত ব্যাখ্যা আমরা উদ্ধত করিতেছি। “উদকং পীয়তে যস্মিংগুস্তদদপানং ব্যাপীক পতড়াগাদি। তস্মিন সবলেপাদকে একত্র কৃৎস্নাথ স্যাসম্ভবত্তাত্র তত্র পরিভ্রমণেন বিভাগশো যাবান স্নানপানাদিরথঃ প্রয়োজনং ভবতি তাবান সৰ্ব্বেবাহপ্যথাঃ সৰ্ব্ববতঃ সংপ্লতোদকে মহাহিদে একত্রেব যথা ভবতি এবং যাবান সব্বেষ বেদেষ। তত্তৎকমফলর পোহ থািস্তাবান সৰ্ব্বেবাহপি বিজানতো ব্যবসায়াত্মিকাবিদ্ধিযক্তিস্য ব্ৰাহ্মণস্য ব্ৰহ্মানিন্ঠস্য ভবত্যেব।” ইহার স্থলে তাৎপৰ্য্য এই যে, যেমন ক্ষদ্র ক্ষদ্র জলাশয় অনেকগািলন পরিভ্রমণ করিলে যাবৎ পরিমিত প্রয়োজন সম্পন্ন হয়, এক মহাহিদেই তাবৎ প্রয়োজন সম্পন্ন হয়। সেইরাপ সমস্ত বেদে যাবৎ প্রয়োজন সিদ্ধ হয়, ব্যবসায়াত্মিক-বদ্ধি-যক্তি ব্ৰহ্মনিষ্ঠায় তাবৎ প্রয়োজন সিদ্ধ হয় |* আমরা ক্ষদ্রবদ্ধি, এই ব্যাখ্যা বঝিতে গিয়া যে গোলযোগে পড়িয়াছি, প্রাচীন মহামহোপাধ্যায়দিগের পাদপদ্ম বন্দনাপাকবািক আমি তাহা নিবেদন করিতেছি। যে আপনার সন্দেহ ব্যক্ত করিতে সাহস না করে, তাহার কোন জ্ঞানই জন্মে নাই। এবং জন্মিবারও जडावना७ नारे। “যাবৎ” “তাবৎ” শব্দ পরিমাণবাচক। কিন্তু কেবল যাবৎ বলিলে কোন পরিমাণ বাবা যায় না। একটা যাবৎ থাকিলেই তার একটা তাবৎ আছেই। একটা তাবৎ থাকিলেই তার একটা যাবৎ আছেই। এমন অনেক সময়ে ঘটে যে, কেবল “যাবৎ” শব্দটা সম্পন্ট, তাহার পরবত্তীর্ণ “তাবৎ”কে বঝিয়া লইতে হয়; যথা—“আমি যাবৎ না। আসি, তুমি এখানে থাকিও।” ইহার প্রকৃত অর্থ, “আমি যাবৎ না। আসি, (তাবৎ) তুমি এখানে থাকিও।” অতএব সম্পন্টই হউক, আর উহ্যই হউক, যাবৎ থাকিলেই তাবৎ থাকিবে। তদুপ। তাবৎ থাকিলেই যাবৎ থাকিবে। এই যাবৎ তাবৎ শব্দের পরস্পরের সম্পবিন্ধ এই যে বস্তুর সঙ্গে যাবৎ থাকে, আর যাহার সঙ্গে তাবৎ থাকে, উভয়ের পরিমাণ এক বা সমান বলিয়া নিন্দিলন্ট হয়। অতএব যাবৎ তাবৎ থাকিলে দাইটি তুল্য বা তুলনার বস্তু আছে, ইহাই বঝিতে হইবে। “আমি যাবৎ না। আসি, (তাবৎ) তুমি এখানে থাকিও।”-এই বাক্যের প্রকৃত তাৎপৰ্য্য এই যে, “আমার পনেরাগমন পৰ্য্যন্ত যে কাল, আর তোমার এখানে অবস্থিতিকাল, উভয়ে সমান হইবে।” এখানে এই দাইটি সময় তুল্য বা তুলনীয়।

  • শঙ্করাচায্য-ব্যবহৃত ভাষা কিঞ্চিত ভিন্ন প্রকার। শ্লোকের দ্বিতীয়ান্ধের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “সব্বেষ বেদোষ বেদোক্তেষ কৰ্ম্মস যোহন্থো যৎ কৰ্ম্মফলং সোেহৰ্থে ব্ৰাহ্মণস্য সন্ন্যাসিনঃ পরমার্থতত্ত্বং বিজানতো যোহথঃ যৎ বিজ্ঞানফলং সদ্ব্বতঃ সংপ্লতোদকস্থানীয়ং তস্মিংহস্তাবানেব সংপদ্যতে ইত্যাদি।” ইহার ভিতর অন্য যে কল-কৌশল থাকে, তাহা পশ্চাৎ বাবাইব । সম্প্রতি “সন্বেষ, বেদোষ” ইহার য্যেরপ অৰ্থ ভগবান শঙ্করাচাৰ্য্য করিয়াছেন, তৎপ্রতি পাঠককে মনোযোগ করিতে বলি। “সন্বেষ বেদোষ” অৰ্থ ‘বেদোক্তেষ কলামসি’ ষে কারণে আনন্দগিরি বলিয়াছেন, “বেদশব্দেনাত্রে কৰ্ম্মকা গহাতে,” সেই কারণে ইনিও বলিয়াছেন, “সন্বেষ বেদোষ” অর্থে “বেদোক্তেষ কৰ্ম্মস’।

a 9S